১৯৯৪ সালে পাবনার ঈশ্বরদীতে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও তৎকালীন বিরোধী দলের নেতা শেখ হাসিনাকে বহনকারি ট্রেনে বোমা হামলা ও গুলির মামলায় মৃত্যুদণ্ড পাওয়া ৮ জনসহ মোট ৪৩ জন খালাস চেয়ে হাইকোর্টে আপিল করেছেন।
রোববার (২১ জুলাই) হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ আবেদন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আসামিদের আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল।
পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ১ তারিখ এ মামলার সাক্ষী গ্রহণ শেষ হয়, ৩ তারিখ মামলার রায় ঘোষণা করেন। মাঝখানে ১দিন হাতে ছিল। এতে সহজে অনুমেয় রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠিকে খুশি করার জন্য এ রায় দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা মনে করি এটা জুডিশিয়াল কিলিংয়ের নামান্তর।
এ ঘটনায় স্বার্থসংশ্লিষ্ট সাক্ষীদের সাক্ষ্যের ভিত্তিতে রায় হয়েছে। স্বার্থসংশ্লিষ্টদের বাইরে কারো সাক্ষ্য নেওয়া হয়নি।
তিনি বলেন, আমার মক্কেলরা শুধুমাত্র ন্যায় বিচারই বঞ্চিত হয়নি, তাদের প্রতি অন্যায় করা হয়েছে, অবিচার করা হয়েছে। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি সুপ্রিমকোর্ট সকলের আশ্রয়স্থল। এখানে আমরা ন্যায় বিচার পাবো।
আপিলকারীদের মধ্যে ৮ জন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত, ২২ জন যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত এবং ১৩ জন ১০ বছর করে দণ্ডপ্রাপ্ত।
গত ৩ জুলাই এ মামলায় বিভিন্ন মেয়াদে ৪৭জনকে সাজা দেয় আদালত। পাবনার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক রোস্তম আলী ৯ জনের ফাঁসির আদেশ দেন। এছাড়া রায়ে ২৫ জনের যাবজ্জীবন, ১৩ জনের ১০ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ডের রায় হয়।
পাশাপাশি যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্তদের ৩ লাখ টাকা এবং ১০ বছরের সাজাপ্রাপ্তদের ১ লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়।
আসামিদের মধ্যে কারাগারে থাকা ৩২ জনকে আদালতে হাজির ছিলেন। পরে ১৪ জুলাই যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত আরও ৭ জন আত্মসমর্পণ করেন।
ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- এ কে এম আক্তারুজ্জামান, মো. জাকারিয়া পিন্টু, মোখলেছুর রহমান বাবলু, রেজাউল করিম শাহীন, শহীদুল ইসলাম অটল, আজিজুর রহমান ফড়িং, শ্যামল, মাহাবুবুর রহমান পলাশ ও শামসুল আলম। এদের মধ্যে ঈশ্বরদী পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া পিন্টু পলাতক রয়েছেন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর খুলনা থেকে ট্রেনে ঈশ্বরদী হয়ে সৈয়দপুরের দলীয় কর্মসূচিতে যাচ্ছিলেন তৎকালীন বিরোধীদলের নেত্রী শেখ হাসিনা।
তাকে বহনকারী ট্রেনটি ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংশন স্টেশনে প্রবেশের মুহূর্তে ওই ট্রেন ও শেখ হাসিনার কামরা লক্ষ্য করে গুলি চালায় দুর্বৃত্তরা। স্টেশনে যাত্রাবিরতি করলে আবারও ট্রেনটিতে হামলা চালানো হয়।
এ ঘটনায় পরবর্তীতে দলীয় কর্মসূচি সংক্ষিপ্ত করে শেখ হাসিনা দ্রুত ঈশ্বরদী ত্যাগ করেন। পরে ঈশ্বরদী রেলওয়ে জিআরপি থানার ওই সময়কার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বাদী হয়ে তৎকালীন ছাত্রদল নেতা ও বর্তমানে ঈশ্বরদী পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া পিন্টুসহ সাতজনকে আসামি করে মামলা করেন।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর পুলিশ মামলাটি পুনঃতদন্ত করে। তদন্ত শেষে নতুনভাবে স্থানীয় বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীসহ ৫২ জনকে এ মামলার আসামি করা হয়।
এদিকে মামলা করার পর ওই বছর কোনো সাক্ষী না পেয়ে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয় পুলিশ। কিন্তু আদালত ওই প্রতিবেদন গ্রহণ না করে অধিকতর তদন্তের জন্য তা সিআইডিতে পাঠান। পরে তদন্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে সিআইডি।
সারাবাংলা/
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন