এক যুগেরও বেশি সময় ধরে ছাত্রলীগের রাজনীতি নিয়ে নিজের তিক্ত অভিজ্ঞতা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তুলে ধরেছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সদ্য অব্যাহতিপ্রাপ্ত সহ-সভাপতি আবু সাঈদ আকন্দ।
তিনি এর আগে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কার্যনির্বাহী সদস্য ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি শাবির পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগের ২০০৬-০৭ সেশনের শিক্ষার্থী ছিলেন।
শুক্রবার রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছাত্ররাজনীতির উত্থান-পতন ও তার বহিষ্কারাদেশ নিয়ে তিক্ত অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন। স্ট্যাটাসে অন্যায়ভাবে তাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে বলে দাবি করেন।
শাখা ছাত্রলীগের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দায়িত্ব পালনকালে বিভিন্ন অপরাজনীতির, আর গ্রুপিং মারপ্যাঁচের মুখোমুখি হয়েছেন বলে তিনি স্ট্যাটাসে উল্লেখ করেন।
আবু সাঈদ আকন্দ তার স্ট্যাটাসে লেখেন, '২০০৬-০৭ থেকে ২০১৯-২০ পর্যন্ত আমার ক্যাম্পাস (শাবি) থেকে আমি একটি মাত্র কমিটির নেতা হয়েছি, আর কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ পেয়েছে পর্যায়ক্রমে ৪-৫টি।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালে এক বছরের জন্য শাবি ছাত্রলীগের কমিটি হলেও তা মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে বর্তমানে সাত বছরে পদার্পণ করেছে।
তিনি উল্লেখ করেন, ‘সোহাগ-নাজমুল’ কমিটি কর্তৃক ২০১৩ সালের ৮ মে শাবি ছাত্রলীগের ৭ সদস্যের যে আংশিক কমিটি হয়েছিল, সময়ে সময়ে সম্মেলনের উদ্যোগ নেয়া হলেও নতুন নেতৃত্বে আর আসেনি। শাবিপ্রবির চিত্রের সঙ্গে বাংলাদেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়, জেলা, মহানগরের চিত্র হুবহু মিলে যাবে যারা যুগের পর যুগ নেতৃত্বহীন। তাই বলা যায়, ছাত্রলীগের অনেকেই চরম পর্যায়ের বৈষম্যের শিকার।
বিভিন্ন সময়ে প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন দাবি করে তিনি বলেন, '২০১৭ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সংগঠন থেকে অব্যাহতিপ্রাপ্ত হলে যোগ্যতা, অবস্থান, অবদান এবং প্রথম সহ-সভাপতি হয়েও আমি ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পাইনি। কারণ আমার অযোগ্যতা ছিল আমার বাসা সিলেটে না।
‘২০১৮ সালের ২০ মার্চ রাতে বিশ্ববিদ্যালয় গেটে একটি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ঘটনার আগে থেকেই আমি ঢাকায় ছিলাম। ঘটনার পরদিন ২১ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ছিলাম। সেখান থেকে খবর পাই ওই ঘটনার জন্য আমিসহ ১২ জনকে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। প্রেসে লেখা হয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটির এক জরুরি সিদ্ধান্ত মোতাবেক এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। কিন্তু প্রেস দেয়ার সময় তৎকালীন সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ছিলেন চট্টগ্রামে।’
তিনি বলেন, ২০১৮ সালের ১০ মে ছাত্রলীগের ‘সোহাগ-জাকির’ কমিটির বিদায়ী সম্মেলনের পূর্বে আমাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করলে পরবর্তী সময়ে ‘শোভন-রাব্বানী’ কমিটি যাচাই-বাছাই করে তাকে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি হিসেবে মনোনীত করেন।
এরপর কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কমিটিতে আসে বিতর্ক ইস্যু। বিতর্কিত ঘোষিত ১৭ জনের তালিকাতে আমার নাম ছিল না। কিন্তু ‘শোভন রাব্বানী’ ভাইদের বিদায়ের পর ২-১টা অনলাইনে আমার নামে বহিষ্কৃত অভিযোগ দিয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে নিউজ করানো হয়। কোনো রকমের তদন্ত না করে শুধু কয়েকটি নিউজকে প্রমাণ ধরে ‘জয়-লেখক’ কমিটি আমাকে অব্যাহতি প্রদান করে।
ছাত্রলীগের নির্বাহী প্রধানদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে সাঈদ বলেন, 'যাচাই-বাছাই না করে ত্যাগী ছাত্রলীগ কর্মীদের এভাবে বহিষ্কার করার যে সংস্কৃতি চালু হয়েছে তা সংগঠনকে শক্তিশালী না করে দুর্বল করে দিচ্ছে। বরং তা সংগঠনের মেরুদণ্ড ভেঙ্গে দিচ্ছে।' এ সময় তিনি কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে তার বহিষ্কারের বিষয়টি ভেবে দেখার জন্য আহ্বান জানান।
শেষে তিনি তার পারিবারিক অবস্থান তুলে ধরে বলেন, আমার বাবা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি আওয়ামী লীগের ১৯৯১ সাল থেকে ২০০৮ পর্যন্ত দুইবার সাধারণ সম্পাদক এবং দুইবার সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন