ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল মানুষের দ্বারে-দ্বারে গিয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন। যেখানেই যাচ্ছেন ব্যাপক সাড়া পাচ্ছে তিনি। তার প্রচার মিছিলে প্রতিদিনই সাধারণ মানুষের ঢল নামছে। নেতাকর্মী, সমর্থক ও সাধারণ মানুষের ভালোসায় সিক্ত হয়ে অভিভূত তিনি। ভোট চাইতে গিয়ে সাধারণ জনগণ নানা আকাঙ্ক্ষা, প্রত্যাশার পাশাপাশি বর্তমান নগর ব্যবস্থাপনার প্রতি অভিযোগও করছেন।
ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য অধীর আগ্রহে সাধারণ মানুষ তাবিথ আউয়ালকেই তাদের প্রশ্ন, ‘ভোট সুষ্ঠু হবে তো, কেন্দ্রে যেতে পারব তো?’
বুধবার (১৫ নভেম্বর) সকালে উত্তর বাড্ডার রহমতুল্লা গার্মেন্ট থেকে পঞ্চম দিনের গণসংযোগ শুরু করেন তাবিথ আউয়াল। সেখানে নেতাকর্মী, সমর্থকদের নিয়ে গণসংযোগের যাত্রা করলে তাতে সাধারণ মানুষ যুক্ত হয় প্রচার মিচিলে। পথে পথে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ তাকে জড়িয়ে ধরে দোয়া করেন।
প্রচার মিছিল বাড্ডার সাতারকুল ইসলাবাদে পৌঁছালে আকলিমা নামে এক মধ্যবয়সী নারীর হাতে লিফলেট দিয়ে ভোট চান তাবিথ। তিনি তাকে ৩০ জানুয়ারি ভোট দিতে যাওয়ার অনুরোধ করেন। এ সময় ওই নারী বলেন, ‘আমরা ভোট দিতে চাই। কিন্তু ভোট দিতে পারি না। রাতেই তো ভোট হয়ে যায়।’
সাতারকুল দ্বীন মোহাম্মাদ মহিলা মাদ্রাসার এক শিক্ষক বলেন, ‘৩০ তারিখ ভোট দেয়ার জন্য প্রস্তুত আছি। পরিবেশ থাকলে অবশ্যই ভোট দিতে যাবো। কিন্তু ভোট দিতে পারবো কি-না সন্দেহ আছে। কয়েক বছর যাবৎ ভোট দিতে পারি না।’
এর আগে বেরাইদ রহমাতুল্লাহ কলেজ রোডে ব্যবসায়ী আবুল কালামের কাছে ভোট চান বিএনপি প্রার্থী। এ সময় কালাম বলেন, ‘আপনাদের নেতা-কর্মীদের ভোট কেন্দ্রে থাকতে হবে। নইলে কেন্দ্র দখল করে ভোট নিয়ে যাবে।’
আকছেরটেক এলাকায় জসিম উদ্দিন নামে এক রিকশাচালকের কাছে ভোট প্রার্থনা করলে ওই ব্যক্তি নিজেকে ধানের শীষের সমর্থক দাবি করেন তাবিথ আউয়ালকে বলেন, ‘স্যার ভোট দিতে পারব? ভোটের জায়গায় (কেন্দ্রে) তো যাওয়া যায় না। সরকারের লোকেরা বইসা থাকে।’ এ সময় তাবিথ আউয়াল বলেন, ‘সাহস করে আপনাকে কেন্দ্রে যেতে হবে। আপনার একটি ভোটই বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ত্বরান্বিত করবে।’
ঊত্তর বেরাইদ বাজারের দোকানদার জামাল উদ্দিন বলেন, ‘নির্বাচনের পরিবেশ সষ্ঠু আছে। সরকার তো বলছে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে। পরিবেশ থাকলে ভোট দিতে যাবো।’
একই এলাকায় ফুলবানুর কাছে ভোট চান বিএনপি প্রার্থী তাবিথ আউয়াল। এ সময়ে তিনি তাবিথ আউয়ালকে জড়িয়ে ধরে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। মাথায় হাত দিয়ে দোয়া করেন।
সকালে উত্তর বাড্ডার ৪১ নং ওয়ার্ডেও সাঁতারকুল, মেরাদিয়া, জোয়ারসাহারা, পশ্চিম পদরদিয়া, পূর্ব পদরদিয়া, ইসলামবাগ হয়ে ৪২ নম্বর ওয়ার্ডের মগাইর থেকে শুরু হয়ে রহমাতুল্লাহ কলেজ, আকছারটেক, বেরাইদ, নামার বাজার হয়ে ফকিরখালি পর্যন্ত এলাকায় গণসংযোগ করেন।
নির্বাচনে জয়ী হতেই নাঠে নেমেছেন মন্তব্য করে গণসংযোগের শুরুতেই নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তাবিথ আউয়াল বলেন, ‘৩০ জানুয়ারি একটি পরীক্ষার দিন, জীবনবাজির লড়াই। এই পরীক্ষায় জয়ী হতেই হবে।’ তিনি নেতা-কর্মীদের মনোবল ধরে রাখারও আহ্বান জানান।
দুপুরে রাজধানীর উত্তর বাড্ডার বেরাইদ এলাকায় নির্বাচনী প্রচার কার্যালয় উদ্বোধনের সময় তাবিথ আউয়াল এসব কথা বলেন।
দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের উদ্দেশ্যে তাবিথ আউয়াল আরও বলেন, ‘আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। মনোবল ভাঙা যাবে না। যত সমস্যাই আসুক মোকাবিলা করে বিজয়ী হতে হবে।’
তিনি ওই সময় নিজের প্রতীক ধানের শীষ ছাড়াও ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী নবী হোসেন (ঘুড়ি প্রতীক) ও নারী কাউন্সিলর প্রার্থী সালেহা ইসলামের (আনারস প্রতীক) পক্ষে ভোট চান।
রহমতুল্লাহ গার্মেন্ট এলাকা থেকে নির্বাচনী প্রচার শুরু করেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘মঙ্গলবার থেকে নির্বাচনী প্রচারে বাধা দেয়ার ক্ষেত্রে নতুন নতুন ধারা দেখছি। আগে পোস্টার ছেঁড়া হতো। এখন অনেক জায়গায় ব্যাটারিসহ মাইক নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কিছু ক্ষেত্রে ফেরত দিচ্ছে, কিছু ক্ষেত্রে হদিস পাওয়া যাচ্ছে না।’
নির্বাচনের জন্য সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরিতে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) প্রতি আবারও আহ্বান জানিয়ে তাবিথ আউয়াল বলেন, ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড (সবার জন্য সমান সুযোগ) করে সবার জন্য একটি সুস্থ পরিবেশ তৈরি করুন। নির্বাচনের আরও ১২ দিন বাকি আছে। প্রতিটি দিন যেন সবাই সুস্থভাবে প্রচার চালাতে পারেন।’
বাড্ডা এলাকার সমস্যা তুলে বিএনপির মেয়র প্রার্থী বলেন, ‘এই এলাকা নতুন করে সিটি করপোরেশন যুক্ত হয়েছে। কিন্তু নাগরিক সুবিধা নেই। রাস্তাঘাট খারাপ। সড়কে বাতি নেই। কর্মজীবী নারীদের জন্য এখনো অনিরাপদ। গত মৌসুমে এ এলাকার মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে।’
তিনি প্রতিশ্রুতি দেন, মেয়র নির্বাচিত হলে নাগরিকদের নিরাপত্তাসহ সব রকমের ব্যবস্থা নেবেন।
নির্বাচনী প্রচারে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আতিকুল ইসলামের ‘চা দোকানি সাজার’ বিষয়ে সাংবাদিকেদের এক প্রশ্নের জবাবে তাবিথ আউয়াল বলেন, ‘আমার প্রতিপক্ষ তাঁর নির্বাচনী প্রচার যেভাবে পারেন, করবেন। এ ব্যাপারে আমি কিছু বলব না।’
তবে তাবিথ আউয়াল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তাঁর পেজে পোস্ট করা একটি ছবি নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন। ওই ছবিকে নিয়ে অনেকে বলছেন তিনি ‘বাস কনডাক্টও সেজেছিলেন’। ছবিটি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আপনারা দেখবেন, ২০১৫ সালে নির্বাচনী প্রচারের ওই ছবিতে আমি বাসের জানালার বাইরে গণসংযোগের জন্য দাঁড়িয়েছিলাম। সেখানে বাসের কনডাক্টর সাজার কোনো চেষ্টা ছিল না। এটাকে নিয়ে এখন অপব্যবহার করা হচ্ছে।’
বিএনপি মেয়র প্রার্থী অভিযোগ করেন, ‘প্রতিদিন নতুন নতুন পদ্ধতিতে প্রচার প্রচারণায় বাধা দেয়া হচ্ছে। এতোদিন বিএনপি প্রার্থীদেরও পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হতো। এখন মাইকও কেড়ে নেয়া হচ্ছে। পোস্টার না লাগাতে হুমকি দিচ্ছে। হামলা করা হচ্ছে। অনেককে গ্রেফতারও করা হচ্ছে।’
ইসির প্রতি আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রচারে আর ১২ দিন বাকী আছে। এই সময়ে যেন সব প্রার্থীরা সমানভাবে প্রচার চালাতে পারেন সে ব্যবস্থা নেবেন।’
তাবিথ আউয়াল বলেন, ‘এই এলাকার জলবদ্ধতা ও সরু এলাকায় যানজট নিরসনে কাজ করবো।’
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন