সারাদেশে ধানের ন্যায্য মূল্য না পেয়ে হতাশ চাষিরা। সম্প্রতি টাঙ্গাইলের এক চাষি প্রতিবাদস্বরূপ তার ক্ষেতে আগুন ধরিয়ে দেন। আর এতেই টনক নড়ে দেশবাসীর। তবে এবার শুধু ধান নয় দাম না পেয়ে মাঠেই ফুল ফেলে রাখছেন চাষিরা। অনেকে আবার ঝোপঝাড়েও ফেলে দিচ্ছেন উৎসবের এই উপকরণকে।
ফুলচাষিরা তাদের ফুল তুলে ক্ষেতের সারিগুলোতে আবার কখনো ঝোপঝাড়ে ফেলে দিচ্ছেন বা কখনো গাছেই ফুটে নষ্ট হচ্ছে ফুল। মাঠের পর মাঠ ফুল বাগানের এই করুণ দৃশ্য দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ফুল উৎপাদনকারী এলাকা ঝিনাইদহের।
এ জেলার উপজেলাগুলোতে ৪শ হেক্টরের বেশি জমিতে গোলাপ, গাঁদা, রজনীগদ্ধা, গ্লাডিওলাস, জারবেরা সহ নানা দেশি-বিদেশি ফুলের চাষ হয়। সদর উপজেলার উদয়পুর গ্রামের ফুলচাষি বিল্লাল হোসেন ও মহাসিন হোসেন বলেন, পুরো রমজান মাস জুড়ে তেমন কোনো অনুষ্ঠান না থাকায়, দীর্ঘ এ সময়ে ফুলের কেনাবেচা প্রায় শূন্যের কোঠায়। ফলে দামও নেই এসব ফুলের। এ কারণে বাগানজুড়ে থাকা বিভিন্ন প্রকার নামি-দামি তরতাজা সব ফুল তুলে ফেলে দিতে হচ্ছে। এক মাসে কমপক্ষে ৪টি চালান বিক্রি করতে না পারায় ৫০ হাজার থেকে লাখ টাকা ক্ষতি হয় কৃষকদের।
গাঁদা ফুলের ঝোপা ২শ থেকে আড়াইশ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হলেও এখন তা ২০-২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর রজনীগন্ধার ১টি স্টিক ৫টাকা পর্যন্ত দাম উঠলেও এখন তা মিলছে এক টাকায় ৪টা। বর্তমান সময়ে যে ফুলের চাষ হচ্ছে তাকে গরম মৌসুমের ফুল বলা হয়। ৫ থেকে ৬ মাস পর্যন্ত এ ফুল পাওয়া যায় বাগান থেকে। একবিঘা জমিতে চাষ করতে গাঁদা ও রজনীগন্ধা ফুলে খরচ হয় প্রায় ২৬ হাজার টাকা, আর বিক্রি করা যায় লাখ টাকায়।
তবে রমজানের এই সময়টাতে ফুলের দাম নেমে আসে সর্বনিম্ন পর্যায়ে। তাও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ফুল তুলে ফেলে দিতে বাধ্য হন কৃষকেরা। কারণ শ্রমিক খরচ, ফুল তুলে, ঝোপা গেঁথে বাজারজাতকরণ পর্যন্ত আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি দাঁড়ায় এ সময়টাতে।
এদিকে কেন ফুল ফেলে দিচ্ছেন কৃষকরা জানতে চাইলে ঝিনাইদহ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক জিএম আব্দুর রউফ বলেন, ফুল ফেলে দেয়ার খবর জানা নেই তার। তবে কৃষকরা যেন নিরুৎসাহিত না হয়ে পড়েন সে ব্যাপারে পদক্ষেপ নেবেন।
তিনি আরও বলেন, পরিকল্পিতভাবে ফুলের চাষ করতে হবে আর ফুল সংরক্ষণ করতে হলে বিশেষায়িত হিমাগারের জন্য সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ নিতে হবে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন