এ এক ভার্চ্যুয়াল সম্রাট। রাজ্য ছিল, সম্রাজ্য ছিল, প্রজা ছিল, সৈন্য ছিল। কিন্তু আসল মহারাজার সৈন্যদের আক্রমণে মুহূর্তেই সম্রাট হয়ে গেছে মুকুটহীন। এখন রাজ্য, সম্রাজ্য, প্রজা, সৈন্য কিছুই নেই, সব তচনচ হয়ে গেছে। পাশে নেই সুবিধাভোগীরাও। বলছিলাম ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটের কথা।
দুর্নীতি, মাদক-সন্ত্রাস, ক্যাসিনো ও অপকার্মের বিরোধী চলমান শুদ্ধি অভিযানের ১৮ দিন পর আইনশৃংখলা বাহিনীর হাতে আটক হন ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট। আইনশৃংখলা বাহিনীর হাতে আটক হওয়ায় পরপরই সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে সম্রাটকে। রাজধানীর কাকরাইলে ‘ভূইয়া ম্যানশন’ ছিল ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটের কার্যালয়।
ওই কার্যালয়ে সংগঠনের বর্তমান ও সাবেক নেতাকর্মী ও সুবিধাভোগীদের পদচারণা লেগেই থাকত। আওয়ামী লীগের অনেক প্রভাবশালী নেতারই ওই কার্যালয়ে যাতায়াত ছিল বলে জানা গেছে। মাঝে মধেই দেখা যেত চলচ্চিত্র জগতের তারকাদেরও। তবে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের দু-এক দিন পর থেকে ওই কার্যালয় ফাঁকা হতে শুরু করে। সম্রাটকে গ্রেফতারের পর ওই কার্যালয়ে শূন্যতা বিরাজ করছে। এতদিনের সুবিধাভোগীরও দিয়েছেন গাঁ ঢাকা। সবাই এখন লাপাত্তা। সম্রাট আটক হওয়ার আগে কয়েকজনকে কার্যালয়ের আশপাশে দেখা গেলেও, সম্রাট আটক হওয়ার পর দেখা যায়নি কাউকে।
ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে ‘ক্যাসিনো সম্রাট’ হিসেবে আলোচনায় আসেন দক্ষিণ যুবলীগের এ নেতা। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া ও জি কে শামীমকে গ্রেফতারের পর সম্রাটকে গ্রেফতারের জোর দাবি ওঠে। অভিযান চলাকালেও কয়েকদিন কাকরাইলের কার্যালয়ে অবস্থান করেন সম্রাট।
র্যাবের হাতে আটক হওয়ার এক সপ্তাহ আগে কাকরাইলের কার্যালয় ছেড়ে অজ্ঞাত স্থানে আত্মগোপনে যান সম্রাট। সে সময়ে কার্যালয়ের কয়েকজন কর্মচারী ছাড়া সংগঠনের নেতা-কর্মীদের তেমন ভিড় চোখে পড়েনি। সম্রাটকে ব্যবহার করে সুবিধা নিতেন অনেকে। আড্ডা দিতেন তার অফিসে। কিন্তু তার বিপদে এসব সুবিধাভোগীদের পাশে নেই কেউ।
সম্রাট সম্পর্কে জানা গেছে, তার জন্ম ফেনীর পরশুরামে। তার বাবা ফয়েজ আহমেদ ছিলেন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী। বাড়ি পরশুরামে হলেও সেখানে তাদের পরিবারের কেউ থাকেন না। বাবার চাকরির সুবাদে ঢাকায় বড় হন সম্রাট। তার বাবা অনেক আগেই মারা গেছেন। মা বড় ভাইয়ের সঙ্গে ঢাকায় থাকেন। ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের পর সম্রাটের পরিবারের সবাই গা ঢাকা দেন। সম্রাট থাকতেন মহাখালীর বাসায়। সেখানে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে গত কয়েক দিন ধরে তিনি বাসায় ছিলেন না।
সম্রাট ৯০ দশকে যুবলীগের রাজনীতিতে জড়ান। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। সবশেষ কাউন্সিলে তিনি যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি নির্বাচিত হন। আগের কমিটিতে তিনি ছিলেন একই ইউনিটের সাংগঠনিক সম্পাদক। দক্ষিণ যুবলীগের প্রভাবশালী নেতা মিল্কীর হত্যাকাণ্ডের পর সম্রাটের আর পিছু তাকাতে হয়নি। মতিঝিল, ফকিরাপুল, পল্টন, কাকরাইল, বাড্ডা এলকায় অপরাধ জগতের একক আধিপত্য তৈরি করেন সম্রাট। তিনি ঢাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান আহমেদের সঙ্গে মিলে অপরাধ জগত নিয়ন্ত্রণ করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
সম্রাটের ঘনিষ্ঠ দুই সহচর হলেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক ও কাউন্সিল মমিনুল হক সাঈদ ও সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। যুবলীগের অপর প্রভাবশালী নেতা জিকে শামীমও সম্রাটকে অবৈধ আয়ের ভাগ দিতেন।
ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট ছিলেন ঢাকায় ক্ষমতাসীন দলের অন্যতম সক্রিয়কর্মী। ঢাকায় দলীয় সমাবেশগুলো সফল করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতেন তিনি। টাকা ও জনবল সরবরাহের কাজ করতেন সম্রাট। এসবের মাধ্যমে যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীর সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা বাড়তে থাকে। তিনি সম্রাটকে শ্রেষ্ঠ সংগঠক ঘোষণা করেন।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন