বগুড়া-৬ (সদর) আসনের উপনির্বাচনে কে প্রার্থী হচ্ছেন এই নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়েছে। নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নাকে বিএনপির পক্ষ থেকে প্রস্তাব দেওয়া হলেও তিনি নির্বাচন করবেন না বলে আমাদের সময়কে জানিয়েছেন।
সে ক্ষেত্রে বগুড়া জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম মোহাম্মদ সিরাজকে প্রার্থী করা হতে পারে- এমন আলোচনা শুরু হয়েছে। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা জানান, কে প্রার্থী হবেন এটা চূড়ান্ত করবেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সে ক্ষেত্রে আলোচনায় আছেন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীও। নানাবাড়ি বগুড়ায় হওয়ায় রিজভীর সঙ্গে এই এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের সম্পর্ক আছে।
তবে জেলার বাসিন্দা এমন কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হলে সে ক্ষেত্রে প্রথম পছন্দ হতে পারেন গোলাম মোহম্মদ সিরাজ। তিনি আমাদের সময়কে বলেন, ‘দলের হাইকমান্ড যদি মনে করেন আমি যোগ্য, আমাকে তারা প্রার্থী করবেন, সে ক্ষেত্রে আমি প্রস্তত।’ গত শুক্রবার বিকালে বগুড়ায় জেলা বিএনপি কার্যালয়ে দলের আহ্বায়ক কমিটির পক্ষ থেকে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে উপনির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন সংক্রান্ত এক প্রশ্নে গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ বলেন, ‘আমি এখনো কিছুই জানি না। তবে আমাকে মনোনয়ন দিলে আপত্তি করব না।’
গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ যখন এমন কথা বলছিলেন তখন নেতাকর্মীরা করতালি দিয়ে তার বক্তব্য সমর্থন করছিলেন। এ সময় তার পাশে ছিলেন জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম, ফজল্লুল বারী তালুকদার বেলাল, সাবেক সাংসদ হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা বগুড়া পৌরসভার মেয়র অ্যাডভোকেট একেএম মাহবুবুর রহমান, বিএনপি বগুড়া জেলা কমিটির সাবেক সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা প্রমুখ। সম্প্রতি, দলের চার এমপি এক রকম দলকে বাধ্য করে শপথ নিয়ে সংসদে যোগ দিয়েছেন।
ওই সময়ে দলের পক্ষ থেকে বলা হয় এখন থেকে বিএনপি সংসদ ও সংসদের বাইরে সমান তালে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবিতে সোচ্ছার হবেন। এই অবস্থায় দলের হাইকমান্ড ওই ধরনের রাজনৈতিক ব্যক্তিকে প্রার্থী করতে চাইছেন। সে ক্ষেত্রে প্রথমেই স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের নাম আলোচনায় আনছেন। কারণ, এর আগেও মওদুদ খালেদা জিয়ার ছেড়ে দেওয়া বগুড়া-৬ থেকে নির্বাচন করেছেন।
তিনি রাজি না হলে স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বরচন্দ্র রায়কে বেছে নিতে পারেন। জিয়া পরিবারের আস্থাভাজন ও ঘনিষ্ঠ এই নেতা দলের নেতাকর্মীদের কাছেও বেশ জনপ্রিয়। স্পষ্টভাষী গয়েশ্বরকেও শেষ পর্যন্ত তারেক রহমান চূড়ান্ত করতে পারেন। তবে দল ও দলের বাইরের একটি অংশ প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথিকে প্রার্থী করার জন্য নানা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
সিনিয়র কোনো নেতা রাজি না হলে সে ক্ষেত্রে যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালও আলোচনায় আছেন। তবে তরুণ নেতাদের মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠা সাবেক সংসদ সদস্য জহির উদ্দিন স্বপনের নামও আলোচনায় আছে। ওয়ান-ইলেভেনে স্বপন সংস্কারপন্থী হওয়ায় তারেক রহমানের সঙ্গে তার এক সময় বেশ দূরত্ব ছিল। এখন তা কেটে গিয়ে উভয়ের মধ্যে সুসম্পর্ক বিরাজ করছে বলে তাদের ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে। তরুণ নেতাদের মধ্যে আলাল ও স্বপন তারা ভালো বক্তা হিসেবে সুনাম অর্জন করেছেন।
গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বগুড়া-৬ (সদর) আসনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নির্বাচিত হন। তবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শপথ না নেওয়ায় ৩০ এপ্রিল আসনটি শূন্য ঘোষণা করা হয়। এর পর নির্বাচন কমিশন উপনির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। সেই অনুযায়ী আগামী ২৪ জুন উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ২৩ মে মনোনয়নপত্র জমার শেষ দিন।
এদিকে দলের পাঁচ এমপি শপথ নেওয়ার পর এবার সংরক্ষিত নারী আসনে বিএনপির প্রার্থী কে- এ নিয়ে চলছে জোর আলোচনা। এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেবেন। তবে তা আগামীকাল সোমবারের মধ্যেই সংরক্ষিত আসনে বিএনপির নারী প্রার্থীর নাম ঘোষণা করতে হবে। এ নিয়ে নির্বাচন কমিশনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তারেক রহমান সংশ্লিষ্ট নেতাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, বিএনপির অভ্যন্তরে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, সহআন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা ও নির্বাহী কমিটির সদস্য নিপুণ রায় চৌধুরীকে নিয়ে বেশি আলোচনা রয়েছে।
এ ছাড়া বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, সাবেক সংসদ সদস্য রেহেনা আক্তার রানু, আশিফা আশরাফি পাপিয়া, নিলোফার চৌধুরী মণি ও হেলেন জেরিন খানও আলোচনায় আছেন। শামা ওবায়েদ বলেন, দল যাকে ভালো মনে করবে তাকেই মনোনয়ন দেবে। দল যদি আমাকে বিবেচনায় নেয়, তা হলে আমি আমার দায়িত্ব পালন করব।’ একই কথা বলেন ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা। তার মতে ‘দল যাকে ভালো মনে করবে তাকেই প্রার্থী দেবে।’
নিপুণ রায়চৌধুরী বলেন, ‘বিগত সময়ে আন্দোলন সংগ্রামে আমি একজন নারী হয়েও সামনে থাকার চেষ্টা করেছি। জেল-জুলুম, মামলা-হামলারও শিকার হয়েছি। দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এখনো কারাবন্দি। তার পাশাপাশি গণতন্ত্রের মুক্তির জন্য আন্দোলনে সব সময়ই থাকব। আমি কোনো কিছু পেতেই হবে-এ রাজনীতি করি না। যদি আমাদের চেয়ারপারসন ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এসব বিবেচনায় নিয়ে আমাকে সংরক্ষিত নারী আসনে প্রার্থী করেন তা হলে আমি আমার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনের চেষ্টা করব।’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন