জিয়াউর রহমানের সুযোগ্য উত্তরসূরি তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপিতে ‘নতুন প্রাণ’ সৃষ্টি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
রবিবার (১৮ নভেম্বর) বিকেলে তারেক রহমানের ৫৪তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে এক আলোচনা সভায় মহাসচিব এ মন্তব্য করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের নেতা তারেক রহমান অতি অল্প সময়ের মধ্যে বিএনপিকে গুছানোর কাজ প্রায় শেষ করে নিয়ে এসেছেন, নতুন প্রাণ সৃষ্টি করেছেন বিএনপির মধ্যে। এই দুঃসময়ে হাজার হাজার মাইল দূর থেকে তিনি দলকে পরিচালিত করছেন, এই দুঃসময়ে তিনি সঠিক নেতৃত্ব দিয়ে চলেছেন।’
‘আসুন আজকে তার জন্মদিনে আমরা তাকে শুভেচ্ছা জানাই, তার শতায়ু কামনা করি। সেই সঙ্গে তার কাছে আমরা এই শপথ করি যে, আমরা যেকোনও মূল্যে আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করব এবং যেকোনও মূল্যে দেশের গণতন্ত্রকে মুক্ত করে নিয়ে আসবো ইনশাল্লাহ।’
তারেক রহমানের সাংগঠনিক নেতৃত্বের ভুয়সী প্রশংসাও করেন বিএনপি মহাসচিব।
তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কোথাও তো কোনও কিছু খুঁজে পান নাই। সারা বিশ্বে তন্ন তন্ন করে খুঁজেছেন কোথাও কোনও দুর্নীতির চিহ্ন খুঁজে পান নাই। জোর করে আজকে তাকে সাজা দিয়ে এভাবে তাকে আটকিয়ে রেখেছেন। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকেও একই ভাবে মিথ্যা মামলা দিয়ে আটকিয়ে রাখা হয়েছে।’
চীনে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গীর হিসেবে একটি ঘটনা তুলে ধরে সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘২০০২ সালে আমার সৌভাগ্য হয়েছিলো প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সাথে রাষ্ট্রীয় সফরে চীনে যাওয়ার। প্রচণ্ড শীত ছিল, যার ফলে প্রেজেন্টেশন দেয়া সম্ভব ছিলো না। অর্থাৎ বিদেশি রাষ্ট্র বা সরকার প্রধানরা গেলে যে সন্মান দেয়া হয়, সেই সন্মানের অনুষ্ঠানটা আয়োজন করা হয় বাইরে মাঠের মধ্যে সশস্ত্র বাহিনীর গার্ড অব অনারের মধ্য দিয়ে। এতো বেশি ঠাণ্ডা ছিলো যে, বাইরে আয়োজন করতে না পেলে সেটি আয়োজন করেছিলো বিখ্যাত গ্রান্ড হলের ভেতরে।’
‘গার্ড অব অনারের পরে সেদেশের প্রধানমন্ত্রী অতিথি প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। আমরা যারা সফরে ছিলাম তখন লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। আমাদের প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া চীনের প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে সব সদস্যদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে আসছেন। তখন আমার পাশেই ছিলেন আজকের নায়ক, আমরা যাকে দেশনায়ক বলছি, আমরা যাকে বলছি বাংলাদেশের অন্ধকারকে আলোতে নিয়ে যাবেন-তিনি পাশেই দাঁড়ানো ছিলেন। যখন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া চীনের প্রধানমন্ত্রীকে পরিচয় করিয়ে দিতে দিতে যখন তারেক রহমানকে পরিচয় করিয়ে দিলেন- যে আমার ছেলে তারেক রহমান। চীনা প্রধানমন্ত্রী সেসময়ে যে উক্তিটি করেছিলেন সেটা আমার কাছে অত্যন্ত সিগনিফিকেন্ট মনে হয়। তিনি বলেছিলেন, ওয়েল ইয়াং ম্যান। কেরি দ্যা ফ্লাগ অব ইয়োর ফাদার এন্ড ইয়োর মাদার। তোমার পিতা এবং মায়ের যে পতাকা সেই পতাকাকে তুমি নিয়ে যাও সামনে।’
‘আজকে আমি বলতে চাই, সেই পতাকাটা কীসের পতাকা? সেই পতাকা হচ্ছে স্বাধীনতার পতাকা, স্বাধীনতা সংরক্ষণের পতাকা, সেই পতাকা হচ্ছে গণতন্ত্রের পতাকা, সেই পতাকা হচ্ছে মানুষের অধিকার রক্ষার পতাকা, সেই পতাকা হচ্ছে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের যে স্বকীয়, যে দর্শন সেই দর্শনকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পতাকা। আমরা তারেক রহমান সাহেবকে সেভাবেই জানি।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আজকে লক্ষ লক্ষ মানুষের বিরুদ্ধে মামলা, আমাদের বন্ধুরা অনেকে গুম হয়ে গেছেন। আমাদের ছেলেরা অনেকে আজকে গ্রাম থেকে পালিয়ে ঢাকায় রিকসা চালাচ্ছে, হকারের কাজ করছে। এরকম একটা ভয়াবহ করুণ অবস্থার মধ্যে বাংলাদেশের রাজনীতি আছে। এই রাজনীতিকে মুক্ত করতে হবে। একমাত্র তারেক রহমানের নেতৃত্বেই এটা মুক্ত করা সম্ভব। আসুন তারেক সাহেবের নেতৃত্বে আমরা সবাই দলমতনির্বিশেষে ঐক্য হয়ে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমরা পরাজিত করি এই দানবীয় সরকারকে এবং জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করি-এই হোক আমাদের শপথ। এই শপথ করলে হবে তারেক রহমানের জন্য সবচেয়ে বড় জন্মদিনের উপহার।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে একটা দানবের হাতে দেশ পড়েছে। সব কিছু তচনচ করে দিচ্ছে। আপনি দেখুন যে, অর্থনীতির বলতে কিচ্ছু নেই। দাবি করে যে, উন্নয়নের রোল মডেল নাকি বাংলাদেশ। অথচ এদিকে দেখা যাচ্ছে, ঋণ ঋণ আর ঋণ। চতুর্দিকে ঋণে সরকার একেবারে পুরোপুরি পূর্ণ হয়ে গেছে।’
‘আজকে শেয়ার মার্কেট থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট হয়ে যাচ্ছে, ব্যাংক থেকে লুট হয়ে যাচ্ছে। মেগা প্রজেক্টের নামে মেগা দুর্নীতি চলছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সম্পূর্ণ দলীয় লোকজনদের ভাইস-চ্যান্সলর (ভিসি) হিসেবে নিয়োগ দিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে ধবংস করে ফেলা হচ্ছে। এভাবে প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানকে ধবংস করে ফেলা হয়েছে।’
ছাত্র সমাজের অতীত গৌরবোজ্জল ভূমিকার কথা তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আজকে এগিয়ে আসতে হবে তরুণদের, যুবকদের, ছাত্রদের। নেতৃত্ব দিতে হবে তাদের। কারো জন্য অপেক্ষা করলে চলবে না- কে ডাক দিলো কে ডাক দিলো না সেই অপেক্ষা করলে চলবে না। ৯০ সালে সোহেল সাহেবদের (হাবিব উন নবী খান সোহেল) কেউ ডাক দেয়নি তারা নিজেরাই এগিয়ে গেছে সামনে, ’৬৯ সালে কেউ ডাক দেয়নি-তারা নিজেরাই এগিয়ে গেছে সামনে, ’৫২, ’৫৪তেও কেউ ডাক দেয়নি তারা নিজেরাই এগিয়ে গেছে সামনে। তাদেরকে ফলো করেছে রাজনৈতিক দলগুলো। এটাই ইতিহাস, ইতিহাস পড়ুন সব জানবেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আজকে এই সভাতে তরুণমুখ চতুর্দিকে। অনুপ্রাণিত হই, উদ্বেলিত হই, আশান্বিত হই যে, নিশ্চয়ই পরিবর্তন আসবে বলে আমি বিশ্বাস করি। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে আছেন, তাকে মুক্ত করার জন্যে, গণতন্ত্রকে মুক্ত করবার জন্যে, দেশকে রক্ষা করার জন্যে আসুন আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হই। আমাদের নেতা যার দিকে গোটা বাংলাদেশ তাঁকিয়ে আছে সেই নেতার নেতৃত্বে আমরা নিশ্চয় বাংলাদেশকে মুক্ত করতে সক্ষম হবো।’
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির মিলনায়তনে বাংলাদেশ ছাত্র ফোরাম ও উত্তরাঞ্চল ছাত্র ফোরামের যৌথ উদ্যোগে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৫৪তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এই আলোচনা সভা হয়।
সংগঠনের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মীর হেলালের সভাপতিত্বে ওবায়দুর রহমান চন্দন ও নাজমুল হাসানের পরিচালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস-চেয়ারম্যান খন্দকার মাহবুব হোসেন, আহমেদ আজম খান, উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ফজলুর রহমান, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামুসর রহমান শিমুল বিশ্বাস, যুগ্ম-মহাসচিব মাহবুবউদ্দিন খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, কেন্দ্রীয় নেতা কায়সার কামাল, শহীদুল ইসলাম বাবুল, আবদুল খালেক, আমিরুল ইসলাম খান আলিম, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েল, ছাত্রদলের সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন, সাবেক সহ-সভাপতি আব্দুল ওহাব, জহুরুল ইসলাম বিপ্লব প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
ঘটনা কী? তিনি কি পদচ্যূত হবার আশংকায় আছেন?
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন