যেখান থেকেই নির্দেশ আসুক বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদেরকে মাঠে নামার আহ্বান জানিয়েছেন নাগরিক ঐক্যর আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। তিনি বলেন, ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে যে ভোট ডাকাতি হলো তখন যদি আমরা মাঠে নামতাম তাহলে তারা সাহস পেত না। আসুন তখন যেটা পারিনি ২০২০ সালে সেটা করি। কারণ, এটা বিএনপি, গণফোরাম বা অন্য কারো লড়াই নয়। এটা আমাদের ভোটাধিকার রক্ষার ও বাঁচা-মরার লড়াই।
বুধবার (১৫ জানুয়ারি) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির মিলনায়তনে স্বাধীনতা অধিকার আন্দোলন আয়োজিত ‘অবাধ ও স্বচ্ছ নির্বাচনে বিশ্বব্যাপী ইভিএম প্রত্যাখ্যান এবং বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনা সভার তিনি এসব কথা বলেন।
আয়োজক সংগঠনের সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামানের সভাপতিত্বে সভায় সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম। অন্যান্যদের মধ্যে গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, বিশিষ্ট আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক, স্বাধীনতা অধিকার আন্দোলনের উপদেষ্টা ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
মান্না বলেন, যন্ত্র তো মানুষ তৈরি করেছে। সেটার নিয়ন্ত্রণ তো মানুষের কাছে। আপনি কোথায় ভোট দিলেন সেটা তো ভোটাররা জানতে পারবেন না। আমাদের বেহায়া নির্লজ্জ নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, ইভিএমে ভোটগ্রহণ করা হলে দিনের ভোট নাকি রাতে হবে না। তো আপনি এর আগে কী করেছেন?
তিনি আরও বলেন, যে যন্ত্র ব্যবহার করলে বিতর্ক থাকবে না, মামলার সুযোগ নেই, কোথায় ভোট দিলেন জানার সুযোগ নেই তাহলে এর চেয়ে ভোট চুরির বড় মাধ্যম আর কী হতে পারে? ইভিএম মানা যাবে না। এর বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে। ৩০ জানুয়ারি ভোট চুরি হলে পরের দিন মাঠে নামতে হবে।
সুব্রত চৌধুরী বলেন, ইভিএম আমাদের ভোটাধিকার হরণ করবে। এ যন্ত্রের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ ভোটারদের কাছে থাকবে না। তারা ক্ষমতা দখল করতে যত ধরনের পদ্ধতি আছে সব ব্যবহার করতে চাচ্ছে। আমাদের আশঙ্কা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ফল তারা ঠিক করে রেখেছে। এখন শুধু ঘোষণার অপেক্ষায়। তবে আমরা মনে করি এ নতুন বছরের শুরুটা হচ্ছে সরকার পতনের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে।
ড. শাহদীন মালিক বলেন, ইভিএম চাচ্ছে কে? সরকার ও নির্বাচন কমিশন। এর পেছনে কোনো সঠিক উদ্দেশ্য নেই। তারা নির্বাচন সামনে এলেই নতুন নতুন পদ্ধতি নিয়ে আসেন। ২০১৪ সালে গোলমাল লাগিয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ১৫৩ জন এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। এখন সিটি নির্বাচনে যদি রাত ৩টা বা ৪টার দিকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। ভোট বানচালের জন্যই ইভিএম ব্যবহার করতে চাচ্ছে।
তিনি বলেন, এ পদ্ধতি নিয়ে দিন দিন সংশয় বাড়ছে। ফলে সেটা ব্যবহার করা হলে ভোটারদের উপস্থিতি খুব কম হবে। তাহলে প্রতারণা করা সহজ হয়। ভোটাধিকার হরণ ও ভোট দেয়া থেকে বিরত রাখতে ইভিএম ব্যবহার করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার ও নির্বাচন কমিশন।
সিটি নির্বাচনে প্রার্থীদের নিয়ে তিনি বলেন, প্রার্থীরা নির্বাচনী প্রচারণায় সব ধরনের মানুষের মাঝে গিয়ে ভোট চায়। মেয়র প্রার্থীদের কারো অভিজ্ঞতা নেই। তবে তারা সবাই কোটিপতি। সুতরাং আমাদের গণতন্ত্র এখন কোটিপতির গণতন্ত্র। আমরা কোটিপতিদের নিয়ে একটা প্রতারণামূলক নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।
স্বাধীনতা অধিকার আন্দোলনের উপদেষ্টা ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম বলেন, যেখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের টাকা হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে নিয়ে যায় সেখানে ইভিএমে আমাদের ভোট যে চুরি হবে না সেটা কীভাবে বলা যায়? আমাদের গ্রামের সাধারণ মানুষ এখনো ইভিএমে অভ্যস্ত নয়। সুতরাং ব্যালট পেপারে ভোটগ্রহণ করা হোক।
মূল প্রবন্ধে ড. ওবায়দুল ইসলাম বলেন, মূলত বাংলাদেশের বর্তমান নির্বাচনী ব্যবস্থাপনার চরম নৈরাজ্যকর, অব্যবস্থাপনা সর্বোপরি নির্বাচন কমিশনের লাগাতার প্রশ্নবিদ্ধ আচরণ বা তাদের প্রতি সীমাহীন অনাস্থার কারণে মানুষের মৌলিক ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য নতুন অনুষঙ্গ ইভিএমকে অনেকেই ভেল্কি মেশিন হিসেবে আখ্যায়িত করছেন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন