মরণঘাতি করোনায় দেশের প্রাথমিক অবস্থায় দেশের রাজনীতি অনেকটাই পাল্টে গিয়েছিলো। বিএনপি সরকারকে সহযোগীতায় সব সময় প্রস্তুত ছিলো। দেশের অবস্থা বেগতিক দেখে আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক জাতীয ঐক্যর ভিত্তিতে দেশের এই সংকট কাটাতে বার বার আহবান জানিয়েছেন। কিন্তু সেই উদারমনা রাজনৈতিক সংস্কৃতি থেকে আবার নিজেদের জায়গায় ফিরে এসেছে। রাজনীতিবিদদের একে অপরের ওপর কাদা ছোড়াছুড়ি হলো দেশের রাজনীতির সংস্কৃতি। কিন্তু উদ্বেগের বিষয় হলো করোনা নিয়ে সৃষ্ট এ সংকটের মধ্যেও রাজনৈতিক দলগুলো এক অপরকে দোষারোপ করার সংস্কৃতি অব্যাহত রেখেছে। এদিকে, করোনা নিয়ে সৃষ্ট এ দূর্যোগের সময় কর্মহীন ও আসহায় মানুষের পাশের দাঁড়াতে দেখা গেছে দেশের অন্যতম দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির নেতাকর্মীদের। তবে দুই-একটি রাজনৈতিক দল ছাড়া জনগনের পাশে নেই দেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের নেতারা । অথচ এসব নেতাদেরকেই কোটি কোটি টাকা খরচ করে নির্বাচন করতে দেখা যায় । অপরদিকে মাঠ পর্যায়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলা-মামলা জেল,জুলুম অব্যাহত রয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবীর রিজভী বিভিন্ন সময়ে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এই করোনার মধ্যেও তাদের নেতাকর্মীরা কিভাবে ,কতটা হয়রানীর শিকার হচ্ছেন তার চিত্র তুলে ধরেছেন।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রাজনৈতিক নেতা বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ৩শ’ প্রার্থী এবং বিএনপির ৩শ’ প্রার্থী শত শত কোটি টাকায় খরচ করে ভোট করেছেন। এরমধ্যে দল দুইটির কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতাকে দেখা গেছে তারা নিয়মিতই ত্রান বিতরন করছেন।
তিনি বলেন, দেশের এ সংকটের মূহুর্তে যদি বাকী রাজনৈতিক নেতারাও এগিয়ে আসেন তাহলে দেশের আসহায় মানুষের মাঝে খাদ্য সংকট হবে না।
করোনা মোকাবিলায় সকলকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে ওই রাজনৈতিক নেতা বলেন, করোনার বিস্তার রোধে সকলকে স্বাথ্যবিধি মেনে চলতে হবে । একে অপরের পাশে দাড়াতে হবে। তাহলেই আমরা করোনা যুদ্ধে জয়লাভ করতে পারবো।
এদিকে করোনা নিয়ে ভয়াবহ দুর্যোগের সময়ও দেশের রাজনৈতিক দলগুলো করোনা নিয়ে রাজনীতি করছে। করোনা নিয়ে এক দল আরেক দলের প্রতি দোষারোপ করছে।
যেমন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ বলছে, বিএনপি করোনা পরিস্থিতি নিয়ে নানা ধরনের বিদ্বেষমূলক-দায়িত্বহীন কথাবার্তা বলছে, তারা করোনা নিয়ে রাজনীতি করছে। অন্যদিকে বিএনপি বলছে, করোনায় আওয়ামী লীগ সরকার সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে।
সম্প্রতি করোনা পরিস্থিতিতে আর্থিক সংকট মোকাবিলায় অবিলম্বে প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদদের সমন্বেয়ে একটি টাস্কফোর্স গঠন করার প্রস্তাব দিয়েছে বিএনপি। এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি জাতীয় টাস্কফোর্স গঠনের নামে জনমনে বিভ্রান্তির ভাইরাস ছড়াচ্ছে।
তিনি বলেন, করোনাভাইরাস মোকাবিলায় বিশ্বের কোন দেশে এ ধরনের টাস্কফোর্স গঠনের নজির নেই। জাতীয় টাস্কফোর্স বা জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার নামে বিএনপি আহেতুক বিভ্রান্তির ভাইরাস ছড়াচ্ছে। করোনাভাইরাস মোকাবিলায় কেউ ভালো পরামর্শ দিলে সরকার তা সানন্দে গ্রহণ করবে।
কাদের বলেন, আমরা এই দুর্যোগের মধ্যে রাজনৈতিক কাঁদা ছোড়াছুড়িতে লিপ্ত হতে চাই না। তারপরেও বিএনপি নেতারা ঘরবন্দী খেটে খাওয়া মানুষের পাশে না দাঁড়িয়ে একের পর এক মিথ্যাচার, বিভ্রান্তিমূলক মন্তব্য করে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির অপপ্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ সরকারি দলের নেতাদের সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি পরিহারের আহ্বান জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘অনুসরণ তো আমাদের করছেন। তাই গালিগালাজ বাদ দিয়ে আসল জায়গায় আসুন।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বিএনপি ৮৭ হাজার কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠনের প্রস্তাব ঘোষণা করলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খুবই কটু ভাষায় আমাকে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করেন এবং প্যাকেজটিকে “কল্পনাবিলাস” বলে প্রত্যাখ্যান করেন। অথচ পরদিনই প্রধানমন্ত্রী ৭৭ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা দেন। এতে প্রমাণিত হয়, বিএনপির প্রস্তাবটি ছিল বাস্তবভিত্তিক।’
ফখরোল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিএনপি রাজধানীসহ সারাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে কর্মহীন মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে জরুরী খাদ্য সহযোগিতা নিয়ে। ইতিমধ্যে ত্রাণ যে বিতরণ করা হয়েছে তা সারাদেশে ১২ লাখে পৌঁছেছে।
এদিকে করোনাভাইরাস বিস্তার রোধে কাজের চেয়ে বেশি কথা বলেছেন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা। যেমন আওয়ামী লীগ বলেছে, বিএনপি কিছুদিন পর পর জাতীয় দুর্যোগ টাস্ক ফোর্স গঠনের কথা বলে, তারপর জাতীয় সরকার গঠনের কথা বলে, এটা তো একটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বক্তব্য। এটা আজকের সংকটের, করোনা প্রতিরোধের দায়িত্ব থেকে একবারেই বিচ্যুত।
অন্যদিকে বিএনপি বলছে, আওয়ামী লীগ সরকারের জবাবদিহিতা না থাকায় লকডাউন তুলে দিয়ে দেশকে ভয়ংকর পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে। প্রতি ক্ষেত্রে তাদের অদূরদর্শিতা, সমন্বয়হীনতা এবং চরম উদাসীনতার প্রমাণ। এর পরিণতির জন্য এ সরকারকে এককভাবেই দায়ী থাকতে হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, ”সরকার কোথায়? সরকার এখন রাস্তাতেও নেই। অর্থাৎ গোড়ায়-আগায়, মনে-গোপনে, কার্যালয়ে নেই। সরকার এক জায়গায় আছে, শুধু টেলিভিশনে। ”
ওবায়দুল কাদের বলেন, সরকার কি করেছে বা না করছে, তা বিএনপিকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখোনোর প্রয়োজন নেই। ফোর্বস, ইকোনোমিস্টসহ প্রেস্টিজিয়াস বিশ্ব সাময়িকীগুলোতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বের এবং তার সরকারের কর্মকাণ্ডের ভূয়সী প্রশংসা করা হচ্ছে। শেখ হাসিনা প্রচারে বিশ্বাসী নন, তিনি কাজে বিশ্বাসী। আর বিএনপির রাজনীতি এখন টেলিভিশননির্ভর।
সরকার অনেক টিভি চ্যানেলের অনুমতি দিয়েছে বলেই বিএনপি অস্তিত্ব প্রকাশের সুবর্ণ সুযোগ পেয়েছে। টেলিভিশন না থাকলে বিএনপি একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে আরো গুরুত্বহীন হয়ে পড়তো।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন