আগামী ২৫ জুলাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার সুলতানপুর ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান পদের উপ-নির্বাচন। ১৯৯৪ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত প্রায় ২৫ বছর সুলতানপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদে ছিলেন ফিরোজুর রহমান ওলিও।
তিনি পদত্যাগ করে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে অংশ নেয়ায় পদটি শূন্য ঘোষণা করেন নির্বাচন কমিশন। আসন্ন নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ওলিও’র ছেলে শেখ ওমর ফারুক।
আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ ওমর ফারুক ছাড়াও শেখ মো. মহসীন (আনারস) , মো. সোহরাব খান (ঘোড়া), সোহরাব খানের ছেলে মো. সাকিরুল আলম খান (চশমা) স্বতন্ত্র প্রার্থী।
প্রতিদ্বন্ধী অন্য প্রার্থীদের অভিযোগের আঙ্গুল উপজেলা চেয়ারম্যান ফিরোজুর রহমান ওলিও’র দিকে। ফিরোজুর রহমান ওলিও গত ৩১ মার্চ আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী (আনারস প্রতীক) হিসেবে সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
উপজেলা নির্বাচনে ফিরোজুর রহমান ওলিও’র সঙ্গে তার ছেলে শেখ ওমর ফারুকও স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন। পরে অবশ্য প্রত্যাহার করে নেন। তবে বাবা বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় ওমর ফারুক নৌকার বিরোধিতায় মাঠ দাবড়ে বেড়িয়েছেন। এর ৪ মাস পর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদে ফারুক আওয়ামী লীগের মনোনয়ন এনে চমক সৃষ্টি করেন। দলের উপজেলা বা জেলা, কোনো পর্যায় থেকে ফারুকের নাম প্রস্তাব করা হয়নি বলে জানিয়েছে দলের সূত্রগুলো।
নির্বাচনে অংশ নেয়া অন্য প্রার্থীদের অভিযোগ, নৌকা প্রতীকের প্রার্থী শেখ ওমর ফারুকের বাবা ফিরোজুর রহমান ওলিও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান এবং একই সাথে প্রচুর অর্থবিত্তের মালিক। সেকারণে প্রশাসন ব্যবহার করে এবং টাকা ছড়িয়ে জয় ছিনিয়ে নেয়া হবে বলে ব্যাপক আলোচনা রয়েছে।
এরই মধ্যে ওলিও ভোটের মাঠে ছেলের প্রচারণায় জয় নিশ্চিত বলে বক্তব্য দেয়ার পাশাপাশি ইউনিয়নের প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় গিয়ে উপজেলা পরিষদ থেকে বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ করে দেয়ার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
প্রার্থী শেখ মো. মহসীন বলেন, তিনি (ফিরোজুর রহমান ওলিও) বিভিন্ন জায়গায় মিটিং করে মাইক দিয়ে বলছেন, আমি উপজেলা চেয়ারম্যান, আমার ছেলে ফেল করবে নাকি। প্রশাসন তার সঙ্গে আছে। এ কারণে ভোটাররা শঙ্কিত।
তবে ফিরোজুর রহমান ওলিও বলেছেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হবে। জনগণের জোয়ার দেখেই আমি বলছি আমার ছেলে পাস করবে।
স্বতন্ত্র প্রার্থী সোহরাব খান বলেন, ফারুক তার পোস্টারে লিখেছে ‘শেখ হাসিনা মনোনীত প্রার্থী’। আসলে কথাটা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত হওয়ার কথা। এতে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। উপজেলা বা জেলা থেকে তার নাম কেন্দ্রে পাঠানো হয়নি বলেই আমি জানি। তারপরও সে কিভাবে মনোনয়ন পেল সেটা কারো বোধগম্য নয়। কিন্তু তিনি (ফিরোজুর রহমান ওলিও) তার ছেলের জন্যে দলের মনোনয়ন নিয়ে এসে বললেন- ‘শেখ হাসিনাকে তো ইজ্জত দিতে হয়’। তখন তাকে বলি উপজেলা নির্বাচনে তো আপনি ‘আনারস’ দিয়ে ‘নৌকা’ ডুবাইছেন। এখন বলছেন নৌকার ইজ্জতের কথা। তিনি নির্বাচন সুষ্ঠু করার দাবি জানিয়ে বলেন একটা পক্ষতো পয়সাওয়ালা। সেটাই ভয়।
চেয়ারম্যান প্রার্থী শেখ ওমর ফারুক বলেন, আমরা আওয়ামী লীগ আগেও ছিলাম, এখনও আছি। প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন- দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে গিয়ে কেউ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন করলে দলীয় কোনো বাধা থাকবে না। সেজন্য আমার বাবা নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, আমি খুবই সাধারণভাবে চলাফেরা করি। আমাকে দেখে কেউ মনে করবে না আমি অর্থ-বিত্তের মালিক। আমরা এলাকার জন্য কী অবদান রেখেছি সেটা দেখেই জনগণ ভোট দেবে, অর্থ-বিত্ত থাকলেই যে ভোট দেবে এরকম মানুষ মনে করে না।
নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্যে মোট ৭ জন মনোনয়ন দাখিল করেছিলেন। এরমধ্যে মীর মো. মহসীন মিয়া, সুধীর চন্দ্র ঘোষ ও মো. জসিম উদ্দিন মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেন। এই ইউনিয়নের মোট ভোটার ২১ হাজার ২৯৪। এরমধ্যে পুরুষ ১০ হাজার ৯২৯ আর নারী ১০ হাজার ৩৬৫। ১০টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন