সংগঠনের গণতন্ত্র অনুযায়ী মাত্র তিন মাস পরই শেষ হচ্ছে যুবদলের বর্তমান কমিটির মেয়াদ। কিন্তু হঠাৎকরেই সংগঠনের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন নিয়ে শুরু হয়েছে আলোচনা। কাউন্সিলের মাধ্যমে নাকি সমাঝোতার ভিত্তিতে কমিটি গঠন হবে এই নিয়ে গত এক মাস ধরে সংগঠন এবং বিএনপির নেতাদের মধ্যে চলে দেনদরবার। তবে সবকিছু ছাপিয়ে সমঝোতার ভিত্তিতেই যুবদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন হচ্ছে।
জানা গেছে, আগামী ২৭ অক্টোবর সংগঠনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আগেই কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার ‘কঠোর’ নির্দেশনা দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। স্কাইপিতে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুবদলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকও করেন তিনি। এরপর থেকে কয়েক দফা বৈঠকে বসেন সংগঠনের নেতারা। নির্দেশনা অনুযায়ী কমিটি গঠনের খসড়া তালিকা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। আগের কমিটি ছিল ২৭১ সদস্য বিশিষ্ট। এবারও তারা ২৭১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠনে কাজ করছেন। আগামী ২০ অক্টোবরের মধ্যে কমিটির খসড়া তালিকা লন্ডনে পাঠানোর হবে বলে যুবদলের একাধিক নেতা পরিবর্তন ডটকমকে নিশ্চিত করেছেন।
বর্তমানে যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃত্বে রয়েছেন পাঁচজন। ২০১৭ সালের ১৬ জানুয়ারি রাতে সংগঠনের কেন্দ্রীয়, ঢাকা মহানগর উত্তর ও মহানগর দক্ষিণের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়।
কেন্দ্রীয় পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির নেতারা হলেন— সভাপতি সাইফুল আলম নীরব, সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, সিনিয়র সহ-সভাপতি মোর্ত্তাজুল করিম বাদরু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম নয়ন এবং সাংগঠনিক সম্পাদক মামুন হাসান।
৯০ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের নির্দেশনা থাকলেও তা মানতে ব্যর্থ হন নেতারা। শুধু তাই নয়, বিগত দিনে সক্রিয় আন্দোলনে যুবদলের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সংগঠনের কর্মীরাই।
যুবদল কর্মীদের দাবি, যুবদল বিগত দিনে খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে সক্রিয় কোনো আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি। ঘরোয়া কর্মসূচিতেই নেতাদের দেখা মেলে।
তবে যুবদলের দায়িত্বপ্রাপ্তদের দাবি, সারাদেশে ৮২টি ইউনিট রয়েছে। এর মধ্যে ৮০টির কমিটি গঠন করা হয়েছে। ৬৩টি কমিটি এর মধ্যে পূর্ণাঙ্গ করা হয়েছে। নানা প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যেও যুবদল তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে।
সর্বশেষ গত ৯ অক্টোবর রাতে যুবদলের কেন্দ্রীয় ও মহানগরীর নেতাদের সাথে স্কাইপে বৈঠক করেন তারেক রহমান। বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা শেষে আগামী ২০ অক্টোবরের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা জমা দেয়ার নির্দেশ দেন তিনি। তবে এই পূর্ণাঙ্গ কমিটির মেয়াদ শেষ হবে ২০২০ সালের ১৬ জানুয়ারি। এরপর কাউন্সিলের মাধ্যমে যুবদলের নতুন নেতা নির্বাচন করার নির্দেশনাও দেন তারেক রহমান।
বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা জানান, কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার পর ফের শীর্ষ নেতাদের সাথে কথা বলবেন তারেক রহমান। সেদিন তিনি পরবর্তী করণীয় এবং সংগঠন পরিচালনায় দিক নির্দেশনা দেবেন। কমিটি ঘোষণার পর বিভাগীয় পর্যায়ে প্রতিনিধি সম্মেলন করা হবে। পূর্ণাঙ্গ কমিটির মেয়াদ কতদিন হবে তারেক রহমান সে বিষয়ে কিছুই বলেননি। অতি অল্প সময়ের জন্য এই কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা হচ্ছে।
জানাতে চাইলে যুবদল সভাপতি সাইফুল আলম নীরব পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘আমরা পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন নিয়ে কাজ শুরু করেছি। খুব শিগগিরই কমিটি গঠন করা হবে।’
কমিটির মেয়াদই কতদিন হবে? প্রশ্নর জবাবে নীবর বলেন, ‘আসলে কোনো টাইমফ্রেম দিয়ে তো আর রাজনীতি হয় না। আমরা চেষ্টা করছি সংগঠনে গতিশীল নেতৃত্ব দেয়ার জন্য। কতদিনের জন্য কমিটি গঠন করা হবে তা আগে থেকেই বলা যাবে না।’
যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাহ উদ্দিন টুকু পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘দ্রুত সময়ের মধ্যে কমিটি গঠন করা হবে এবং এ মাসের মধ্যেই।’
তিন মাস আগে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা প্রসঙ্গে টুকু বলেন, ‘আসলে এখানে আমাদের কিছু করার নাই। বিএনপি থেকে যে নির্দেশনা আছে, সেইভাবে আমরা কাজ করছি।’
যুবদল এবং ছাত্রদলের সাবেক নেতাদের সংগঠনে অন্তর্ভুক্ত করে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করে হবে বলেও জানান টুকু।
এছাড়া যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোর্ত্তাজুল করিম বাদরু পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘নানা প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যেও আমরা সারাদেশে ৮২টি ইউনিটের মধ্যে ৮০টি কমিটি গঠন করেছি। এরমধ্যে ৬৩টি কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা হয়েছে। এছাড়া ঢাকা মহানগরীসহ বিভাগ ও উপজেলায় অনেক কমিটি দেয়া হয়েছে। কেউ যদি বলে কমিটি ব্যর্থ হয়েছে, এর কী জবাব দিব? সবাই দেখেন আমরা কি করেছি?
যুবদলে কোনো সক্রিয় আন্দোলনে ছিল না, ঘরোয়া কর্মসূচি পালন করেছে এটা ঠিক নয় বলেও মনে করে বাদরু।
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের ১৬ জানুয়ারি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নির্দেশে তিন বছরের জন্য বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়। একইসঙ্গে যুবদল ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণের ৫ সদস্য বিশিষ্ট আংশিক কমিটি তিন বছরের জন্য অনুমোদন করেন খালেদা জিয়া।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন