মধুর ক্যানটিনে ছাত্রলীগের নারী নেত্রীদের ওপর হামলাকে ‘ছোট ঘটনা’ বলায় আওয়ামী লীগ নেতাদের কড়া সমালোচনা করেছেন হামলার শিকার ছাত্রলীগের নেত্রীরা। এছাড়া, কমিটিতে যারা বিতর্কিত তাদের তালিকা প্রকাশের ঘোষণা দিয়েছে পদবঞ্চিতরা।
সদ্যঘোষিত কেন্দ্রীয় পূর্ণাঙ্গ কমিটি বাতিল এবং মধুর ক্যানটিনে সংগঠনের নারী নেত্রীদের উপর হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন করে ছাত্রলীগের পদ বঞ্চিতরা। বুধবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে এ মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়।
মানববন্ধনকারীদের হাতে বিভিন্ন ফেস্টুনে ‘আমাদের বোনদের উপর হামলা কেন, বিচার চাই বিচার চাই’, ‘অবৈধ কমিটি মানি না’, ‘অছাত্র, আদু ভাইদের কমিটি মানি না’, ‘ক্যাম্পাস থেকে বহিষ্কৃতদের কমিটি মানি না’, ‘বঙ্গবন্ধুর ছাত্রলীগে অছাত্রদের স্থান নেই’, ‘চাকরিজীবী ব্যবসায়ীদের কুটিল কমিটি মানি না’ ইত্যাদি লেখা দেখা যায়।
তারা ঘোষিত কমিটি বাতিল করে যোগ্যদের স্থান দেওয়া এবং হামলার জড়িতদের শাস্তির দাবি করেন। মানববন্ধনে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদ বঞ্চিত শতাধিক নেতাকর্মী অংশগ্রহণ করেন।
প্রসঙ্গত, সম্মেলনের প্রায় ১০ মাস পর সোমবার ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করা হলেও তা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। কমিটিতে পদ না পেয়ে ছাত্রলীগের একটি অংশ বিক্ষোভ করে। এ নিয়ে সংঘর্ষও হয়। পদবঞ্চিত নেতারা সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মধুর ক্যানটিনে সাংবাদিক সম্মেলন করতে আসলে তাদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। এ সময় নারী নেত্রীদের লাঞ্ছিত করেন সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন এবং সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর অনুসারীরা। হামলায় পদবঞ্চিত সাত ডাকসু নেতাসহ আহত হন ১২ জন।
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিনে যা ঘটেছে তা একটি ছোট্ট সাধারণ ঘটনা বলে মঙ্গলবার মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ।
হানিফের করা মন্তব্যের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ছাত্রলীগের শামসুন্নাহার হল শাখার সভাপতি ও নতুন কমিটিতে উপ-সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদ পাওয়া নিপু তন্বী বলেন, ‘আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের কাছে সম্মান প্রদর্শন করে জানতে চাই, মধুর ক্যানটিনের ঘটনাটি কোন পর্যায়ে গেলে তাদের কাছে মনে হতো এটি বিশাল আকারের ঘটনা। আমাদের আর কতটুকু লাঞ্ছিত করলে তাদের কাছে মনে হতো ছাত্রলীগের নারীদের উপর নির্যাতন হয়েছে। আমরা মারা যাওয়ার পরে কি ঘটনার সত্যতা প্রকাশ পেত?’
তিনি বলেন, ‘ছাত্রলীগের নিবেদিত প্রাণ হিসেবে মধুর ক্যানটিনের মতো জায়গায় সংগঠনেরই কিছু ছোট-বড় ভাই দ্বারা নির্যাতিত হই, এরপর আর কোন মা-বাবা-ভাই-বোন ছাত্রলীগ করার জন্য তাদের ঘরের সন্তানকে পাঠাবে না। নারী নেত্রীরা বারবার নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। আর কত নারী নেত্রীর উপর আঘাত আসলে টনক নড়বে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের।’
তিনি আরও বলেন, ‘কোটা আন্দোলনের সময় ছাত্রলীগের নেত্রী এশার উপর হামলা হয়েছে। এরপর তাকে অনেকেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন দেখে রাখবেন, তাকে মূল্যায়ন করা হবে। কোথায় সেই মূল্যায়ন?
এ সময় রোকেয়া হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি এবং ডাকসুর কমনরুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক বিএম লিপি আক্তার বলেন, ‘অনেকেই ঘটনাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছে। আমাদের উদ্দেশ্য যারা কমিটিতে এসেছে, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে, তাদেরকে বাদ দিয়ে দক্ষ ও যোগ্যদের নিয়ে কমিটি করা।’
এ সময় নতুন কোন কর্মসূচি ঘোষণা করবেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদের ৪৮ ঘণ্টার সময় দেওয়া ছিল। আগামীকাল এটি শেষ হবে। তারপরই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘এক বছর পর কমিটি হয়েছে, এখানে সবার মন জয় করে কমিটি করা সম্ভব নয়। আর যারা কমিটিতে স্থান পেয়েছে তাদের সমালোচনা সহ্য করার ক্ষমতা থাকতে হবে। যারা যোগ্যতা অনুযায়ী পোস্ট পেয়েছে তাদেরকে আমরাও শুভেচ্ছা জানিয়েছি। কিন্তু অনেকেই রয়েছে যাদের কোন যোগ্যতাই নেই, তাদের বিরুদ্ধে অপকর্মের সাক্ষ্য, প্রমাণ রয়েছে। তারা কমিটিতে থাকলে ছাত্রলীগ প্রশ্নবিদ্ধ হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা মত প্রকাশের যুক্তিসংগত পন্থা বেছে নিয়েছিলাম। কিন্তু তা করতে দেওয়া হয়নি। কমিটি গঠন করেছে, কিন্তু হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি। কমিটির সদস্যরাও আমাদের সঙ্গে আলোচনায় আসেনি। এটা প্রহসন করা হলো আমাদের সঙ্গে।’
লিপি আক্তার বলেন, ‘যারা ছাত্রলীগকে কলুষিত করছে তাদের বিরুদ্ধে আমরা সোচ্চার থাকব। আমার দিকে গ্লাস ছুড়ে মারলে মাথা সরিয়ে নিই, সেটি গিয়ে লাগে রোকেয়া হলের সাধারণ সম্পাদক শ্রাবণী দিশার চোখের পাশে।’
বিতর্কিতদের তালিকা প্রকাশের ঘোষণা:
ছাত্রলীগের ৩০১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটিতে যারা বিতর্কিত তাদের তালিকা প্রকাশের ঘোষণা দিয়েছে পদবঞ্চিতরা। তারা বলছেন, ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে যেসব অপরাধী, বিতর্কিত ও বিভিন্ন অপকর্মের দায়ে অভিযুক্ত তাদের বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট প্রমাণ সংগ্রহের কাজ চলছে। তাদের বিরুদ্ধে দ্রুতই তালিকা প্রকাশ করা হবে।
এ বিষয়ে পদবঞ্চিতদের অন্যতম ও সোহাগ-জাকির কমিটির প্রচার সম্পাদক সাইফ বাবু বলেন, আমরা ইতিমধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছি। যারা বিভিন্ন অপকর্মের দায়ে অভিযুক্ত এবং বিতর্কিত তাদের বিরুদ্ধে আমরা তালিকা তৈরি করছি। দ্রুতই তা সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়ে দেওয়া হবে। এদের সংখ্যা শতাধিক বলে জানান সাইফ বাবু।
এ সময় সদ্য সাবেক দপ্তর সম্পাদক দেলোয়ার শাহজাদা, প্রচার সম্পাদক সাঈফ বাবু, কর্মসূচি ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক রাকিব হোসেন, সদস্য তানভীর হাসান সৈকত, বঙ্গবন্ধু হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আল আমিন রহমান, কবি জসীম উদ্দীন হলের সাধারণ সম্পাদক শাহেদ খান, বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হলের সভাপতি ফরিদা পারভীন, সাধারণ সম্পাদক শ্রাবণী শায়লা, সুফিয়া কামাল হলের সভাপতি ইফফাত জাহান এশা, সাধারণ সম্পাদক শারজিয়া শম্পাসহ দেড় শতাধিক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন