আগামীকাল রবিবার (৮ ডিসেম্বর) অনুষ্ঠিত হবে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন। ৫ বছর পর অনুষ্ঠিতব্য সরকার দলীয় এই ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনকে ঘিরে নেতা-কর্মীদের মধ্যে সাজ সাজ রব উঠেছে। ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা, প্রত্যাশা ও ভরসার মধ্য দিয়ে সম্মেলনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন নেতা-কর্মীরা। এরই মধ্যে ব্যানার-ফেস্টুন ও তোরণে নতুন সাজে সেজেছে রাজশাহী মহানগরী।
জেলার ৯টি উপজেলা, ১৪টি পৌরসভা ও ৭২টি ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের মধ্যে সম্মেলন ঘিরে লেগেছে প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির হিসাব-নিকাশ। পাশাপাশি রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনকে কেন্দ্র করে গোটা শহর ঘিরে সাজ সাজ রব পড়েছে। দীর্ঘ ৫ বছর পর আগামীকাল ৮ ডিসেম্বর রাজশাহী মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্স মাঠে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এই সম্মেলনকে সামনে রেখে দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত দলীয় কার্যালয় নেতাকর্মীদের উপস্থিতি আর পদচারণায় মুখরিত হচ্ছে। গোটা জেলাজুড়েই বইছে সম্মেলনের হাওয়া। পোস্টার-ব্যানারে ছেয়ে গেছে দলীয় কার্যালয়, শহরের আমচত্বর, শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান রেলগেটসহ পুরো নগরী। এ সম্মেলনের মাধ্যমে নির্বাচিত করা হবে নতুন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ একটি কমিটি। সমঝোতায় না হলে ৩৬০ কাউন্সিলর নেতা নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।
সম্মেলনের দিন ঘোষণার পর অনেকেই প্রস্তুতি নিয়েছেন শীর্ষ পদগুলোতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে। তারা নিজের পক্ষ প্রচার প্রচারণা চালানোর পাশাপাশি কেন্দ্রে লবিংয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। এ তালিকায় রয়েছেন তিনজন নারী নেত্রী। যাদের মধ্যে একজন সভাপতি ও দুইজন সাধারণ সম্পাদক পদ পাওয়ার আশায় কেন্দ্র থেকে শুরু করে তৃণমূলের নেতাদের সমর্থন আদায়ে চেষ্টা চালাচ্ছেন তারা। আবার জেলা মহিলা লীগ সভাপতি মর্জিনা পারভীন সংবাদ সম্মেলন করে তার প্রার্থীতা ঘোষণা করেছেন।
সম্ভাব্য তিনজন নারী প্রার্থীর মধ্যে রয়েছেন সাবেক এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আক্তার জাহান, সংরক্ষিত আসনের এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এবং যুব মহিলা লীগের সহসভাপতি অ্যাডভোকেট আবিদা আনজুম মিতা এমপি এবং জেলা মহিলা লীগের সভাপতি মর্জিনা পারভীন। এদের মধ্যে আক্তার জাহান সভাপতি এবং মিতা ও মর্জিনা সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশী।
মর্জিনা পারভীন বলেন, ‘‘দীর্ঘদিন ধরেই সহযোগী সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করছি। দুইবার এমপির মনোনয়ন চেয়ে বঞ্চিত হয়েছি। এবার আশা করছি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আমাকে মূল্যায়ন করা হবে।’’
আদিবা আনজুম মিতা বলেন, আমি দীর্ঘদিন যাবত আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত আছি। সে জন্য জেলা আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত করার জন্য কাজ করছে চাই। দলের দুর্দিনের ত্যাগী নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করে আওয়ামী লীগকে এগিয়ে নিতে সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে আগ্রহী। আশা করে দলের নেতারা আমাকে মূল্যায়ন করবেন।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেক নেতা-কর্মী বলেন, দলের এই গুরুত্বপূর্ণ পদে তাদেরকেই ভোট দিব যারা রাজশাহীতে সবসময়ই অবস্থান করেন। এমন নেতা নির্বাচিত যেন না হয় যে, বিপদ ও গুরুত্বপূর্ণ সময়ে যাদেরকে পাওয়া যায় না। তারা আরো বলেন, আবার এমন নেতাও চায় না যে, তার সাথে কথা বলতে পারা যায় না এবং তিনি নেতা-কর্মীদের মূল্যায়ন করবেন না।
রাজশাহীর তিন নারী নেত্রী ছাড়াও এবারের সম্মেলনে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদ প্রত্যাশী হিসেবে যাদের নাম আলোচনায় এসেছে তাদের মধ্যে রয়েছেন, রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের তিনবারের এমপি ও জেলার বর্তমান সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী, রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের তিনবারের সংসদ সদস্য প্রকৌশলী এনামুল হক, রাজশাহী-৬ (চারঘাট-বাঘা) আসনের তিনবারের এমপি ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এবং রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনের সাবেক এমপি আব্দুল ওয়াদুদ দারা, জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ। সভাপতি পদ প্রত্যাশী হিসেবে এইসব নেতাদের পক্ষে বিভিন্নভাবে প্রচার চালাচ্ছেন তাদের সমর্থকরা।
সাধারণ সম্পাদক পদে এবার আলোচনায় রয়েছেন, রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের দুইবারের এমপি আয়েন উদ্দিন, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও বাঘা উপজেলা চেয়ারম্যান লায়েব উদ্দীন লাভলু, জেলা কৃষক লীগের সভাপতি রবিউল আলম বাবু, বাগমারা উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান জাকিরুল ইসলাম সান্টু, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান মানজাল, বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম আসাদুজ্জামান, আলফোর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক, জেলার দপ্তর সম্পাদক ফারুক হোসেন ডাবলু। সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হিসেবে এদের পক্ষে প্রচার চালছে বিভিন্নভাবে।
এবারে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সম্পাদক পদে বেশ কয়েকজনের নাম যাচ্ছে এমন প্রশ্নের উত্তরে সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশী সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিন বলেন, ‘স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তির দল আওয়ামী লীগ। এ দলের প্রতিটি কর্মীই দেশ গড়ার একেকটি সৈনিক। অনেকেই এই প্রত্যাশা করবেন এটাই স্বাভাবিক। শুধু আওয়ামী লীগই নয়, এছাড়াও সহযোগি সংগঠনগুলোর নেতাও এসব পদের আশা করবেন যা অস্বাবিক নয়। নির্বাচিত নেতার প্রধান চ্যালেঞ্জ হবে দলকে সুসংগঠিত ও শক্তিশালী করা’।
রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সূত্রমতে, ২০১৪ সালের ৬ ডিসেম্বর রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। আর পুর্নাঙ্গ কমিটি অনুমোদন হয় এক বছর পর। ২০১৫ সালের ২৬ নভেম্বর দলের সভাপতি শেখ হাসিনা ৭১ সদস্যের কমিটি অনুমোদন দেন। তবে অনুমোদিত কমিটি জেলায় পাঠানো হয় ৭ ডিসেম্বর। এর আগে সম্মেলনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এ কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন ওমর ফারুক চৌধুরী এমপি ও সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন