ইডেন কলেজের সামনের রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন এক পথচারী নারী। এসময় কলেজ ছাত্রলীগের তিন কর্মী তাকে ‘হিজড়া’ বলে ডাক দেন। প্রতিবাদ করায় ওই নারীর ওপর চড়াও হন তারা। তাকে বেধরক মারধর করা হয়।
মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮ টার দিকে কলেজটির বিপরীতে ফুড কর্নারের সামনে এই ঘটনা ঘটে। অভিযুক্ত ছাত্রলীগ কর্মীরা হলেন- সুষ্মিতা বাড়ৈ, সোনালী আক্তার ও জ্যোতি সাহা। আর হামলার শিকার ওই নারীর নাম আনিকা।
মারধরের সময় ছাত্রলীগ কর্মীরা দলীয় পরিচয় উল্লেখ করে হুমকি দেন বলেও অভিযোগ করেন আনিকা। দৈনিক যুগান্তরকে তিনি বলেন, আমার সঙ্গে কী করা হয়েছে, কেউ না দেখলে তা বুঝতে পারবেন না। আমি হেঁটে যাচ্ছিলাম, ওরা তিনজন আমাকে দেখে বলে দেখ ‘হিজড়া’ যাচ্ছে।
‘তখন আমি প্রতিবাদ করি। এটাই ছিল আমার অপরাধ। ‘আমরা লেখক (ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য) দাদার লোক’ বলেই আমার ওপর তারা হামলা করে। আমাকে বেধরক মারধর করা হয়।’
এ ঘটনা উল্লেখ করে ফেসবুকে পোস্ট দেন আনিকা।
তিনি লিখেছেন, ‘আমি আনিকা...ইডেন কলেজের সামনে কলোনি দিয়ে হেঁটে বাসায় যাচ্ছিলাম। তখন একটা মেয়ে আমাকে ‘হিজড়া’ বলে ডাক দেয়, তখন আমি তার কাছে বললাম— আপনি আমাকে হিজড়া বললেন কেনো? তখন তার সঙ্গে থাকা মেয়েরাসহ আমার দিকে তেড়ে আসে, এবং আমাকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন।’
ভুক্তভোগী নারীর ফেসবুক পোস্ট। ছবি: যুগান্তর
ভুক্তভোগী নারীর ফেসবুক পোস্ট। ছবি: যুগান্তর
আনিকা লিখেন, ‘আমি যখন বলি আপনারা এই রকম ব্যবহার কেন করছেন...তখন বলে আমরা ইডেন কলেজে পড়ি, ছাত্রলীগ করি, লেখক দার( সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ) সঙ্গে রাজনীতি করি, এই বলে আমাকে গালাগালি আর মারধর করে চুল ধরে একে অপরের নাম নেয়, তখন আমি ওদের নাম শুনতে পাই। ওরা ছিল সুষ্মিতা বাড়ই, সোনালী আক্তার এবং জ্যোতি সাহা।’
তিনি ফেসবুকে আরও বলেন, ওরা আমাকে মারতে মারতে মাটিতে শুয়ে ফেলে এবং আমার ওড়না টেনে ফেলে দেয়, আমাকে বিবস্ত্র করে ফেলে..... বলে পোলাপাই ডাক ওরে মাইরা ফেল.... কেউ আমাকে বাঁচাতে আসেনি....এটা কি বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ, যে দেশের একটি সাধারণ মেয়ে রাস্তা দিয়ে হেটে যেতে পারবে না।জাতির কাছে প্রশ্ন...!!!! আজ আমি একা বলে বিচার পেলাম না.....বিচার চাই.....".
এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, আমি বন্ধুদের নিয়ে সেখানে আড্ডা দিচ্ছিলাম, তখন দেখি কয়েকটি মেয়ের মধ্যে হাতাহাতি হচ্ছে। পরে অনেক লোক সেখানে জড়ো হন।
এ ঘটনা ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে হামলাকারীদের একজন সুষ্মিতা আনিকাকে কল দিয়ে এ ঘটনার জন্য দু:খ প্রকাশ করেন। এ বিষয়ে কাউকে না জানাতে সুস্মিতা অনুরোধ করেন বলেও জানান আনিকা।
এই হামলার ঘটনা ফেসবুকে পোস্ট দেয়ায় তা মুছে দিতেও হুমকি আসছে বলে জানালেন অনিকা। এ ক্ষেত্রে দলীয় লোকদের হয়রানির আশঙ্কায় থানায় অভিযোগ করা থেকেও বিরত থাকতে হচ্ছে বলে তিনি বলেন।
এ বিষয়ে সুস্মিতা বাড়ৈ যুগান্তরকে বলেন, আমরা বান্ধবীরা কলেজের সামনে বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম। এসময় এক বান্ধবী আরেক বান্ধবীকে মজা করে বলছিল, এই তোকে আজ হিজড়াদের মত লাগছে। এই সময় ওই নারী পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। উনি এসে বলেন— থাপড়িয়ে দাঁত ফেলে দেব। তখন আমরা বললাম আপনি থাপড়িয়ে দাঁত ফেলে দিবেন কেন? তখন তিনি বলেন, আমরা নাকি তাকে হিজড়া বলেছি। এ নিয়ে আমাদের কথা কাটাকাটি হয়। পরে লেখক দাদা ( ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক) আমাকে ফোন দিয়ে ঘটনার বিষয়ে জানতে চান।
‘লেখক দাদাকে বিস্তারিত বলার পর দাদা ওই নারীর ফোন নম্বর আমাকে দেন। পরে আমি তার কাছে ফোন দিয়ে সরি বলেছি।’ সুস্মিতা বাড়ৈ আরও বলেন, ওই নারীকে ব্যক্তিগতভাবে আমি চিনি না।
এ বিষয়ে জানতে বুধবার বিকালে লেখক ভট্টাচার্যকে বেশ কয়েকবার ফোন করা হলেও তার সাড়া পাওয়া যায়নি।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন