বুয়েটছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডসহ ছাত্রলীগের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডের জন্য সংগঠনটির ‘সাংগঠনিক নেত্রী’ হিসেবে শেখ হাসিনা দায় এড়াতে পারেন না বলে মন্তব্য করেছেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ।
তিনি বলেছেন, “একজন মন্ত্রী পরিষ্কারভাবে বলেছেন প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছা ছাড়া বাংলাদেশে কিছু হয় না। যদি তাই হয়, ছাত্রলীগের নেতারা তো পরিষ্কারভাবে বলবে, আমাদের এই অধিকার দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
“কারণ এই ছাত্রলীগ গঠন ও নেতাদের নিয়োগ দেওয়া ও বরখাস্ত করার দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রীরই। তাহলে ছাত্রলীগের বর্তমান কার্যকলাপের দায়ও সরকার এবং প্রধানমন্ত্রীর।”
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে চাঁদা চাওয়ার জন্য সমালোচনার মুখে থাকা ছাত্রলীগ এখন ব্যাপক সমালোচনায় রয়েছে বুয়েটছাত্র আবরারকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায়।
আবরার হত্যাকাণ্ড নিয়ে সারাদেশে ক্ষোভ-বিক্ষোভের মধ্যে বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ‘নিপীড়নবিরোধী অভিভাবক, শিক্ষার্থী ও শিক্ষক’ ব্যানারে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ।
তিনি বলেন, সরকারের দায়িত্বে অবহেলার কারণে শুধু আবরারই খুন হয়নি, অনেক শিক্ষার্থীর জীবন নষ্ট হয়েছে।
“আইন-আদালত বলে বাংলাদেশে এখন কোনোকিছু কাজ করে না। বাংলাদেশে কোনো প্রতিষ্ঠান কাজ করে না।”
তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা কমিটির সদস্য সচিব আনু মুহাম্মদ বলেন, “যে ক্ষমতাসীনরা উপাচার্য, প্রভোস্ট, এবং ছাত্র-তরুণদের বিষাক্ত করে নিজেদের ক্ষমতা, আধিপত্য, সাম্রাজ্যবাদী আধিপত্য, দেশের সম্পদ পাচারের ব্যবস্থাকে পাকাপোক্ত করতে চায়, দেশের মানুষকে নিরাপত্তাহীনতার দিকে ঠেলে দিতে চায়, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলাটাই হচ্ছে শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের দায়িত্ব। আর সেই প্রশ্ন তোলার রাজনীতি ছাড়া বাংলাদেশের কোনো ভবিষ্যৎ নেই।”
সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, “আমরা লেজুড়বৃত্তির রাজনীতিতে চলে গেছি, দলকানা রাজনীতিতে চলে গেছি। বিবেক এবং সততাকে অবহেলা করে ব্যক্তিগত লোভ-লালসা, ব্যক্তিগত সুবিধার দিকে চলে গেছি। ফলে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মর্যাদা হারিয়ে গেছে।
“প্রত্যেক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের টর্চার সেলগুলোতে নির্যাতিত হয়ে ছেলেদের মেডিকেলে গিয়ে ভর্তি হতে হয়। আজকের সমাবেশের পরেও এই টর্চার রুমগুলো উঠে যাবে না, হলগুলো থেকে গণরুমের অত্যাচার বন্ধ হবে না।”
এই অবস্থা থেকে মুক্তির পথ খুঁজে নেওয়ার জন্য আত্মশক্তিতে বলীয়ান হয়ে প্রতিবাদ করতে শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানান এই শিক্ষক।
সমাবেশে আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, “যে বড় ভাইদের কথা ছিল ছোটদের আগলে রাখা, তারাই আজ আবরারকে খুন করেছে। এটি কেন হল? আবরারের পোস্টে তাদের কী ক্ষতি হয়েছিল? বরং আবরারকে হত্যার মাধ্যমে স্বাধীন মত প্রকাশ ক্ষতিগ্রস্ত হল।”
প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক ভারত সফরে স্বাক্ষরিত চুক্তির সমালোচনা করে ফেইসবুকে পোস্ট দিয়েছিলেন আবরার; তারপরই ছাত্রলীগের নেতারা তাকে ডেকে নিয়ে পেটান বলে অভিযোগ উঠেছে।
বুয়েট কর্তৃপক্ষের সমালোচনা করে ব্যারিস্টার বড়ুয়া বলেন, “যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, প্রক্টর এবং প্রভোস্টগণ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা না দিতে পারেন, তাহলে কে বলেছে আপনাদের দায়িত্ব নিতে? কেউ তো আপনাদের পায়ে ধরেনি।”
সমাবেশে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসিফ নজরুল,অধ্যাপক কাবেরী গায়েন, অভিভাবক রাফিজা শাহিন, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিউলী সবুর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক তানজীমউদ্দিন খান, আবদুল মান্নান, শাওন্তী হায়দার, কাজলী সেহরীন ইসলাম, মার্জিয়া রহমান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আল রাজী, ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুর, ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি গোলাম মোস্তফা, ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক অনিক রায়, শিক্ষার্থী অদিতি রায়, অভিভাবক নাজমা বেগম,ঢাবির শামসুন নাহার হলের সংস্কৃতিক সম্পাদক অরুণিমা তাহসীন উপস্থিত ছিলেন। সমাবেশ সঞ্চালনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক সামিনা লুৎফা।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন