বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শপথ না নেওয়ায় শূন্য হওয়া বগুড়া-৬ আসনে উপনির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিন্ধান্ত নিয়েছে দলটি। তবে ওই আসনে বিএনপির হয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নাকে দেওয়া প্রস্তাব সরাসরি প্রত্যাখ্যান করায় সবকিছু নতুন করে ভাবতে হচ্ছে দলটিকে।
সংশ্লিষ্ট দলীয় সুত্রে জানা গেছে, প্রার্থী নির্বাচন নিয়ে এখন নানা ধরনের কথা হচ্ছে বিএনপিতে। নিজেদের ছেড়ে দেওয়া আসনে আবার নির্বাচন করতে গিয়ে একধরনের বিপাকেও পড়েছে দলটি।
বলা হচ্ছে, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এই আসনে নির্বাচন করতেন। এবার তিনি করতে না পারায় দলীয় মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নির্বাচন করে জিতেছেন। তিনি শপথ না নেওয়ায় এই আসন শূন্য হয়েছে। তাই এ আসনে আবার কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হলে দলের জ্যেষ্ঠ কোনো নেতাকেই মনোনয়ন দেওয়া উচিত। দলের মধ্যে এমন কথাও হচ্ছে আসন ছেড়ে দিয়ে আবার সেই আসনে নির্বাচন করার যৌক্তিকতা কী?
তা ছাড়া এখন বিএনপির যে ৫ জন সাংসদ আছেন তাদের নেতৃত্ব দিতে পারবেন, সরকারদলীয় জ্যেষ্ঠ নেতাদের কথার পিঠে কথা বলতে পারবেন এমন কাউকে এই আসনে মনোনয়ন দেওয়া উচিত বলেও মত আসছে। আবার কারও কারও প্রস্তাব মান্নাকে জোটের প্রার্থী করার।
বিএনপির একজন স্থায়ী কমিটির সদস্য নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, বিএনপি বগুড়া-৬ আসনে নির্বাচন করতে চায়। এখন পর্যন্ত এটাই সিদ্ধান্ত। তবে প্রার্থী এখনো চূড়ান্ত হয়নি। মাহমুদুর রহমান মান্না বিএনপির প্রস্তাবে রাজি হলে প্রার্থী নিয়ে আর সমস্যা হতো না। তবে এখন কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু ও যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল এবং স্থানীয়দের মধ্যে জি এম সিরাজের নাম আলোচনায় আসছে। বিএনপির নেতারা চান কেন্দ্রীয় নেতাদের কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হলে বিএনপির যারা সংসদে আছেন তাদের ওপর নেতৃত্ব দিতে পারবেন।
কেন্দ্রের এই দুই নেতাকে নিয়ে আলোচনার কারণ হিসেবে বলেন, এ দুজন সর্বশেষ নির্বাচনে অংশ নেননি বা নিতে পারেননি। নারী আসনেও রুমিন ফারহানাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। তিনিও দলের মনোনয়ন চেয়ে একাদশ সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন পাননি।
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, বিএনপিতে যোগ দিয়ে নির্বাচন করার প্রশ্নই আসে না। যদি জোটে হয়, তাহলে জোটে যারা যারা আছেন তাঁদের সঙ্গে কথা হবে, জোট বসবে। এটা জোটেরই করতে হবে।
জোট রাজি হলে প্রার্থী হবেন কিনা জানতে চাইলে মান্না বলেন, জোটে সেই বিষয় নিয়ে ভাববার কোনো অবকাশ দেখছি না। যদি দেয় তখন দেখব।
বিএনপি একজন নেতা বলেন, বগুড়া-৬ আসনে বিএনপি শেষ পর্যন্ত কি করবে তা এখনো নিশ্চিত নয়। আগামী কাল-পরশুর মধ্যে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে আলাপ করে ওই দিনই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা চাচ্ছেন, এখন যে ৫ জন সাংসদ সংসদে আছেন তারা ‘বিদ্রোহ’ করেই সংসদে গেছেন। তাই বিএনপির সংসদীয় দলকে নিয়ন্ত্রণের জন্য বা তাদের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য একজন দক্ষ, যোগ্য লোককে সংসদে পাঠানো উচিত। এবং ওই নেতাকে বিএনপি নেতৃত্বের অনুগত হওয়া দরকার। এসব দিক বিবেচনায় নেওয়ার জন্যও তারেক রহমানকে বলা হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বগুড়া- ৬ আসনের ব্যাপারে বলেন, এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। যেদিন মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া হবে সেদিনই জানা যাবে।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বগুড়া-৬ আসনে অংশ নিয়ে বিপুল ভোটে জয় পান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তবে তিনি শপথ নেননি। এরপর ওই আসন শূন্য ঘোষণা করা হয়। পরে তফসিল দেয় নির্বাচন কমিশন। এই আসনে আগামী ২৪ জুন উপনির্বাচন হবে। আর মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন ২৩ মে।
এরমধ্যে বগুড়া সদর এলাকা নিয়ে গঠিত ওই আসনে উপনির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়বেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক টি জামান নিকেতা। রোববার সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গণভবনে দলের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের এক সভায় এ সিদ্ধান্ত হয় ।
প্রসঙ্গত, একাদশ সংসদ নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে বিএনপির সাংসদদের শপথ নেওয়ার বিষয়ে জোট এবং শরীক দলের অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন। তবে বিএনপি নেতারা বলে আসছেন, রাজনৈতিক কৌশল থেকেই সংসদে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন