কেন্দ্রীয় সম্মেলনের ১ বছর পর ৩০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিয়েছে ছাত্রলীগ। সোমবার (১৪ মে) সংগঠনের সভাপতি রেজোয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী স্বাক্ষরিত কমিটির তালিকা গণমাধ্যমে পাশ করা হয়। কমিটি পাশ করার পরপরই বিক্ষোভে ফেটে পড়ে পদবঞ্চিতরা। এসময় ঢাবি হাকিম চত্বর থেকে পদবঞ্চিতদের একটি মিছিল মধুর ক্যান্টিনে এসে সংবাদ সম্মেলন করতে গেলে তাতে হামলা চালায় পদপ্রাপ্তরা। আর এ ঘটনায় ক্ষোভ বিরাজ করছে ছাত্রলীগের একাংশ নেতাকর্মী ও সাবেকদের মধ্যে।
কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পদত্যাগ করেছেন মন মতো পদ না পাওয়া কয়েকজন নেতা। পদবঞ্চিতদের দাবি, বিবাহিত, অছাত্র, হত্যা ও মাদক মামলার আসামিদের জায়গা দেয়া হয়েছে নতুন কমিটিতে। ত্যাগীদের অবমূল্যায়ন করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অতীতে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগবিরোধী অবস্থান ছিল এমন অনেকে পদ পেয়েছেন। ৩০১ সদস্যের এই কমিটিতে স্থান হয়নি বিগত কমিটির প্রথম সারির অন্তত শতাধিক নেতার। সর্বশেষ সম্মেলনে আলোচিত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী ছিলেন এমন অনেকের ভাগ্যেও জোটেনি সঠিক মূল্যায়ন। আর এজন্যেই তারা গণপদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানিয়েছে একটি সূত্র।
ওই সূত্র জানায়, গত কমিটিতে উপ-সম্পাদক থাকার পর এবারও একই পদ কিংবা নিচে নামিয়ে দেয়া হয়েছে। এটাকে রীতিমতো অপমানের চোখে দেখছেন তারা। ফলে গঠনতন্ত্র মেনে এরকম ১০০ জনেরও বেশি নেতৃবৃন্দ গণপদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
ডাকসুর কমনরুম ও ক্যাফেটেরিয়া বিষয়ক সম্পাদক ও নতুন কমিটির সাংস্কৃতিক উপ-সম্পাদক বিএম লিপি আক্তার বলেন, আমি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের উপ-সম্পাদক থেকে পদত্যাগ করেছি। এই পোস্টের পরিচয় নিয়ে লজ্জা পেতে চাই না। অছাত্র, বিবাহিত, চাকরিজীবীদের দিয়ে এই কমিটি করা হয়েছে। এই কমিটি মানি না।
তিনি বলেন, যারা বিগত ৮-৯ মাস তাদের চামচামি করছে, যাদের কেউ চিনে না, আগে কোথাও কোনোদিন কোনো ইউনিটে ছিল না, তারাও কেন্দ্রীয় কমিটিতে পোস্ট পেয়েছেন। এদেরকে জয়েন্ট সেক্রেটারি, ভাইস প্রেসিডেন্ট, সাংগঠনিক সম্পাদক এবং সম্পাদকের মতো বড় পদবী দেয়া হয়েছে। এই কমিটি ভেঙে যোগ্য, সাংগঠনিক দক্ষ লোক যারা বিগত দিনে রাজপথে ছিল, তাদের দিয়ে কমিটি না করলে আমরা গণপদত্যাগের ঘোষণা দিব।
নতুন কমিটির কর্মসূচি ও পরিকল্পনা বিষয়ক উপ-সম্পাদক আল মামুন বলেন, গত কমিটিতে উপ-সম্পাদক ছিলাম। এই কমিটিতেও উপ-সম্পাদক রেখে অপমান করা হয়েছে। আমি পদত্যাগ করেছি। এই অপমান আমি নিতে পারছি না।
নতুন কমিটির সাংস্কৃতিক উপ-সম্পাদক ও সুফিয়া কামাল হল ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক তিলোত্তমা শিকদার বলেন, আমি গত কমিটিতেও উপসম্পাদক ছিলাম। এবারও আমাকে উপ-সম্পাদক করা হয়েছে। আমি সুফিয়া কামাল হলের সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। আমি সাধারণ ছাত্রদের ভোটে ডাকসুর সদস্য হয়েছি। অথচ নতুন কমিটিতে আমাকেও উপ-সম্পাদকই রাখা হয়েছে।
তিনি বলেন, আমার চেয়ে রাজনীতিতে পাঁচ বছরের জুনিয়রও বড় পেয়েছে। এটা খুবই অপমানজনক। তাই আমি পদ থেকে পদত্যাগ করছি। তিনি আরও বলেন, আমাকে যোগ্য পদ দেয়া হয়নি। আমি ক্ষোভ জানাতেই পারি। তাই বলে আমার গায়ে হাত দেয়া হবে কেন? আমার মাথায় ক্রমাগত আঘাত করা হয়েছে। কাচের গ্লাস দিয়ে মাথায় মারা হয়েছে। আমি নেত্রীর কাছে এই ঘটনার বিচার চাই।
এ বিষয়ে জানতে ছাত্রলীগের সভাপতি রেজোয়ানুল হক চৌধুরী শোভনকে ফোন করা হলেও তিনি ব্যস্ততার মধ্যে আছেন বলে জানান।
ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী বলেন, কেন্দ্রীয় সংসদের কমিটি নির্বাচন করা হয়েছে বিশেষ রিপোর্টের ভিত্তিতে। ছাত্রলীগের সাংগঠনিক নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই কমিটি দিয়েছেন। যারা কমিটির বিরোধীতা করছে, তারা নেত্রীরই বিরোধীতা করছে।
যারা পদত্যাগ করবেন বলে ভাবছেন তারা নেত্রীর সিদ্ধান্তকে ভঙ্গ করবেন বলে মন্তব্য করেন রাব্বানী।
তিনি বলেন, সবাইকে সুযোগ দেয়া তো সম্ভব নয়। সদ্য সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক যেই নাম দিয়েছেন তার থেকে সরাসরি ৯০ জনকে কমিটিতে রাখা হয়েছে। কাউকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বাদ দেয়া হয়নি। বিতর্কিতদের কমিটিতে রাখার বিষয়ে তিনি বলেন, কারও বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের প্রমাণ থাকলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিবাহিতদের বিষয়ে তিনি বলেন, মেয়েদের ক্ষেত্রে বিয়ের বিষয়ে শৈথিল্য রয়েছে। অতীতে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগবিরোধী অবস্থান কিংবা রাজনৈতিক ভিন্ন মতাদর্শের বিষয়ে তিনি বলেন, এমন কেউ থাকলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন