আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে অনেকেই বিভিন্ন সময় অনেক আশা নিয়ে আলোকিত হন। কিন্তু তারা যেন ধুমকেতুর মত। হঠাৎ আলোর ঝলকানি দিয়ে তারা চলে যান। বিভিন্ন সময় আওয়ামী লীগে অনেক সম্ভাবনাময় নেতার জন্ম হয়েছে। কিন্তু তাদের পদস্থলন, আদর্শিক বিচ্যুতি বা অন্য কোন কারণে তারা ঝড়ে পড়ে গেছেন। এরকম নেতার সংখ্যা আওয়ামী লীগে কম নয়।
সাবের হোসেন চৌধুরীর কথাই বলা যায়। সাবের হোসেন চৌধুরী যেন হঠাৎ আলোর ঝলকানির মত। এলাম, দেখলাম, জয় করলামের মত। অচেনা একজন মানুষ হিসাবে ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে মনোনয়ন পেলেন। উপমন্ত্রী হলেন, ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডের সভাপতি হলেন এবং ২০০১ এর সময় আওয়ামী লীগের বিপর্যয়ের সময় আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক সচিব হলেন। কিন্তু তার কি স্থলন বা কি বিপর্যয় তা কেউ জানে না। বর্তমানে সংসদ সদস্য থাকলেও আওয়ামী লীগে তার রাজনীতির ভবিষ্যৎ অন্ধকারময়।
এরকম অনেক নেতার কথাই উল্লেখ করা যায়। সাম্প্রতিক সময় আওয়ামী লীগে যে শুদ্ধি অভিযান শুরু হয়েছে। সেই শুদ্ধি অভিযানে কিছু কিছু নেতাকর্মীর নাম এসেছে যাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছে। যদিও সে সমস্ত অভিযোগগুলো প্রমানিত হয়নি। কিন্তু এ সমস্ত অভিযোগে পাবলিক ‘ট্রায়াল’ হয়ে গেছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন। এজন্য তাদের রাজনৈতিক অভিষ্যতকে অন্ধকারচ্ছন্ন মনে করা হচ্ছে। এদের রাজনৈতিক ভবিষ্যত কি তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে আওয়ামী লীগ মহলে। এদের মধ্যের কয়েকজনকে নিয়েই এই প্রতিবেদন;
ওমর ফারুক চৌধুরী: যুবলীগের বর্তমান চেয়ারম্যান। প্রায় ১০ বছর যুবলীগের নেতৃত্বে ছিলেন এক কর্তৃত্বে। শেখ হাসিনার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ এবং আস্থাভাজন ব্যক্তি হিসাবে তিনি পরিচিত ছিলেন। এজন্য দলের মধ্যে তার কথা শেষ কথা ছিল। কিন্তু আওয়ামী যুবলীগের কয়েকজন দুর্বৃত্ত এবং দুর্নীতিবাজের কারণে বিতর্কিত হয়েছেন ওমর ফারুক চৌধুরী। তাঁর ব্যাংক একাউন্টের হিসাব তলব করা হয়েছে, তাঁর বিদেশ যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এখন তিনি যুবলীগের চেয়ারম্যান থেকেও নেই, নিজেকে আড়াল করে রেখেছেন। যুবলীগের সম্মেলনের মাধ্যমে যুবলীগ থেকে যে তাঁর বিদায় হবে সেটা নিশ্চিত। কিন্তু রাজনীতি থেকে কি তাঁর বিদায় হবে? ওমর ফারুক চৌধুরীর রাজনৈতিক জীবনে যে অজ্ঞতা তা কি কাটবে?
মোল্লা আবু কাওসার: স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ছিলেন, স্বেচ্ছাসেবক লীগে তাঁর প্রভাবও ছিল নিরঙ্কুশ। মোল্লা আবু কাওসারও ক্যাসিনো বাণিজ্যের ঝড়ে ধরাশায়ী হয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধেও একটি ক্যাসিনো পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে। যদিও তিনি অস্বীকার করেছেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো যে, যেখানে ক্যাসিনো পাওয়া গেছে সেই প্রতিষ্ঠানের সভাপতি তিনি। স্বেচ্ছাসেবক লীগেরও সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু তাঁর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ কি তা কেউ জানে না।
নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন: নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন ওমর ফারুক চৌধুরী বা মোল্লা আবু কাওসার এর মত প্রভাবশালী নেতা না হলেও এমপি ছিলেন এবং যুবলীগের প্রভাবশালী নেতা ছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধেও দুর্নীতি এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযগ উঠেছে এবং তাঁর ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশন তদন্ত করছে। এই বাস্তবতায় নুরুন্নবী চৌধুরী শাওনের রাজনৈতিক কি জীবনের কি মৃত্যু ঘটবে?
শোভন-রাব্বানী: ছাত্রলীগে শোভন-রাব্বানীকে যখন সভাপতি সেক্রেটারি করা হয় তখন সবাই খুব উচ্ছ্বসিত ছিল এবং কেউ ভাবেনি এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যে তাদের এই পরিণতি বরন করতে হবে।
এই দুইজনই মেধাবি ছাত্র। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ থেকে তারা পাশ করেছিল। ছাত্রলীগের ইতিহাসে সাম্প্রতিক সময়ে এত মেধাবি সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক খুব কমই হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগে যখন তাদেরকে সরিয়ে দেয়া হয় তখন তাদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ কি তা কেউ জানে না। আদৌ তারা রাজনীতিতে টিকে থাকতে পারবেন কিনা সেটা বড় প্রশ্ন।
তবে রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই। রাজনীতিতে এরকম বিপর্যয়ের পরও ঘুরে দাঁড়ানোর নজির কম নয়। এখন দেখার বিষয় যারা এখন বিতর্কিত হয়েছেন, শুদ্ধি অভিযানে যারা ক্ষতবিক্ষত হয়েছেন তারা আবার রাজনীতিতে পুনর্বাসিত হতে পারেন কিনা, ফিরে আসতে পারেন কিনা।
বাংলা ইনসাইডার
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন