আওয়ামী লীগ সরকারের কঠোর সমালোচনা করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘দেশে এখন অনিয়মই নিয়মে পরিণত হয়েছে। গণতন্ত্র নেই, মানুষের বাক ও ব্যক্তিস্বাধীনতা নেই, নেই মানবিক মর্যাদা। দেশে সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে। নারী ধর্ষণ, শিশু ধর্ষণ এখন নৈমিত্তিক হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
শুক্রবার (১৪ ফেব্রয়ারি) দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেন, ‘নিশিরাতের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বছরটি ঘোষণা করেছেন তাঁর পিতার নামে (মুজিব বর্ষ)। মানুষের ধারণা ছিল তাঁর পিতার সম্মানে হলেও মানুষকে একটু স্বস্তি ও নিরাপত্তা দেবেন। বন্ধ করবেন ব্যাংক ডাকাতি, লুটপাট আর টাকা পাচারের মহোৎসব। বন্ধ করবেন বিরোধীপক্ষের প্রতি কুৎসা রটানো। কিন্তু প্রতিদিন হতাশার খবর ছাড়া আর কিছুই নেই। বরং আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, দেশজুড়ে নানা অপরাধের মধ্যে প্রতিদিন কোথাও না কোথাও ধর্ষিতা হচ্ছে নারী ও শিশু। অপরাধীদের অধিকাংশই ক্ষমতাসীনদের লোক।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘রাষ্ট্র ও সমাজের সবখানেই এখন অনিয়ম আর দুর্নীতি। রেল লাইন নির্মাণ কিংবা ভবন নির্মাণে রডের পরিবর্তে বাঁশের ব্যবহার নিয়ে তথ্য প্রমাণসহ পত্রপত্রিকায় রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে, কিন্তু সরকারের টনক নড়েনি। দুর্নীতির দর্শনে বিশ্বাসী সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় চৌর্যবৃত্তির ব্যাপক বিস্তার ছাড়া যে অন্য কিছু হবে না সেটির ছবিই এখন চারিদিকে দৃশ্যমান।’
রিজভী বলেন, ‘নব্য বাকশালী নিশিরাতের সরকার আছে বলেই গত এক দশকে নয় লক্ষ কোটি টাকা দেশ থেকে পাচার হয়েছে এবং বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ৮১০ কোটি টাকা লোপাট হয়েছে, দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো হয়ে পড়েছে দেউলিয়া। এসব প্রকাশ্য ডাকাতিতে নিশিরাতের সরকারের নীরবতাই প্রমাণ করে ডাকাতির সাথে তারা জড়িত।’
তিনি বলেন, ‘খোদ বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ ফিন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি রিপোর্টে বলা হচ্ছে, দেশের শীর্ষ তিনজন গ্রাহক যদি কোনও কারণে ঋণ খেলাপি হন তাহলে দেশের ২১ ব্যাংক মূলধন সংরক্ষণে ব্যর্থ হবে। আর মাত্র ৭ জন শীর্ষ গ্রাহক খেলাপি হলে ৩৫টি ব্যাংক এবং ১০ জন শীর্ষ গ্রাহক খেলাপি হলে ৩৭টি ব্যাংক মূলধন ঘাটতিতে পড়বে। এর অর্থ দাঁড়ায়, বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো এবং ব্যাংকগুলোতে গচ্ছিত দেশের জনগণের সম্পদ হাতে গোনা কয়েকজন ব্যক্তির কাছে জিম্মি।’
রিজভী প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘তাহলে কি ‘কথাই’ এই সরকারের উন্নয়ন? কাদের উন্নয়ন কিংবা কাদের জন্য উন্নয়ন? আসলে পর্বত-প্রমাণ দুর্নীতিই এদের উন্নয়ন। বাস্তবতা হলো, এই স্বাধীন দেশে এখন জনগণ পরাধীন। তাই জনগণের স্বাধীনতার জন্য আজ আমাদের শ্লোগান ‘টেক ব্যাক বাংলাদেশ’।’
কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া অত্যন্ত অসুস্থ জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘অসুস্থ বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে অমানবিক নির্যাতন করা হচ্ছে। আমরা অবিলম্বে তাঁর নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছি।’
সংবাদ সম্মেলনে দলের ভাইস চেয়ারম্যান এজেডএম জাহিদ হোসেন, নিতাই রায় চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নেতা মীর সরাফত আলী সপু ও অ্যাডভোকেট আবেদ রেজা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন