চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনকে ঘিরে সরগরম হয়ে উঠেছে বন্দরনগরীর রাজনীতি। তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে ১৬ ফেব্রুয়ারি। এদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী নিয়ে চলছে জমজমাট আলোচনা, মনোনয়ন ফরম বিক্রিও শুরু হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনেছেন মোট ১৪ জন। কাউন্সিলর পদে ফরম কিনেছেন ৩৮৮ জন। হেভিওয়েট প্রার্থীদের মধ্যে বর্তমান মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন, সাবেক মেয়র এম মনজুর আলম, নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নুরুল ইসলাম বিএসসি, খোরশেদ আলম সুজন, আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম চৌধুরী ও কোষাধ্যক্ষ আবদুচ ছালাম এরমধ্যেই মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন।
জানা যায়, এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে কৌতূহলের কেন্দ্রবিন্দুতে আছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। তবে মেয়র নির্বাচনে নিজের অনাগ্রহের কথা ইতোমধ্যেই জানিয়েছেন নওফেল। অন্যদিকে সাবেক মেয়র মনজুর আলমকে নিয়েও চলছে আলোচনা। আলোচিত এই রাজনীতিক ডাক পেলে ঢাকায় যাওয়ার জন্য প্রস্তুত আছেন বলে জানিয়েছেন গণমাধ্যমকে।
নওফেলের প্রার্থিতাকে ঘিরে কৌতূহল
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় হাইকমান্ড ও নগর নেতৃত্বের একটি বড় অংশ চাইছে মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের প্রার্থিতা। সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর ছেলে ও বর্তমান শিক্ষা উপমন্ত্রী নওফেল অবশ্য এরমধ্যেই স্থানীয় সরকার নির্বাচনে নিজের অনাগ্রহের কথা জানিয়েছেন সংবাদমাধ্যমকে। আবার নেত্রী চাইলে নির্বাচন করবেন, একইসঙ্গে চসিক মেয়র পদে প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে চমক থাকতে পারে বলেও জানান তিনি।
মূলত সদ্যসমাপ্ত ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী পরিবর্তনের পর থেকেই নওফেলকে নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়। ঢাকা দক্ষিণে মেয়র সাঈদ খোকনের জায়গায় এবার ঢাকা-১০ আসনের সদ্যপ্রাক্তন সংসদ সদস্য শেখ ফজলে নূর তাপসকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়। নির্বাচনে ফজলে নূর তাপস বড় ব্যবধানে জয়ীও হন। এরপর থেকেই নগর আওয়ামী লীগে নওফেলের অনুসারীদের মধ্যে তাকে মেয়র প্রার্থী হিসেবে দেখতে জোর দাবি ওঠে। কেন্দ্রীয় পর্যায়েও বিষয়টি বেশ গুরুত্ব পায়।
নওফেল সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে আলাপচারিতায় মেয়র নির্বাচনে নিজের অনাগ্রহের কথা বললেও, প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা পুরোপুরি উড়িয়েও দেননি। নওফেল বলেন, ‘আমি মেয়র পদে নির্বাচন করতে আগ্রহী নই। এরপরও নেত্রী আমাকে মেয়র পদে নির্বাচন করতে বললে তার সিদ্ধান্তের বাইরে যেতে পারব না।’
স্ট্যান্ডবাই মনজুর!
আসন্ন চসিক নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইতে পারেন চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র মোহাম্মদ মনজুর আলম। এর আগে বিএনপির সমর্থন নিয়ে তিনি ২০১০ সালে চট্টগ্রাম সিটি মেয়র হয়েছিলেন। স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটি অংশ এ কারণে তাকে নিয়ে আলোচনায় সরব।
২০১০ সালের চসিক নির্বাচনে মনজুর তার ‘গুরু’ আওয়ামী লীগের এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীকে পরাজিত করে আলোচনায় এসেছিলেন। সিটি মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মনোনীত হন। পরবর্তীতে ২০১৫ সালের এপ্রিলে অনুষ্ঠিত চসিক নির্বাচনে তিনি আবার বিএনপির সমর্থনে প্রার্থী হন। তবে নির্বাচনের দিন সকালে কারচুপির অভিযোগ তুলে ভোট বর্জন করে রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন তিনি।
জানা যায়, দ্বিতীয়বার অংশ নিয়ে সিটি নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পর মনজুর আলমকে রাজনীতিতে সক্রিয় হতে উৎসাহ দেন প্রয়াত এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী। চট্টগ্রামের কাট্টলী এলাকায় এক অনুষ্ঠানে এক মঞ্চে পাশাপাশি বসেছিলেন প্রয়াত মহিউদ্দিন চৌধুরী ও মনজুর আলম। মনজুরকে আওয়ামী লীগে ফেরাতে আগ্রহী মহিউদ্দিন, এমন গুঞ্জন ডালপালা মেলে মূলত এরপরেই।
তবে মহিউদ্দিন চৌধুরীর মৃত্যুর পর মনজুর আলম আবার নীরব হয়ে পড়েন। সম্প্রতি সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম বিক্রি হওয়ার পর চট্টগ্রামে রাজনীতিতে আবার শুরু হয়েছে মনজুরকে নিয়ে আলোচনা।
তবে নগর আওয়ামী লীগের এক সিনিয়র নেতা চসিক নির্বাচনে মনজুরের প্রার্থিতা সম্পর্কে বলেন, ‘গণতান্ত্রিক সংগঠন আওয়ামী লীগের ফরম যে কেউ কিনতে পারেন। কিন্তু দলের মনোনয়ন বোর্ড নির্ধারণ করবে মনোনয়ন কে পাবেন।’
তিনি বলেন, ‘মনজুর আলম তিন-চারবার রাজনীতির গতি পরিবর্তন করেছেন। তাছাড়া ১/১১ এর সময় তার ভূমিকা সম্পর্কে অনেকে জানেন। সেই মনজুর আলম এখন আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে চাচ্ছেন।’
এদিকে নিজের প্রার্থিতা সম্পর্কে মনজুর আলম বলেন, ‘আমি রাজনীতি থেকে দূরে থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে সমাজসেবা করে আসছি। এখন অপেক্ষায় আছি। ডাক পেলে ঢাকায় যাব।’
আলোচনায় আরো যারা
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এবার আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী হিসেবে এগিয়ে আছেন বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। এছাড়া অন্যদের মধ্যে আলোচনায় আছেন সাবেক বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি, নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খোরশেদ আলম সুজন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম চৌধুরী, কোষাধ্যক্ষ ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম, চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম এবং কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি নুরুল ইসলাম।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন