স্বৈরাশাসনের বিরুদ্ধে সংগঠিত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত শহীদ নূর হোসেনকে ইয়াবাখোর ও ফেনসিডিলখোর বলে অভিহিত করেছেন স্বৈরাশাসক হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদের জাতীয় পার্টি-জাপার মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গা।
রবিবার (১০ নভেম্বর) দুপুরে জাপা চেয়ারম্যানের বনানী অফিস মিলনায়তনে জাপা মহানগর উত্তরের আয়োজনে ‘গণতন্ত্র দিবস’ উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
শহীদ নূর হোসেনকে নিয়ে জাপা মহাসচিব বলেন, ‘নূর হোসেন ইয়াবাখোর, ফেনসিডিলখোর ছিলেন। যারা গণতন্ত্রের গ ও বুঝে না, সেই অ্যাডিক্টেড ছেলেকে নিয়ে নাচানাচি করছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। তাদের কাছে ইয়াবা-ফেনসিডিলখোর ও ক্যাসিনো ব্যবসায়ীদের গুরুত্ব বেশি। এরশাদ সাহেবের কাছে এরা কোনো গুরুত্ব পায়নি।’
এরশাদকে গণতন্ত্রের ধারক-বাহক দাবি করে রাঙ্গা বলেন, ‘এমপি ও মন্ত্রীদের বাড়িতে ডাকাত ও খুনিদের আশ্রয়স্থল হয়েছিল বলেই সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুস সাত্তার দেশকে বাঁচাতে এরশাদকে দায়িত্ব দেন। এরশাদ ছিলেন গণতন্ত্রের ধারক-বাহক।’
নূর হোসেনের হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে তিনি আরও বলেন, ‘পুলিশ গুলি করল সামনে থেকে আর ঘুরে গিয়ে পেছন থেকে লাগল। কি হাস্যকর যুক্তি। তখন তো একজন মারা গেছে, এখন প্রতিদিনই মানুষ মরছে।’
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের সরকারের সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্বজিৎ ও আবরারকে হত্যা করা না হলে বলতে পারতাম গণতন্ত্র রয়েছে। শিক্ষককে আজ পানিতে ফেলে দেয়া হচ্ছে। ছাত্ররা জাবি ভিসির পদত্যাগের জন্য আন্দোলন করছে। গণতন্ত্র আজ সুন্দরবনে নির্বাসনে আছে।’
সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বৈরাচারী শাসক বলে মন্তব্য করে জাপা মহাসচিব বলেন, ‘এরশাদ স্বৈরাচার ছিলেন না। খালেদা জিয়া স্বৈরাচার। খালেদা স্বৈরাচার হলে শেখ হাসিনাও স্বৈরাচার।’
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এই শরীক দলের মহাসচিব বলেন, ‘আওয়ামী লীগ বিএনপি গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে। ওদের মুখে গণতন্ত্র মানায় না। আগে গণতন্ত্র বুঝতে হবে। এই গণতন্ত্র মুখে দেয় নাকি মাথায় দেয়।’
উল্লেখ্য, আজ শহীদ নূর হোসেন দিবস, ১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর স্বৈরাশাসক এরশাদবিরোধী আন্দোলনে শহীদ হোন নূর হোসেন। নূর হোসেনের এই আত্মত্যাগ তৎকালীন স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রকামী মানুষের আন্দোলনকে বেগবান করে।
ওইদিন বিএনপি-আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে স্বৈরাশাসক বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো অবরোধের ডাক দেয়। সেদিন রাজধানীতে বিক্ষোভ মিছিল বের করে দলগুলো। এই মিছিলে ‘গণতন্ত্র মুক্তি পাক, স্বৈরাচার নিপাত যাক’ স্লোগান লিখে রাজপথে নেমে এসেছিলেন নূর হোসেন।
মিছিলটি ঢাকা জিপিও-র সামনে জিরো পয়েন্টের কাছাকাছি আসলে স্বৈরশাসকের মদদপুষ্ট পুলিশবাহিনীর গুলিতে নূর হোসেন, নুরুল হূদা বাবুল ও আমিনুল হূদা টিটু নিহত হোন। গুরুতর আহত হোন বহু আন্দোলনকারী।
শহীদ নূর হোসেনের রক্তদানের মধ্য দিয়ে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন তীব্রতর হয় এবং অব্যাহত লড়াই সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর স্বৈরাচারী সরকারের পতন ঘটে। দেশে কায়েম হয় দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন গণতন্ত্র।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন