চার এমপি শপথ নেওয়ার পর বিএনপি নেতা-কর্মীদের মনে আশার সঞ্চার হয়েছিল, সংসদে যাওয়ার সঙ্গে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির যোগসূত্র রয়েছে। কিন্তু প্রায় এক মাস হতে চলল, বেগম জিয়ার মুক্তির কোনো আভাসই পাওয়া যাচ্ছে না। নেই কোনো আন্দোলন কর্মসূচিও। এ নিয়ে চরম ক্ষুব্ধ ও হতাশ তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। বিএনপি নেতারা বলছেন, বেগম জিয়ার মামলা নিয়ে দিন দিন আরও জটিলতা তৈরি হচ্ছে। তবে কেন শপথ নেওয়া হলো, তা নিয়েও মিলছে না স্পষ্ট ব্যাখ্যা। এরপর স্থায়ী কমিটির কোনো বৈঠকও হয়নি। তাই দলের নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির নেতাদের কাছেও বিষয়টি অজানা।
বিএনপির দায়িত্বশীল একাধিক নেতা বলেন, সংসদে যাওয়া বা শপথ নেওয়ার সঙ্গে বেগম জিয়ার মুক্তির কোনো যোগসূত্র নেই। দলের মধ্যে ভাঙন সৃষ্টি হতে পারে এমন শঙ্কা থেকেই শপথের ব্যাপারে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাছাড়া রাজপথে বিএনপি গণতান্ত্রিক কোনো কর্মসূচি পালন করতে পারছে না। সরকার ও পুলিশ প্রশাসনের বাধা আসছে। সেক্ষেত্রে বিএনপিকে তো কোথাও না কোথাও কথা বলতে হবে। দলের চেয়ারপারসনের মুক্তি দাবি করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সংসদই উপযুক্ত জায়গা। সংখ্যায় কম হলেও পাঁচ-সাতজন যদি গণতন্ত্রের পক্ষে, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির পক্ষে জোরালো ভূমিকা পালন করেন, তাহলে সবার দৃষ্টি থাকবে গুটিকয়েক সংসদ সদস্যের দিকেই। এসব বিবেচনায় বিএনপির ছোট প্রতিনিধি দল সংসদে গেছে। এ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘সংসদে যাওয়া বা এমপিদের শপথের সঙ্গে দলের চেয়ারপারসনের মুক্তির কোনো যোগসূত্র নেই। সংসদে যাওয়া হয়েছে রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে।’ জানা যায়, বিএনপির ছোট একটি অংশ জিয়া পরিবারের সদস্য মরহুম আরাফাত রহমান কোকোর পুত্রবধূ শর্মিলা রহমান সিঁথিকে নিয়েও আলাদা রাজনৈতিক প্লাটফর্ম তৈরি করার কথা ভাবছিলেন। তাদের মধ্যে একাধিক সংসদ সদস্যও রয়েছেন। তাদের শপথে বাধা এলে বিএনপির আলাদা একটি প্লাটফর্ম তৈরি করার শঙ্কায় ছিলেন তারেক রহমান। তাই তিনি দলে ফাটল ধরার আগেই সংসদে যাওয়ার পক্ষে অবস্থান নেন।
বিএনপির অন্য একটি সূত্র জানায়, চার এমপির শপথের সঙ্গে বেগম জিয়ার মুক্তির একটি সম্ভাবনাও ছিল। এ নিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথাবার্তাও হচ্ছিল। কিন্তু হঠাৎই সরকারের নীতিনির্ধারকরা বেঁকে বসেন। ফলে ওই সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে যায়। এখন নতুন করে আবারও পর্দার অন্তরালে আলাপ-আলোচনার চেষ্টা চলছে। কিন্তু এখনো সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ইতিবাচক সাড়া মেলেনি। বিএনপির সংশ্লিষ্টরা জানান, বেগম জিয়াকে যে কোনো প্রক্রিয়ায় মুক্ত করতে চান তারা। জামিনে মুক্তির কথা বললেও এখন প্যারোলে মুক্তির পক্ষে দল ও পরিবারের সদস্যরা। পরিবারের সদস্য ও দলের নেতারা বলছেন, বেগম জিয়া শারীরিকভাবে খুবই অসুস্থ। তিনি হাত-পা নাড়াতে পারছেন না। জয়েন্টে জয়েন্টে ব্যথা। কোনো কিছু খেতেও পারছেন না। এ অবস্থায় তার উন্নত চিকিৎসা জরুরি। সরকার যে কোনো প্রক্রিয়ায় মুক্তি দিলে বেগম জিয়া বিশেষায়িত কোনো হাসপাতালে চিকিৎসা নেবেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বেগম জিয়ার শারীরিক অবস্থা এতটাই খারাপ যে, তিনি হাত ও পা ঠিকমতো নাড়াতে পারেন না। ডায়াবেটিসের মাত্রাও অনেক বেশি। এ ছাড়া তার বয়সও হয়েছে। এ কারণেও তার মুক্তি দেওয়া উচিত। তাই আমরা যে কোনো প্রক্রিয়ায় মুক্তি চাই।’
এদিকে বেগম জিয়ার আইনি প্রক্রিয়ায় মুক্তি দিন দিন জটিল হয়ে পড়ছে বলে মনে করেন বিএনপি নেতারা। তাই রাজপথে আন্দোলনেই বেগম জিয়ার মুক্তির ফয়সালা চান তারা। এ কারণেই দল গোছানোর প্রক্রিয়া চলছে। বিএনপির অঙ্গ সংগঠনের কমিটি দেওয়া হচ্ছে। যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের অসম্পূর্ণ কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ছাত্রদলের কমিটি করতে সার্চ কমিটি গঠন করা হয়েছে। মহিলা দলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি এরই মধ্যে ঘোষিত হয়েছে। শক্তি সঞ্চয় করে বিএনপি বেগম জিয়ার মুক্তি আন্দোলনে যাবে বলে জানা গেছে।
এ প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘সরকার ছলচাতুরীর আশ্রয় নিয়ে বেগম খালেদা জিয়ার আইনগতভাবে প্রাপ্য সুযোগ উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিলম্বিত করছে। আদালতের ওপর হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করছে। দেট ইজ ইনটেশনাল, পলিটিক্যাল মোটিভেটেড। আজকে সরকার জনগণের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে এভাবে আটক করে রেখে তাকে চিকিৎসা না দিয়ে তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। যে কারণে তাকে (খালেদা জিয়া) সাজা দেওয়া হয়েছে সেই মামলায় তো তিনি জামিনযোগ্য। জামিন পেতে পারেন এবং অন্য সবাই পেয়েছেন। তার বেলা কেন এই ব্যতিক্রম। আমাদের প্রশ্নটা ওই জায়গায়। আমরা মনে করি, এই কাজটি অমানবিক ও সংবিধান লঙ্ঘনের শামিল। যে কোনো নাগরিকের চিকিৎসা পাওয়ার অধিকার আছে।’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন