একাদশ জাতীয় নির্বাচন বিতর্কিতভাবে করার পর দেশে যে ধরনের আন্দোলন গড়ে উঠার কথা ছিল, তা গড়ে তুলতে নিজেদের রাজনৈতিক ব্যর্থতা স্বীকার করেছেন বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষনেতারা।
শনিবার বিকেলে সুপ্রিম কোর্টে নাগরিক ঐক্যের ইফতার ও আলোচনা সভায় দেয়া বক্তব্যে তারা এ ব্যর্থতা স্বীকার করেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন নাগরিক ঐক্যর আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না।
আলোচনায় গণফোরাম সভাপতি ও ঐক্যফ্রন্টের প্রধান নেতা ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘আজ সবাই ঐক্যর কথা বলেছেন। ঐক্য ছাড়া বিকল্প নেই। দেশের জনগণকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। সংবিধানের মধ্যে যে মৌলিক বিষয় রয়েছে, তার প্রথমটিই হচ্ছে গণতন্ত্র। দেশে গণতন্ত্র না থাকলে সংবিধান অকার্যকর হয়ে পড়ে। মানুষের মৌলিক অধিকার হরণ হয়।’
তিনি বলেন, ‘দেশে এখন যে শাসন ব্যবস্থা চলছে, তাতে মানুষের কোনো মৌলিক অধিকার নেই। এটা চলতে পারে না। কারণ দেশের মালিক জনগণ।’
ড. কামাল বলেন, ‘ইতিহাস বলে বাংলাদেশে এমন কোনো সমস্যা নেই যা জনগণ ঐক্যবদ্ধ হলে সমাধান করা যায়নি। স্বাধীনতার যুদ্ধেও আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে অসম্ভবকে সম্ভব করে স্বাধীনতা অর্জন করেছি। অর্থাৎ অসম্ভবকে সম্ভব করা যায়, এটা আমরা বারবার প্রমাণ করেছি।’
তিনি বলেন, ‘দেশের মালিক জনগণ। সংবিধানে আছে যারা নির্বাচিত তারা দেশে পরিচালনা করবেন। নির্বাচনের অর্থ হলো অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন। তাই অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিতরাই দেশ পরিচালনা করবে।’
অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব ও ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আজ যারা সরকারে বসে আছেন, তারা কেউ বাংলাদেশের জনগণের ভোটে নির্বাচিত হননি। তারা গায়ের জোরে ক্ষমতা দখল করে আছেন।’
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকেই সুপরিকল্পিতভাবে দেশের সংবিধান কেটে তছনছ করেছে। মানুষের মৌলিক অধিকার কেড়ে নিয়েছে। গণতন্ত্রের সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করেছে।’
সভাপতির বক্তব্যে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘আজ অনেকেই বলেন- নির্বাচনের পর আমরা আন্দোলনে ব্যর্থ হয়েছি। নির্বাচনের পরদিনই দেশে অন্তত হরতাল হওয়া উচিত ছিল, আমি এটা সমর্থন করি। কিন্তু, আমরা আন্দোলন গড়ে তুলতে পারিনি, এটাই সত্য। এটা আমাদের রাজনৈতিক ব্যর্থতা। তবে ভবিষ্যতে যে পারব না, তার কোনো মানে নেই।’
তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের পরদিনই আমি হরতালের প্রস্তাবক ছিলাম। আবার বিএনপি নেতা সালাম বলেছেন- তখন দিতে পারিনি বলে এখন দিতে পারব না? অবশ্যই পারব, কেন পারব না? অনেকগুলো ইস্যু আছে আমাদের সামনে। চিকিৎসার অভাবে মরতে বসা খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতেওতো হরতাল হতে পারে।’
ইফতার ও আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন- গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, অধ্যাপক ড. দিলারা চৌধুরী, গণফোরামের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মোহসীন মন্টু, নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক কমরেড সাইফুল হক, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান, জেএসডির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক রতন, বিকল্পধারার সভাপতি নুরুল আমীন বেপারী প্রমুখ।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন