বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, ‘বিএনপির রাজনীতি হয়ে উঠেছে ‘আত্মরক্ষামূলক’। আর এই আত্মরক্ষামূলক রাজনীতি করে কখনোই জয়ী হওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই। তার চেয়ে বরং ‘আক্রমণাত্মক’ রাজনীতি করলে জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। এখন ‘আক্রমণাত্মক’ রাজনীতিই বড় প্রয়োজন।’
শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের আকরাম খা হলে নাগরিক অধিকার আন্দোলন ফোরাম আয়োজিত সাদেক হোসেন খোকার স্মরণ সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
দলের বর্তমান কার্যকলাপ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমান সময়ে বিএনপির আন্দোলন দুই ধারায় প্রবাহিত হচ্ছে। একটি প্রেসক্লাব কেন্দ্রিক আন্দোলন, সংবাদ সম্মেলন এবং আরেকটি বিএনপি কার্যালয় কেন্দ্রিক আন্দোলন।’
বিএনপি নেতাদের উদ্দেশ্য করে গয়েশ্বর চন্দ্র বলেন, ‘এখানে যারা উপস্থিত হয়েছেন বিদ্যালয় উপস্থিতির তালিকার মত করে তাদের নাম বলতে হয়। পত্রিকায় তাদের নাম ছবি না আসলে ক্ষুব্ধ হন। পত্রিকার নাম না আসলে কি আন্দোলন হয় না? এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের সময় অনলাইন পত্রিকা, এত টেলিভিশন এবং ফেসবুক ছিল না। তাহলে সেই সময় কি আন্দোলন হয় নাই? সুতরাং আমাদেরকে পত্রিকায় নাম ও ছবি আসা, নিজেকে জাহির করার মন মানসিকতা থেকে বেরিয়ে এসে সত্যিকার অর্থে আন্দোলনে মনোনিবেশ করতে হবে।’
ভোটারবিহীন ভোটে নির্বাচন হয়ে সংসদ গঠন সম্ভব হলে, পেঁয়াজ ছাড়া রান্নাও সম্ভব- মন্তব্য করে গয়েশ্বর চন্দ্র বলেন, ‘পেঁয়াজের দামবৃদ্ধির কারণ সিন্ডিকেটের কারসাজি। বর্তমানে পেঁয়াজের অভাবের চেয়ে, পেঁয়াজের সঙ্কটের প্রচার পেঁয়াজের সিন্ডিকেডদের আরও বেশি সুযোগ করে দিয়েছে। কারণ কোনও জিনিসের অভাব হলে তার দাম এমনিতেই বেড়ে যায়। কিন্তু এখানে কৃত্রিম সংকট দেখানো হচ্ছে।’
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সরকারের ইচ্ছা ছাড়া আইনি প্রক্রিয়ায় বেগম জিয়ার মুক্তি সম্ভব নয়। আন্দোলন-সংগ্রাম করেই বেগম জিয়ার মুক্তি অর্জন করতে হবে। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় আন্দোলন করে শেখ সাহেবকে মুক্ত করতে না পারলে, তাঁর ফাঁসি হয়ে যেত। জনগণের আন্দোলনের ফলেই তিনি মুক্ত হয়ে আসেন এবং সেইসব মামলাও কোথায় গিয়েছে তারও কোনও হদিস নেই এখন।’
বিএনপির জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের আগে বিএনপি ৭ দফা দিয়েছিল। যদি ৭ দফা না দিয়ে এক দফায় ‘খালেদা জিয়ার মুক্তি চাইতাম’ তাহলে মুক্তি না হয়ে যেত না। নির্বাচনের ফলাফল যে এমন হবে এটা তো আমরা আগে থেকেই জানতাম। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তো আমাদেরকে দাওয়াত দেননি। ড. কামাল হোসেন দাওয়াত চেয়েছেন। চেয়ে দাওয়াত নিলে সেখানে অতিথি আপ্যায়নও তেমনই হয়।’
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় আরও বলেন, ‘সাদেক হোসেন খোকা একজন আপসহীন নেতা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। বিএনপি নেতাকর্মী ছাড়াও অনেকেই তার কাছ থেকে নানা সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করেছেন। সাদেক হোসেন খোকা ঢাকার অনেক রাস্তার নামকরণ করেছেন মুক্তিযোদ্ধাদের নামে। শুধু একজন মুক্তিযোদ্ধার নামে ঢাকার কোনও রাস্তার নামকরণ করা হয়নি- তিনি হলেন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান। হয়তো তিনি ভেবেছিলেন, জিয়াউর রহমান নামেতো বিমানবন্দর আছেই। তাই নতুন করে তাঁর নামে আর কোনও রাস্তার নামকরণ করা হয়নি।’
নাগরিক অধিকার আন্দোলন ফোরামের উপদেষ্টা সাঈদ আহমেদ আসলামের সভাপতিত্বে সাধারণ সম্পাদক এম জাহাঙ্গীর আলমের সঞ্চালনায় শোকসভায় আরও উপস্থিত ছিলেন- বিএনপি’র নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের আহ্বায়ক প্রিন্সিপাল শাহ মোহাম্মদ নেসারুল হক, বগুড়া-৪ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মো. মোশাররফ হোসেন, সদ্য প্রয়াত সাদেক হোসেন খোকার বড় ছেলে প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযুদ্ধা ফরিদ উদ্দিন, জাতীয়তাবাদী তাঁতী দলের যুগ্ম আহ্বায়ক কাজী মনিরুজ্জামান মনির, তেজগাঁও থানা বিএনপির সহ-সভাপতি হাফিজুর রহমান কবির, কোতোয়ালি থানা কৃষকদলের সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মোফাজ্জল হোসেন হৃদয়, কৃষকদলের রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ ও আব্দুল্লাহ আল নাঈম প্রমুখ।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন