অবশেষে জামায়াতে ইসলামীকে সঙ্গে নিয়ে জাতীয় মুক্তিমঞ্চের আহ্বায়ক ও এলডিপি সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ ঘর থেকে বের হয়ে রাজপথে সক্রিয় হতে সাধারণ মানুষকে আহ্বান জানিয়েছেন। বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) বিকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের মাওলানা আকরাম খাঁ হলে দলের পক্ষ থেকে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই আহ্বান জানান।
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম উপস্থিত নেতাদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। সংবাদ সম্মেলনে অলি আহমদের ডানপাশে মুক্তিযোদ্ধা ও কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম এবং বাম পাশে ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির মিয়া গোলাম পরওয়ার।
সংবাদ সম্মেলনে অলি আহমদ বলেন, ‘‘আপনাদের অবগতির জন্য বলতে চাই, কিছুদিন আগে আমরা ঐক্য করেছি। ২০ দলীয় জোটের এক নেতা স্টেটমেন্ট দিয়েছিলেন যে তাকে ‘অনেক অনুরোধ করা হয়েছে, আসার জন্য, কিন্তু তিনি আসেননি।’ আমরা আপনাদেরকে এটাই বলতে চাই, কোনও ধান্দাবাজকে আমরা এই মঞ্চে আসতে দেবো না। যারা এসেছে, তারাই থাকবে। এরপর যদি কাউকে আসতে হয়, এখন যারা মঞ্চে আছে এই দলগুলোর অনুমতি ছাড়া মঞ্চে তাদেরকে বসতে দেওয়া হবে না। সবচেয়ে বড় কথা ধান্দাবাজ ও রাজনৈতিক সাইনবোর্ডধারী কোনও দলকে এই মঞ্চের সদস্য হিসেবে গ্রহণ করা হবে না।’’
অলি আহমদ বলেন, ‘আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছি। একটাই লক্ষ্য ছিল, দেশকে স্বাধীন করা। আজকে দেশের দুর্দিন। এই দুর্দিনে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমাদের দায়িত্ব রয়েছে, জনগণের সামনে বিপদগামী সরকারের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে তুলে ধরা এবং যত দ্রুত সম্ভব তাদেরকে ক্ষমতা থেকে বিদায় করা। জাতীয় মুক্তিমঞ্চের পক্ষ থেকে আমি বলতে চাই, মেধাবীছাত্র আবরার ফাহাদের নির্মম, নির্দয় ও অমানবিক হত্যাকাণ্ডের আমরা তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানাচ্ছি। জাতিকে মেধাশূন্য করা সরকারের একটি নীলনকশা। অন্যথায় বর্তমান সরকার কখনও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে অদক্ষ ব্যক্তিদেরকে শিক্ষক বা ভিসি হিসেবে রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ দিতো না। এছাড়া বিরোধী দলগুলোকে শায়েস্তা করার জন্য তারা তাদের ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছে। ধান্দাবাজি এবং গুণ্ডামি করার পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেরা রাজনৈতিক দলের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।’
অলি আহমদের দাবি, ‘অদক্ষ শিক্ষকদেরকে চাকরি থেকে বের করে দিতে হবে। দুর্নীতিবাজ ভিসিদেরকে গ্রেফতার ও শাস্তির আওতায় আনতে হবে। লেজুড়ভিত্তিক রাজনৈতিক দলে তরুণ ছেলেমেয়েদের ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। লেজুড়ভিত্তিক রাজনীতি এখন পৃথিবীর কোথাও নেই। আমরা আশা করি, এই ব্যাপারে সরকার সিদ্ধান্ত নেবে।’
ক্যাসিনো ব্যবসার সঙ্গে জড়িত আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকে গ্রেফতার করা হয়নি দাবি করে অলি আহমদ বলেন, ‘‘গ্রেফতার হওয়া আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, ‘তারা মন্ত্রীকে মার্সিডিজ গাড়ি দিয়েছেন, বস্তায়-বস্তায় টাকা দিয়েছেন। অনেক মন্ত্রী ও বড়-বড় নেতা শামিমের টাকার ভাগ পেয়েছেন। এখনও তারা কেন গ্রেফতার হচ্ছেন না?’’
গ্রেফতার হওয়া ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট প্রসঙ্গে অলি আহমদ বলেন, ‘সম্রাট এখন ভিআইপির মর্যাদায় চিকিৎসা নিচ্ছে। এরকম একজনের জন্য বড়-বড় চিকিৎসকদের দিয়ে মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। উচিত ছিল ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী গলা পর্যন্ত মাটির নিচে রেখে জনগণকে পাথর নিক্ষেপ করতে দিতে। তারপরও তার পাপ মোচন হবে না।’
অলি আহমদ আরও বলেন, ‘পত্রপত্রিকায় দেখেছি ২৭ জন এমপিকে গোয়েন্দা সংস্থা নজরদারিতে রেখেছে। এখনও সরকার তাদের ব্যাপারে কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি। আমাদের দাবি থাকবে, এ ধরনের ব্যক্তিদেরকে গ্রেফতার করে তাদের লুটের টাকা উদ্ধার করে বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা করা হোক। আমরা আশা করবো, জনগণ ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই সরকার এবং আওয়ামী লীগের অপকর্মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করবে, ছাত্রদের হাতকে শক্তিশালী করবে, আগামী প্রজন্মকে রক্ষা করবে। মনুষ্যত্ব ফিরিয়ে আনতে হবে, এই সরকারের হাত থেকে মুক্ত করতে হবে। প্রয়োজন সৎ ও শিক্ষিত নেতৃত্ব এবং জনগণের ঐক্য। জাতি আজ অতিষ্ঠ, তাহলে কেন অপেক্ষা? ঘর থেকে বের হন, শান্তিপূর্ণ ও আইন অনুযায়ী প্রতিবাদ করুন।’
প্রসঙ্গত, ২৭ জুন জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘জাতীয় মুক্তিমঞ্চ’র ব্যানারে নতুন জোটের আত্মপ্রকাশ ঘটান অলি আহমদ। আত্মপ্রকাশকালে তিনি বলেছিলেন, ‘১৯৭১ সালের জামায়াত আর ২০১৯ সালের জামায়াত এক নয়। দেশকে তারা অনেক ভালোবাসে,তাদের মধ্যে অনেক সংশোধনী এসেছে।’ এর আগের মাসে অলি আহমদের নতুন জোটের বিষয়ে আলোচনা শুরু হওয়ার পরই বাংলা ট্রিবিউন জানায়, এই উদ্যোগের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামী আছে। ‘জাতীয় মুক্তিমঞ্চ’ গঠনের তিন মাস পর আজ বৃহস্পতিবার প্রকাশ্যে মঞ্চের অনুষ্ঠানে উপস্থিত হলেন জামায়াতের প্রভাবশালী নেতা মিয়া গোলাম পরওয়ার।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন