ওয়ান ইলেভেন ছিল বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি সংকটকাল। এই সময়ে বিরাজনীতিকরণের প্রক্রিয়ায় রাজনীতি ধ্বংসের একটি ষড়যন্ত্র হয়েছিল। সেই ষড়য়ন্ত্রের অংশ হিসেবেই দুই নেত্রীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। বিনা অপরাধে আটক করা হয়েছিল শীর্ষস্থানীয় অনেক নেতা কর্মীকে। এই সময়ে রাজনৈতিক দলের অনেকেই সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে নির্লজ্জ সমর্থন জানিয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত গনতন্ত্রের জয় হয়েছে। এই যুদ্ধের সবচেয়ে বড় নায়ক হলেন তৃণমূলের নেতা কর্মীরা। তবে নেতৃত্ব পর্যায়ের অনেকেই গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার সংগ্রামে দৃঢ়তার পরিচয় দিয়েছিলেন। বিশেষ করে দুই নেত্রীকে মাইনাস করার ফর্মুলার বিরুদ্ধে তারা রুখে দাঁড়িয়েছিলেন স্ব স্ব অবস্থান থেকে।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপির হিসেবে নয় বরং যারা বিরাজনীতিকরণের বিরুদ্ধে সেই সময় কাজ করেছিলেন, বিভিন্ন পর্যায় থেকে সংগ্রাম করেছিলেন তাদেরকে নিয়ে এই প্রতিবেদন।
জিল্লুর রহমান
গণতন্ত্রের যোদ্ধা হিসেবে ওয়ান ইলেভেনের সময় সবচেয়ে আলোচিত নাম অবশ্যই জিল্লুর রহমান। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন ওয়ান ইলেভেন সফল হতে পারেনি যাদের জন্য তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন প্রবীণ, বর্ষীয়ান ও দৃঢ়চেতা এই রাজনীতিবিদের জন্য। শেখ হাসিনা গ্রেপ্তার হওয়ার সময় জিল্লুর রহমানকে আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দিয়ে যান। সে সময় জিল্লুর রহমান শুধু দলের ঐক্য অক্ষুন্ন রাখার পাশাপাশি শেখ হাসিনার নেতৃত্বকে নিশ্চিত করেছেন। তার দৃঢ়তার কারণেই শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সংষ্কারপন্থীরা সফল হয়নি বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন।
মতিয়া চৌধুরী
বেগম মতিয়া চৌধুরী সব সময় আওয়ামী লীগে কিছুটা কোণঠাসা অবস্থায় থাকতেন। কিন্তু ওয়ান ইলেভেনের সময় তিনি পাদপ্রদীপে আসেন এবং শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি অকুন্ঠ সমর্থন জানিয়ে দৃঢ় অবস্থান নেন তিনি। তার দৃঢ়তা এই সংষ্কার প্রস্তাবকে বাঁধাগ্রস্ত করার পাশাপাশি বিরাজনীতিকরণের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম
সৎ, মেধাবী, নিভৃতচারী ও দৃঢ়চিত্রের রাজনীতির প্রতীক ছিলেন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। ওয়ান ইলেভেনের সময় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জলিল তৎকালীন যুগ্ন সম্পাদক সৈয়দ আশরাফকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। মূলত জিল্লুর রহমান ও আশরাফ জুটি আওয়ামী লীগের বিভক্তিকে বন্ধ করে। আওয়ামী লীগকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অক্ষুন্ন রাখে।
অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন
শেখ হাসিনা যখন গ্রেপ্তার হয়েছিলেন তখন প্রথম টেলিফোনটি করেছিলেন অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুনকে। রাজনীতিতে সব সময় অপাংক্তেও থাকলেও ওয়ান ইলেভেনের সময় ঠিকই জ্বলে উঠেছিলেন তিনি। শেখ হাসিনার প্রথম জামিনের আবেদন করেছিলেন তিনি। আইনগত লড়াই এবং সাংগঠনিক লড়াই দুটোতেই সাহারা খাতুন ওয়ান ইলেভেনের সময় ছিলেন একজন সাহসী যোদ্ধা।
ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী
অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী স্বনামধণ্য চক্ষু বিশেষজ্ঞ এবং শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ছিলেন। ওয়ান ইলেভেনের সময় তার সাহসী পদচারণা বিশেষ করে শেখ হাসিনার অসুস্থতা এবং তার সুচিকিৎসার দাবিতে সোচ্চার ছিলেন তিনি। তৎকালীন প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে একাই তিনি শেখ হাসিনার মুক্তির জন্য স্বারকলিপি দিয়ে আলোচিত হন। পুরো ওয়ান ইলেভেনে তিনি ছিলেন একজন রাজনৈতিক অবিভাবক এবং সাহসী যোদ্ধা।
ড. হাছান মাহমুদ
শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত স্টাফ হিসেবে ড. হাছান মাহমুদ সেই সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। বিশেষ করে যখন দলের সিনিয়র আইনজীবীরা যখন শেখ হাসিনার মামলা লড়তে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন তখন তরুণ এই আইনজীবী সামনে চলে এসেছিলেন।
খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন
খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন বিএনপির সাহসী নেতা ছিলেন। ওয়ান ইলেভেনে মান্নান ভূঁইয়ার পথভ্রষ্ট হওয়ার পর তিনি ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এ সময় বিরাজনীতিকরণ এবং মাইনাস ফর্মুলার বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন।
অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম
আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগরের নেতা অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম ওয়ান ইলেভেনের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। এই সময় সংগঠন তৈরি করা এবং শেখ হাসিনার জন্য আইনগত লড়াইয়ে তিনি ছিলেন সামনের সারির যোদ্ধা।
ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ
শেখ হাসিনা গ্রেপ্তার হওয়ার পর তার মূল আইনজীবী হিসেবে কাজ করেছিলেন ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ। একজন সাহসী, বিনয়ী ও পরিমিতবোধ সম্পন্ন আইনজীবী হিসেবে তিনি ওয়ান ইলেভেনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।
ব্যারিস্টার রফিক-উল হক
ব্যারিস্টার রফিক-উল হক দুই নেত্রীর পক্ষে আইনজীবী হওয়ার এক বিরল সম্মান অর্জন করেছিলেন। গণতন্ত্রের পক্ষে এবং বিরাজনীতিকরণের পক্ষে তিনি ছিলেন ওয়ান ইলেভেনের সময়ের কণ্ঠস্বর।
নুরুল কবির
নিউ এজ পত্রিকার সম্পাদক নুরুল কবির ছিলেন সবচেয়ে সাহসী উচ্চারণগুলোর একটি। তিনিই প্রথম বিরাজনীতিকরণের বিরুদ্ধে টেলিভিশন ও টক শো’তে সোচ্চার ছিলেন। সেনা সমর্থিত অগণতান্ত্রিক সরকার যেন হটে যায় সেজন্য তিনি ছিলেন এক প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর।
ব্রিগেডিয়ার হান্নান শাহ
ব্রিগেডিয়ার হান্নান শাহ ওয়ান ইলেভেনের সময় বিএনপির যারা সংষ্কারের বিরোধীতা করে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বের প্রতি আস্থাশীল ছিল তাদের একজন ছিলেন।
এরকম আরো অনেকেই আছেন যাদের নাম এই ক্ষুদ্র পরিসরে উচ্চারণ করা গেলো না। তারা সামনের সারি থেকে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য তাদের অবস্থান থেকে কাজ করেছেন। এই দলের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পাশাপাশি অন্যান্য পেশার মানুষরাও ছিলেন।
তবে বাংলা ইনসাইডারের বিবেচনায় যারা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন তাদের কথাই উল্লেখ করা হলো। এদের কারণেই ওয়ান ইলেভেন সরকার টিকে থাকতে পারেনি এবং গণতন্ত্র ফিরে এসেছে।
বাংলা ইনসাইডার
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন