মতিউর রহমান আকন্দ
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাবেক নায়েবে আমীর ও ৫ বারের নির্বাচিত সাবেক জাতীয় সংসদ সদস্য বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন, সমাজসেবক, প্রবীণ জননেতা মাওলানা মুহাম্মাদ আবদুস সোবহান ১৪ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কারা কতৃপক্ষের তত্বাবধানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তিকাল করেন(ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
কারা কর্তৃপক্ষের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে মাওলানা আবদুস সোবহানের লাশ গ্রহণের পর পরিবারের সদস্যগণ পাবনার উদ্দেশে লাশ নিয়ে যাত্রা শুরু করেন। দীর্ঘ ৮ বছর ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় কারাগারে বন্দী থাকার পর মহান প্রভুর আদালত থেকে মুক্তির নির্দেশ প্রাপ্ত হয়ে গভীর রাতে তিনি যমুনা পারি দিয়ে ছুটে চলেছেন তার সেই বাড়ীর আংগিনায় যে বাড়ী থেকে তিনি দ্বীনের আহবান পৌছিয়েছেন নিজ এলাকার মানুষের নিকট এবং দেশবাসীর কাছে।রাত ৩টায় মাওলানা আবদুস সোবহানের লাশ নিয়ে তার পরিবারের সদস্যগণ নিজ বাড়িতে পৌঁছেন। সকাল হতে না হতেই শিশু কিশোর, তরুন, আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা মাওলানা আবদুস সোবহানের লাশ এক নজর দেখার জন্য ছুটে আসে। লাশকে ঘিরে এক বেদনাবিধুর পরিবেশের তৈরী হয়। চোখের পানিতে বুক ভিজাতে থাকেন অশিতিপর বৃদ্ধ-বৃদ্ধাগন।
সকাল সাড়ে ১১টার দিকে লাশ নিয়ে যাওয়া হয় তার প্রতিষ্ঠিত দারুল আমান ট্রাস্ট ময়দানে। হাজার হাজার মানুষ পায়ে হেঁটে দারুল আমান ট্রাস্টে লাশের সাথে যায়। সেখানে পূর্ব থেকেই অপেক্ষমান হাজার হাজার মানুষ লাশ পৌছামাত্র লাশকে ঘিরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। চতুর্দিক থেকে বাঁধভাঙ্গা জোয়ারের মত মানুষের আগমন ঘটতে থাকে দারুল আমান ট্রাস্ট ময়দানে।কানায় কানায় ভরে যায় বিশাল মাঠ।জানাজা পরিণত হয় জনসমুদ্রে। জানাজা শুরু হয় দুপুর আড়াইটায়।
লাখো মানুষের উপস্থিতিতে সালাতে জানাজায় ইমামতি করেন মাওলানা মুহাম্মাদ আবদুস সোবহানের ছোট ছেলে হাফিজ মুজাহিদুল ইসলাম।
জানাজা পূর্ব সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, মাওলানা মুহাম্মাদ আবদুস সোবহান শুধু পাবনাবাসীর নয়, সমগ্র বাংলাদেশের নেতা ছিলেন। আপনারা তাকে সবচাইতে ভালভাবে জানেন ও চিনেন। তার বিরুদ্ধে ট্রাইবুনালে অভিযোগ দায়ের করা হয়। মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়ায়ে ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় মাওলানা মুহাম্মাদ আবদুস সোবহানকে মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত করা হয়। তিনি এই রায়ের বিরুদ্ধে মহামান্য সুপ্রীম কোর্টে আপীল করেন। তার আপীল নিষ্পত্তির অপেক্ষায় আছে। এ অবস্থায় মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের ডাকে সাড়া দিয়ে তিনি চলে গেলেন। আজ আমি পাবনার সর্বস্তরের জনতার সামনে তার লাশ দাফনের পূর্বে জিজ্ঞাসা করতে চাই, তিনি কী দোষী নাকি নির্দোষ?
আমীরে জামায়াতের এ প্রশ্নে লাখো জনতা সমস্বরে জবাব দেন, তিনি নির্দোষ। এ সময় এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। অনেকেই হু-হু করে কেঁদে উঠেন। আমীরে জামায়াত তার বক্তব্যে বলেন, হে আরশের মালিক! তুমি জনতার এ রায় কবুল করে নাও।
আমীরে জামায়াত বলেন, মাওলানা আবদুস সোবহান আমাদের নেতা,শিক্ষক ও মহান বন্ধু । তিনি আজীবন হকের জন্য লড়াই করেছেন। তিনি কোনো দিন অন্যায় অসত্যের কাছে মাথা নত করেননি। তার লাশ সামনে রেখে আমরা আল্লাহকে সাক্ষী রেখে শপথ করছি আমরা শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত কোনো দিন বাতিলের সাথে আপোষ করব না। আমীরে জামায়াতের এ ঘোষণায় লাখো জনতা সমস্বরে চীৎকার করে ওঠেন। এ সময় দারুল আমান ট্রাস্ট ময়দান জনতার আবেগ-অনুভূতিতে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে।
সালাতে জানাজায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এবং লাখো মুসুল্লী অংশগ্রহণ করেন।
জানাজা শেষে আরিফপুর কবরস্থানের উদ্দেশ্যে তার লাশ নিয়ে যাওয়া হয় দাফনের উদ্দেশ্যে। এ পথে তিনি বহুবার যাতায়াত করেছেন জনতার বেষ্টনীর মধ্যে। আজ তিনি তার প্রিয় পাবনাবাসীকে কাঁদিয়ে তার সহকর্মীদের কাঁধে ভর করে ছুটে চলেছেন অন্তিম বিশ্রামস্হলের দিকে।পেছনে ছুটছে ক্রন্দনরত লাখো মুসুল্লী।সে দৃশ্য বড় মর্মান্তিক ।বড় হৃদয় বিদারক।অন্তরবিগলিত ভালোবাসা,আবেগ আর অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকে পাবনার আরিফপুর কবর স্হানে শেষ বিদায় জানান লাখো জনতা ।
মহান রবের দরবারে ফরিয়াদ জানাই হে আমাদের প্রতিপালক তুমি মাওলানা আব্দুস সোবহানের কবরকে জান্নাতের টুকরা বানিয়ে দাও।তাকে শাহাদাতের মর্যাদা দান করো।আমীন।আমীন।।
পাঠক মন্তব্য
মাওলানা আব্দুস সোবহান নির্দোশ। আল্লাহ তাকে শহীদ হিসেবে কবুল করুন। ছবিটা কিন্তু মাওলানার না। সঠিক ছবি লাগান ভাই ।
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন