আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশে দলের বিভিন্ন পর্যায়ে চলছে শুদ্ধি অভিযান। অন্যায়কারী, দুর্নীতিবাজদের কোনোভাবে ছাড় দিতে রাজি নন তিনি। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ সভাপতি-সেক্রেটারিকে পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছেন অভিযোগ পেয়েই। বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) গ্রেফতার হয়েছেন যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ ভুঁইয়া। শোনা যাচ্ছে এ তালিকায় রয়েছেন আরও অনেক ‘রাঘব-বোয়াল’, যাদের শিগগিরই গ্রেফতার করা হতে পারে।
আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানায়, যুবলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের সাংগঠনিক দায়িত্বে থাকা শতাধিক নেতার নামে চাঁদাবাজি, অস্ত্রবাজি, দুর্নীতি, অনিয়মসহ বিভিন্ন গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ইতোমধ্যেই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
গ্রেফতার প্রক্রিয়ায় এরই মধ্যে মাঠে নেমেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ক্যাসিনো চালানোর অভিযোগে বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ ভুঁইয়াকে গ্রেফতার করা হয়। অভিযোগের তালিকায় থাকা অন্যরাও আছেন গ্রেফতারের প্রক্রিয়ায়।
ওই সূত্রগুলো আরও জানায়, শুধু যুবলীগের নেতাকর্মীই নয়, শ্রমিক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী যাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, দুর্নীতি, অস্ত্রবাজিসহ বিভিন্ন অনিয়মের প্রমাণ রয়েছে তাদেরও তালিকা করা হয়েছে। এসব অভিযোগে তাদেরও গ্রেফতার করা হতে পারে। এদের ব্যাপারেও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে এরই মধ্যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) যুবলীগ নেতা খালিদ মাহমুদ ভুঁইয়াকে গ্রেফতার করার পর যুবলীগসহ দলের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। নিজেদের অতীত কর্মকাণ্ড নিয়ে অনেকেই আতঙ্কিত। খালিদ মাহমুদ ভুঁইয়ার ক্যাসিনো ও বাসায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর পরই যুবলীগের অনেক নেতা গা ঢাকা দিয়েছেন।
আওয়ামী লীগের একটি সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরে যুবলীগ, ছাত্রলীগ, শ্রমিক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ দলের বিভিন্ন সহযোগী সংগঠন ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বারবার সতর্ক করে আসছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু এরপরও কিছু নেতাকর্মী বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এই পরিস্থিতিতে দলে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে কঠোর অবস্থানে চলে গেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে এসব নেতাকর্মীদের চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগের বিষয়ে খোঁজ-খবর নিয়েছেন। তদন্তে এসব অভিযোগের প্রমাণও পেয়েছেন।
গত শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় তিনি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পদকের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগে তাদের পদ থেকে সরিয়ে দেন। এসময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুবলীগের কিছু নেতার চাঁদাবাজি ও অপকর্মের প্রসঙ্গ নিয়ে ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করেন। শুধু যুবলীগই নয়, আওয়ামী লীগসহ অন্য সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের অপকর্ম নিয়েও তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এর পরেই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের এক নেতা বাংলানিউজকে বলেন, যুবলীগসহ অন্য সংগঠনের যেসব নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে তাদের গ্রেফতারসহ আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আলোচিতরা গ্রেফতারের প্রক্রিয়ায় আছে। একজন গ্রেফতার হয়েছেন, আরও অনেকেই হবেন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন