বগুড়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের ভিপি নুরুল হক নুরের ওপর হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগের কর্মীরা। ইফতার অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বগুড়ায় এলে প্রথমে পুলিশ তাদের কর্মসূচি পালনে বাধা দেয়, পরে ছাত্রলীগ কর্মীরা ভিপি নুরসহ তার সহযোগি নেতাদের ওপর হামলা চালায়।
ছাত্রলীগ নেতারা দাবি করেন, শিবিরের নেতাকর্মীদের উদ্যোগে ওই ইফতার অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়।
হামলায় বগুড়ার দুই সংবাদকর্মীও ছাত্রলীগের মারধরের শিকার হন।
আহত নুরসহ চারজন বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতাল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে তাৎক্ষণিক ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেন।
রোববার বিকেলে বগুড়া শহরের সাতমাথা সংলগ্ন অ্যাডওয়ার্ড পৌর পার্কে অবস্থিত উডবার্ন পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনের সামনে হামলার ঘটনা ঘটে।
বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের পক্ষ থেকে উডবার্ন পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে ইফতার অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। পুলিশি বাধা ও ছাত্রলীগের হামলায় অনুষ্ঠান ভণ্ডুল হয়ে যায়।
বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ বগুড়া শাখার আহ্বায়ক রাকিবুল ইসলাম রাকিব জানান, তারা পৌর কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে ওই মিলনায়তনে ইফতার মাহফিলের আয়োজন করেছিলেন। সেখানে প্রধান অতিথি ছিলেন নুরুল হক নুর। দুপুরের পরপরই বগুড়া সদর থানা পুলিশ ও পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিএসবি) সদস্যরা ওই মিলনায়তনে গিয়ে অনুষ্ঠান বন্ধ করতে বলেন।
তিনি বলেন, পুলিশের কাছ থেকে আগাম অনুমতি না নেওয়ায় পুলিশ বাধা দেয়। কিছু পরই দুটি মাইক্রোবাস নিয়ে ভিপি নুর ও তার সফরসঙ্গীরা ওই মিলনায়তনে পৌঁছান। এসময় তারা পুলিশের সঙ্গে কথা বলতে গেলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হামলা চালায়।
‘এসময় ভিপি নুর ছাড়াও সফরসঙ্গীদের মধ্যে রাতুল, আপন ও ফারুক আহত হন। যমুনা টিভির ক্যামেরাপারসন শাহনেওয়াজ শাওন ও পুণ্ড্রকথা ওয়েব পোর্টালের আব্দুল আওয়ালও ছাত্রলীগ কর্মীদের মারপিটের শিকার হন’।
আহতদের বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে নেওয়ার পর প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। এরপর নুরুল হক নুরসহ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতারা বগুড়া ত্যাগ করেন।
বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. রোকেয়া সুলতানা অ্যানী জানান, তাদের আঘাত তেমন গুরুতর নয়। চিকিৎসা নিতে তারা হাসপাতালে আসার পর থেকেই তাড়াহুড়া করছিলেন। এসময় বগুড়া তাদের জন্য নিরাপদ নয় জানিয়ে দ্রুত চিকিৎসা শেষে ছেড়ে দিতে বলেন।
‘হাসপাতালে পৌঁছার ১০ মিনিটের মধ্যেই তারা হাসপাতাল ত্যাগ করেন’।
বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নাঈমুর রাজ্জাক তিতাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, রবিবার অ্যাডওয়ার্ড পার্কের দক্ষিণ পাশের টিটু মিলনায়তনে জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের ইফতার মাহফিল ছিলো। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সেখানে পৌঁছার পর জানতে পারে পার্কের ভেতরে উডবার্ন লাইব্রেরি মিলনায়তনে সাধারণ ছাত্রদের ব্যানারে শিবির ইফতার মাহফিল করছে।
‘ছাত্রলীগের কিছু কর্মী বিষয়টি নিশ্চিত হতে সেখানে যায়। তারা গিয়ে দেখে ঢাবি’র ভিপি নুরসহ ঢাকার কিছু ছাত্রনেতা সেখানে এসেছেন। তারা ভিপি নুরকে জানায় যে ছাত্র শিবিরের ইফতার মাহফিলে তিনি যেন অংশ না নেন। এসময় তিনি ছাত্রলীগের কর্মীদের সঙ্গে বাদানুবাদ শুরু করেন। এক পর্যায়ে সেখানে মারধরের ঘটনা ঘটে’।
বগুড়া সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক রেজাউল করিম রেজা জানান, পূর্বানুমতি না নিয়ে ওই মিলনায়তনে কর্মসূচি পালনের খবর জেনে পুলিশ সেখানে যায়। পুলিশ পৌঁছার আগেই সেখানে মারধরের ঘটনা ঘটে। বিক্ষুব্ধ কিছু ছাত্র তাদের মারপিট করেছে বলে পুলিশ জেনেছে। এ বিষয়ে কেউ অভিযোগ দায়ের করলে ব্যবস্থা নেয়া হবে’।
শনিবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়ও শিবির অপবাদে নুরের ইফতার অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেয় ছাত্রলীগ।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন