সরকারের সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘সরকার একলা চলো নীতিতে চলছে। এই একলা চলো নীতি পুরোপুরিভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। ৭৭ হাজার কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ দেওয়া হবে। কোনও ইনসেনটিভ ছাড়া। এটা একটা কৌশল। যে কৌশলের জন্য খুনোখুনিও হচ্ছে। এক ব্যাংকের ডিরেক্টর আরেক ব্যাংকের ডিরেক্টরকে ধরে নিয়ে আসছে বাসায়, তাকে বন্দুক ধরছে। তারা আবার এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে দেশ থেকে চলেও যাচ্ছে। হোয়ার ইজ গর্ভমেন্ট? সরকার কোথায়? আজকে পরিস্থিতি এতো ভয়াবহ পরিণতির দিকে যাচ্ছে।’
সোমবার (১ জুন) গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মলনে তিনি এসব কথা বলেন।
এ সময় মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা কিছু বললেই সরকার বলে, উসকানি দেওয়ার চেষ্টা করছি, সমালোচনা করছি। একজন তো প্রায়ই বলেন যে, বিষোধগার করবেন না। বিষোধগার করে আপনারা যে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে আছেন সেটা বলছি না। বলছি যে, আপনারা ব্যর্থ হয়েছেন। কিন্তু ওই যে, কানে দিয়েছি তুলো। যা খুশি বলেন, আমাদের কিছু যায় আসে না। আমরা তো আছি।’
করোনাভাইরাস পরিস্থিতিকে সামাল দিতে ব্যর্থ
করোনা মহামারীর ভয়াবহতা বিবেচনা না এনে সবকিছু খুলে দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ট্রেনগুলোতে গাদাগাদি করে মানুষ ঢাকায় আসছে। এর মধ্যে আপনারা দেখেছেন যে, বাসে উঠে জায়গা পাওয়ার জন্য রীতিমতো মারামারি হচ্ছে। বাংলাদেশে এভাবে গণ-পরিবহনকে নিয়ন্ত্রণ করবেন? যেখানে আপনি অফিস খুলে দিয়েছেন, অফিস খুললে তো লোকজন তো আসবেই। লঞ্চেও একই অবস্থা হয়েছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বার বার করে বিশেষজ্ঞরা এবং সরকার নিয়োজিত টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটি বলছেন যে, ‘সবকিছু খুলে দেওয়া আত্মঘাতী হবে। ভয়ংকর অবস্থা তৈরি হবে। তারা সেই কথা শোনেননি। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক এম আবদুল্লাহ পরিষ্কার বলেছেন যে, “এটা ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি করবে, সংক্রামণ আরও ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পাবে।” এটা পরিষ্কার যে সরকার ব্যর্থ হয়েছে করোনাভাইরাসের উদ্ভূত পরিস্থিতিকে সামাল দিতে।’
পাশের দেশের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি সরকার আরও সময় নিতে পারতো। ভারতে দেখেন, তারা সব রাজ্যের চিফ মিনিস্টার, প্রিন্সিপাল সেক্রেটারিদের সঙ্গে কথা বলেছে, কথা বলে আরও একমাস লকডাউন বাড়িয়েছে। যে কথাটা বার বার বলেছি, দায়িত্বশীলতা নেই বলেই সরকার এভাবে তুঘলগি কারবার করছে। যেটা জনগণকে পুরোপুরিভাবে মহাবিপদের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।’
মালিকদের স্বার্থেই ভাড়া বৃদ্ধি
বাসভাড়া ৬০ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘বাস মালিকদের স্বার্থেই এটা করা হয়েছে। এটা অমানবিক। কম আয়ের মানুষই বাসে ওঠে। কার স্বার্থে বাস ভাড়া বাড়িয়েছে সরকার? মালিকদের আবার অনুদান দিচ্ছে। পুরো বিষয়টা হয়েছে লুটপাটের জন্য।’
কৃষকদের ফসলের ন্যায্য মূল্যে দেওয়ার উদ্যোগ নেই
কৃষকদের করুণ অবস্থা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘কৃষকদের ফসলের ন্যায্য মূল্য পাওয়ার ব্যাপারে সরকারের কোনও উদ্যোগ নেই। ধান কাটার নামে আওয়ামী লীগ নেতারা কৃষকের পাকা ধান নষ্ট করেছেন। কোথাও কাঁচা ধান কেটেছেন। বিএনপি কৃষকের ধান কাটতে সহায়তা করেছে।’
তিনি বলেন, ‘দেশে প্রায় ২ কোটি মেট্রিক টন বোরো ধান উৎপাদন হবে। সরকার এই ধান সংগ্রহ করবে ৮ লাখ টন ও চাল ১৪ লাখ টন। যা উৎপাদনের মাত্র ৯ শতাংশ। আমার এর পরিমাণ ২০ শতাংশ করার দাবি জানাচ্ছি।’
সরকারের দুর্নীতি ও অদূরদর্শিতার কারণে বাংলাদেশের কৃষি আজ ধ্বংসের মুখে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সরকার সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান-চাল কম কেনে। তারা বেশি কিনছে চালকল মালিকদের থেকে। এতে মধ্যস্বত্বভোগীরা লাভবান হচ্ছে। তাদের দলীয় ব্যবসায়ী চালকল মালিকরা মুনাফা করছে।’
কৃষির বিভিন্ন খাতে ক্ষতি প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আগামী এক বছরের জন্য পোল্ট্রি, ডেইরিসহ কৃষি সংশ্লিষ্ট খাতের সব ঋণ মওকুফ এবং কৃষককে তার উৎপাদিত পণ্যের বিপরীতে আর্থিক সহায়তা প্রদান করতে হবে।’
কৃষকদের জন্য কৃষক দলের কর্মসূচি তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সব জেলায় কৃষকদল কৃষকদের কাছ থেকে ধান-চাল কেনার জন্য জেলা প্রশাসক বরাবর স্বারকলিপি দেবে। যেসব কৃষক ধান বিক্রি করতে পারছেন না তাদের ধান বিক্রি করতে সহায়তা করা হবে। করোনার মধ্যে ত্রাণ সহায়তা অব্যাহত থাকবে।’
এ সময় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া বিশিষ্ট ব্যক্তি ও বিভিন্ন পেশাজীবীর প্রতি শ্রদ্ধা জানান মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘প্রমাণিত হয়ে গেছে যে, করোনাভাইরাস শনাক্তের গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কিট কার্যকর। এখনও ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর কিট অনুমোদন পায়নি। পত্র-পত্রিকায় আমরা দেখেছি এই কিট নিয়েও বিভিন্ন রকমের দুর্নীতি চলছে, ব্যবসা চলছে। মানুষের দুর্দিনে যারা মানুষের স্বাস্থ্যকে, জীবনকে পুঁজি করে ব্যবসা করার, বাণিজ্য করার দেয় সেই সরকারকে কি আমরা দুর্নীতিমুক্ত বলতে পারবো? পারবো না।’
সরকার ভুল-ত্রুটিগুলো শুধরে নিয়ে জনগণের জন্য কাজ করবে বলে আশা প্রকাশ করেন মির্জা ফখরুল।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন– দলের ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, বিএনপির তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক রিয়াজউদ্দিন নসু, বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান ও শামসুদ্দিন দিদার।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন