আওয়ামী লীগে শুদ্ধি অভিযান, আবরার হত্যাকাণ্ড, পেঁয়াজের দামে উর্ধ্বগতি এবং প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক ভারত সফরের পর হঠাৎ করেই রাজনৈতিক অঙ্গনে জাতীয় সরকারের গুঞ্জন উঠেছে। আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী একাধিক নেতা বলেছেন, এটা নিছক গুজব, এর কোনও ভিত্তি নেই। এ ধরণের জাতীয় সরকারের চিন্তা ভাবনা আওয়ামী লীগের মাথায় নেই। কারা কীভাবে এ ধরণের গুজব ছড়াচ্ছে সেটা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতারা। কিন্তু আওয়ামী লীগ যতই অস্বীকার করুক না কেন রাজনৈতিক অঙ্গনে জাতীয় সরকারের গুঞ্জন ডালপালা মেলছে।
বিভিন্ন রাজনৈতিক আলোচনার টেবিলে জাতীয় সরকারের ইস্যুটি এখন উঠে আসছে। অনেকেই বলছেন যে, সরকারের মধ্যে এরকম একটি চিন্তা-ভাবনা আছে। যেহেতু দেশে শুদ্ধি অভিযান, সৎ এবং সুস্থধারার রাজনীতিকে বিকশিত করা এবং দুর্বৃত্তায়ন-দুর্নীতি বন্ধ করার জন্য আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিয় সরকার গঠনের মতো একটা চমক তৈরি করতে পারেন।
গত ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর থেকে শেখ হাসিনা অন্যরকম ভাবমূর্তি নিয়ে নিজেকে উপস্থাপন করছেন। তিনি দলের উর্ধ্বে উঠে গেছেন। দেশের মঙ্গলকামীতায় তার প্রধান লক্ষ্য হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে। একারণেই তিনি আওয়ামী লীগের দুর্নীতিবাজ, টেন্ডারবাজসহ নানা অপকর্মে জড়িত নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাগ্রহণে ন্যূনতম কার্পণ্য করেননি। গত ১৪ সেপ্টেম্বর দলের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে তিনি স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন যে, দুষ্ট গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল ভালো। যারাই দুর্নিতি করবে তাদেরকে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। শেখ হাসিনার এই কঠোর অবস্থানের কারণে আওয়ামী লীগ এখন একটা টালমাটাল অবস্থা পার করছে। দলে এখন একটা অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। এ কারণেই জাতীয় সরকারের বিষয়টি সামনে এসেছে।
একাধিক সূত্র বলছে যে, শুদ্ধি অভিযানের একটি পর্যায়ে আওয়ামী লীগের আরও গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রভাবশালী নেতৃত্ববৃন্দের বিরুদ্ধে যখন দুর্নীতি, দুর্বৃত্তায়নের অভিযোগ আসবে তখন শেখ হাসিনা হয়তো দুর্নীতিমুক্ত সততার রাজনীতি প্রতিষ্ঠার জন্য জাতীয় সরকার গঠন করতে পারেন।
অন্য একটি সূত্র বলছে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনটা যেন গোটা জাতি জাতীয়ভাবে উদযাপন করতে পারে সেজন্য একটি জাতীয় সরকার কাঠামোর পরিকল্পনা এগুচ্ছে। যদিও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এ ধরণের কোন উদ্যোগ বা পরিকল্পনার কথা স্বীকার করা হয়নি। তবে রাজনৈতিক অঙ্গনে, বিশেষ করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের একটি অংশ বামমোর্চাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বর্তমান সময়কে সংকটকাল বলছে। এই সংকটকালে একটি জাতীয় সরকার দাবি উত্থাপিত করছে।
অবশ্য জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না প্রকাশ্যে বলেছেন, বর্তমান সংসদ ভেঙে দিয়ে নতুন নির্বাচন দিতে হবে। একই বক্তব্য দিয়েছেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন। তবে সংসদ ভেঙ্গে দেওয়া বা নতুন নির্বাচন দেওয়াকে বাস্তব সম্মত মনে করছেন না রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা মনে করছেন যে, রাজনীতিতে বর্তমানে যে শুদ্ধি অভিযান চলছে সেই আলোকে সৎ মানুষদের নিয়ে জাতীয় সরকার গঠনের আইডিয়াটা একেবারে মন্দ না। এই হিসাবে বেশ কিছু ব্যক্তির নাম সামনে এসেছে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে ড. কামাল হোসেন কিংবা মাহমুদুর রহমান মান্না আবার বাম মোর্চা থেকে মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, ১৪ দল থেকে রাশেদ খান মেনন, জাতীয় পার্টির জিএম কাদেরসহ যারা স্বচ্ছ ইমেজের আছেন তাদেরকে নিয়ে একটি সর্বদলীয় সরকার গঠনের নকশা আঁকছেন অনেকেই। তবে এই ধরনের জাতীয় সরকার কি গুরুত্ব বহন করবে সেই সম্পর্কে কিছু বলছেন না।
আওয়ামী লীগের একজন শীর্ষ নেতা বলেছেন যে, বিভিন্ন সময় বাজারে রাজনৈতিক গুজব আসে। বাঙালিরা যেহেতু রাজনৈতিক আলাপচারিতা পছন্দ করে সেজন্যই হয়তো জাতীয় সরকারের বিষয়টি সামনে এসেছে। তিনি বলেন যে, আওয়ামী লীগের কিছু কিছু ব্যক্তির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু এখনো দেশপ্রেমিক এবং সৎ ব্যক্তিরাই আওয়ামী লীগে বেশি। কাজেই আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা এখন জাতীয় সরকার গঠনের কোন চিন্তাভাবনা করছেন না বলেই জানিয়েছেন।
অনেকেই মনে করছেন যে, পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের পর থেকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে দুর্বৃত্তায়ন এবং দুষ্টু চক্রের যে প্রভাব শুরু হয়েছে সেটা থামানোর প্রাথমিক উদ্যোগ হিসাবে আওয়ামী লীগে শুদ্ধি অভিযান শুরু হয়েছে। সেই রুপ জাতীয় সরকার নিতে পারে বলেও তারা মনে করেন।
বাংলা ইনসাইডার
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন