ঢাকা কলেজের এক শিক্ষার্থীকে ধরে নিয়ে কক্ষে আটকে পেটানোর অভিযোগ উঠেছে ঢাকা সিটি কলেজের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে। ওই শিক্ষক নিজেকে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা পরিচয় দিয়ে পেটান বলে ঢাকা কলেজের ওই ছাত্র জানান।
শনিবার দুপুর ১২টায় এ ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায় জানা যায়, ঘটনার সূত্রপাত বেলা সাড়ে ১১টায়। সায়েন্স ল্যাব এলাকায় পূর্বে সংঘটিত একটি ঘটনার জেরে ঢাকা এবং সিটি কলেজের উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এতে প্রায় ২০ শিক্ষার্থী আহত হন।
এ ঘটনা জানার পর উদ্ভূত পরিস্থিতি সামাল দিতে ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক নেহাল আহমেদ কলেজের নিবিড় পরিচর্যা কমিটির সদস্যদের ঘটনাস্থলে পাঠান। নিবিড় পরিচর্যা কমিটির সদস্য সহযোগী অধ্যাপক আনোয়ার মাহমুদ, সহকারী অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, প্রভাষক শামিম আহমেদ, প্রভাষক মাহমুদুল হাসান সবুজসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষক ঘটনাস্থলে যান। তারা পরিস্থিতি সামাল দিতে চেষ্টা করলে সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন বলে অভিযোগ ওঠে।
এ সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ঢাকা কলেজের স্নাতক শ্রেণির শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগকর্মী শামীম পারভেজ সুমন এবং মোহাম্মদ আলী শিক্ষকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের প্রতিবাদ জানান। এ সময় সিটি কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক আহসান হাবিব রাজা মোহাম্মদ আলীকে ধরে নিয়ে সিটি কলেজের মূল ভবনের উপাধ্যক্ষের কার্যালয়ের পাশের নিয়ন্ত্রণ কক্ষে আটকে রাখেন তিনি আলীকে মারধর এবং গালিগালাজ করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
মারধরের শিকার ঢাকা কলেজের স্নাতক শ্রেণির শিক্ষার্থী মোহাম্মদ আলী বলেন, আমি ও আমার হলের বড় ভাই (শামীম পারভেজ সুমন) খাবার খেতে সায়েন্স ল্যাব গিয়েছিলাম। ওই সময় সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা ঢাকা কলেজের শিক্ষকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করছে দেখে এগিয়ে যাই এবং তাদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করি। তখন উপস্থিত সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে এবং আমার মোটরসাইকেলে লাথি মারে। পরে আমি ওই শিক্ষার্থীকে বুঝিয়ে সিটি কলেজের শিক্ষকদের কাছে সোপর্দ করি। তখন সিটি কলেজের শিক্ষক আহসান হাবীব রাজা আমি ঢাকা কলেজের ছাত্র জানামাত্রই আমাকে টেনেহিঁচড়ে উপাধ্যক্ষের কার্যালয়ের পাশের নিয়ন্ত্রণ কক্ষে ধরে নিয়ে যান। তিনি কক্ষের দরজা আটকে উপর্যুপরি কিল-ঘুষি এবং চড়-থাপ্পড় মারতে থাকেন।
আলী আরো বলেন, এ সময় আমি ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের কর্মী পরিচয় দিলে তিনি আমার প্রতি আরো ক্ষিপ্ত হন। নিজেকে ছাত্রলীগের সাবেক নেতা পরিচয় দিয়ে আবারো পেটাতে থাকেন। তিনি বলেন ‘তুই কিসের ছাত্রলীগ করিস? তোর মতো ছাত্রলীগ আমি গুনি না’।
ঢাকা কলেজ সূত্র জানায়, এ সময় ওই শিক্ষার্থীকে বাঁচাতে ঢাকা কলেজের শিক্ষকরা কক্ষে প্রবেশ করতে চাইলে তাদের বাধা দেওয়া হয় এবং শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়। এতে ঢাকা কলেজের গণিত বিভাগের শিক্ষক সহকারী অধ্যাপক নজরুল ইসলাম ডান হাতে আঘাত পান। পরে আহত অবস্থায় ঢাকা কলেজের ওই শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করা হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা কলেজের সহকারী অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমাকে ও আমার সহকর্মী শিক্ষকদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়েছে। তারপরও আমরা ওই শিক্ষার্থীকে রুম থেকে উদ্ধার করে নিয়ে আসি’।
তবে সব অভিযোগ অস্বীকার করে ঢাকা সিটি কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক আহসান হাবীব রাজা বলেন, ‘এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন। আমি তার (মোহাম্মদ আলী) জীবন বাঁচিয়েছি’।
ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে সিটি কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক বদর উদ্দিন আহমেদ সব অভিযোগ অস্বীকার করেন এবং পাল্টা অভিযোগ করেন ঢাকা কলেজের এক থেকে দেড় শ শিক্ষার্থী রড, বাঁশ নিয়ে সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে।
তবে সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে এ অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি।
ঘটনার বিষয়য়ে সিটি কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন বলেন, আমরা সব সময় চেষ্টা করি এসব অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে। তারপরও যদি এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকে তবে তা দুঃখজনক। অভিযুক্ত হিসাববিজ্ঞান বিভাগের ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বলেন, যেকোনো প্রকার অনভিপ্রেত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আলোচনা চলছে। শিক্ষক কর্তৃক শিক্ষার্থীর ওপর এ ধরনের হামলা এবং শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনা কখনো কাম্য নয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা হয়েছে এবং সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য বলেছি।
ঘটনার পরপরই নিউমার্কেট মার্কেট থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) ইয়াসিন, ধানমন্ডি থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) আশফাক, পূর্ব ধানমন্ডি পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. সাহেব আলীসহ অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে আসেন।
নিউমার্কেট থানার ওসি এস. এম কাইয়ুম বলেন, ‘যেকোনো অস্থিতিশীল পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমরা প্রস্তুত রয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে’।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন