বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির ব্যাপারে রাজনৈতিক আপসের কোনো সুযোগ আছে বলে মনে করেন না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা। আগামী ১২ ডিসেম্বর উচ্চ আদালত কারান্তরীণ খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার মেডিকেল রিপোর্ট চাওয়ায় মুক্তির বিষয়টি আলোচনায় এলেও এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, রাজনৈতিক বিবেচনায় খালেদা জিয়ার মুক্তির সময় পেরিয়ে গেছে। এখন আইন-আদালতের ব্যাপার এসে দাঁড়িয়েছে। রাজনৈতিক সুযোগ বা ক্ষেত্র তৈরি করে দেওয়ার অবস্থানে আওয়ামী লীগ নেই। এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের অবস্থান অনড়। আওয়ামী লীগ সম্পাদকম-লীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, খালেদার শারীরিক অবস্থা সংকটাপন্ন হলেও মুক্তির ক্ষেত্র প্রস্তুত করার ব্যাপারে আওয়ামী লীগ এক পাও আগাবে না। এটা দলের সিদ্ধান্ত। আদালতে লড়াই করে মুক্তির গ্রাউন্ড তৈরি করতে হবে। তবে একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানায়, জরুরি চিকিৎসার প্রয়োজনে বিদেশ যাওয়ার আগ্রহ ব্যক্ত করে প্যারোল আবেদন করলে সেক্ষেত্রে সরকার বিবেচনা করতে পারে, অথবা রাষ্ট্রপতির কাছে অপরাধের ক্ষমা চেয়েআবেদন করলে একটি উপায় বেরুতে পারে।
ক্ষমতাসীন দলের নেতারা আরও বলেন, খালেদার মুক্তির ব্যাপারটি রাজনৈতিক জয়-পরাজয়ের বিষয় হয়েও দাঁড়িয়েছে। এখন ‘ব্যাকফুটে’ গেলেই আওয়ামী লীগের সর্বস্তরে ভুল ‘মেসেজ’ যাবে। এতে করে চাঙ্গা হয়ে যাবে রাজনৈতিক মাঠ থেকে হারিয়ে যাওয়া বিএনপি। আর নানা প্রশ্নের মুখে পড়ে মনোবলে চিড় ধরবে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের। আওয়ামী লীগ সভাপতিম-লীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিএনপি সাংগঠনিকভাবে দুর্বলতা কাটিয়ে তুলতে পারেনি, তাদের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা আতঙ্কগ্রস্ত, এসব মিলিয়ে আপসের কোনো চিন্তা আওয়ামী লীগের ভেতরে নেই। ওই নেতা আরও বলেন, সরকার বা কোনো দল থেকে দাবি আদায় করতে হলে প্রতিপক্ষ শক্তিকে সবল হতে হয়। এটাই রাজনৈতিক আপসের ক্ষেত্র তৈরি করে। দাবি আদায় করা মানে সরকারকে চাপে ফেলা। সভাপতিম-লীর এই সদস্য আরও বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনকে যেদিন কারাবন্দি করতে সক্ষম হয়েছি মূলত সেদিন থেকেই অনেক কিছু উতরে গেছি আমরা।
আওয়ামী লীগ সম্পাদকম-লীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, খালেদা ইস্যুতে মিডিয়ায় যত আলোচনা তত আলোচনা আওয়ামী লীগে নেই। নেই বিএনপিতেও। এই নেতা বলেন, বিএনপির সর্বস্তরের নেতাকর্মীরাই মনে করে খালেদা জিয়ার কারামুক্ত হওয়ার রাস্তা বন্ধ। আওয়ামী লীগ অন্দরে কিংবা বাইরে এ নিয়ে আলোচনাই করে না। দলীয় ফোরামে ৬ মাস আগ থেকেই ইস্যুটি মোকাবিলা করার পথ নিয়ে কথা বলা হয়নি। সম্পাদকম-লীর ওই নেতা আরও বলেন, খালেদার মুক্তি ইস্যুটি রাজনৈতিকভাবে যদি আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ কিছু মনে হতো তবে অবশ্যই আমাদের ফোরামে আলোচনা করা হতো। তিনি বলেন, খালেদার মুক্তির ব্যাপারে আওয়ামী লীগের আনুকুল্য দেখানোর সময় পার হয়ে গেছে অনেক আগেই। মুক্তির ব্যাপারে বিএনপির সামনে দুই পথ। এর একটি হলো দুর্বার আন্দোলন করা, অপরটি হলো আইনিভাবে লড়াই করা। দুর্বার আন্দোলন করার শক্তি বিএনপি অনেক আগেই হারিয়ে ফেলেছে। ওই নেতা বলেন, আমাদের কাছে তথ্য আছে আইনি লড়াইয়েও খালেদাকে মুক্ত করতে দ্বিধাবিভক্ত তারা। সুতরাং খালেদার মুক্তি সহজে নয়।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, খালেদা ইস্যুটি আমাদের মাথায়ই নেই। খালেদা আসলে জেলে না বাসায় সেটাও অনেকেই ভুলে গেছে। অবশ্য মিডিয়াগুলো মাঝে মাঝে মনে করিয়ে দেয়। তিনি বলেন, খালেদার মুক্তি নিয়ে অনিশ্চয়তায় তাদের দলের সিনিয়র-জুনিয়র সব নেতা। ফলে আমাদের মাথায় থাকার কোনো কারণই তো নেই।
আওয়ামী লীগ সভাপতিম-লীর অপর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, খালেদাকে মুক্ত করতে আওয়ামী লীগের হাতে একটা উপায় রয়েছে, সেটা হলো আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দুর্বার আন্দোলন করে জেলের তালা ভেঙে তাকে মুক্ত করা। এর বাইরে আওয়ামী লীগের হাতে আর কোনো সুযোগ আছে বলে আমার জানা নেই। তিনি বলেন, খালেদা ইস্যুতে রাজনৈতিক দফারফা কেন হবে? বিএনপি কি রাজনৈতিক দল?
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন