সাংবাদিকদের সঙ্গে ধৃষ্টতাপূর্ণ আচরণ ও কটূক্তি করায় অভিনেত্রী শমী কায়সারের তীব্র সমালোচনা করে বিবৃতি দিয়েছে সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠন।
তবে, এ ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনায় পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)।
জানা যায়, গত বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) নামের একটি প্রতিষ্ঠানের অনুষ্ঠানে সংগঠনটির প্রেসিডেন্ট ও অভিনেত্রী শমী কায়সারের দুটো মোবাইল ফোন চুরি হয়।
এর পরপরই প্রেস ক্লাবের হলকক্ষ বন্ধ করে উপস্থিত সাংবাদিকসহ সবার দেহ তল্লাশি করা হয়। এসময় দেহ তল্লাশি করা সাংবাদিকদের কেউ কেউ পেশাগত কাজে বের হতে চাইলে তাদের ‘চোর’ বলা হয়।
পরে অনুষ্ঠানে থাকা ক্যামেরাপারসনদের ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, অনুষ্ঠানে কেক দিতে আসা একজন তার ফোন নিয়ে চলে গেছে। ঘটনাস্থলে শমী ‘স্যরি’ বললেও এরপর থেকেই সাংবাদিকদের মুখে মুখে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার আচরণ নিয়ে নানা ধরনের আলোচনা-সমালোচনা চলছে।
এঘটনায় বৃহস্পতিবার বিএফইউজে ও ডিইউজের বিবৃতিতে সাংবাদিকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার তীব্র নিন্দা জানায়।
বিবৃবিতে বিএফইউজে সভাপতি মোল্লা জালাল, মহাসচিব শাবান মাহমুদ, ডিইউজে সভাপতি আবু জাফর সূর্য ও সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরীর দেওয়া ওই যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, ‘একজন শহীদ সাংবাদিকের মেয়ে হয়ে পিতার পেশার উত্তরসূরীদের ‘চোর’ বলে সম্বোধন করে শমী কায়সার প্রকারান্তরে তার পিতাকেই নিকৃষ্টভাবে অসম্মান করেছেন। শুধু তাই নয়, একজন সেলিব্রিটি হিসেবে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে ‘মোবাইল ফোন হারানোর’ সূত্র ধরে যে আচরণ করেছেন তা প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। তার মতো একজন অভিনেত্রী ও ব্যবসায়ীর কাছ থেকে এ ধরনের আচরণ অত্যন্ত গর্হিত ও নিন্দনীয়।
ডিউইজে যুগ্ম সম্পাদক আকতার হোসেন স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বিএফইউজে ও ডিইউজে নেতারা এ ধরনের নিকৃষ্টতম দুর্ব্যবহারের জন্য সাংবাদিক সমাজের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনার আহ্বান জানিয়ে বলেন, নতুবা যত বড় সেলিব্রিটিই হোন না কেন তার সংবাদ বর্জন করা হবে। প্রয়োজন হলে তার সম্পর্কে বিস্তারিত খোঁজ-খবর নিয়ে সাংবাদিক সমাজ নিয়মিত সংবাদ পরিবেশন করে জাতিকে বিস্তারিত জানাতে বাধ্য হবে।’
তবে বিবৃতিতে ‘প্রয়োজন হলে তার সম্পর্কে বিস্তারিত খোঁজ-খবর নিয়ে সাংবাদিক সমাজ নিয়মিত সংবাদ পরিবেশন করে জাতিকে বিস্তারিত জানাতে বাধ্য হবে’ এই অংশটুকু সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
ডেইলি স্টারের সিনিয়র সাংবাদিক পিনাকী রায় ফেসবুকে স্ট্যাটাসে লেখেন-‘শমী অধম তাই বলিয়া আপনারা উত্তম হইবেন না কেন!
এটা সাংবাদিক সাংগঠনের প্রতিবাদের ভাষা হওয়া উচিত নয়! তার শিষ্টতাবোধ নাই থাকতে পারে, তাই বলে আপনারা নিজেদের শিষ্টতাবোধ হারাবেন কেন!--
এবিষয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন সাপ্তাহিকের সম্পাদক গোলাম মর্তুজা। তিনি লেখেন- ‘লেখক লেখে আর সাংবাদিক লিখিব বলিয়া হুমকি দেয়’- কেন যেন আজ আবার লাইনটি মনে পড়ল! কিন্তু লেখকের নাম মনে করতে পারছি না। কথাটা কি সৈয়দ মুজতবা আলী লিখেছিলেন?
ফেসবুক স্ট্যাটাসে সাংবাদিক মনজুরুল ইসলাম পান্না লেখেন- ‘শমী কায়সার সম্ভবত তেমন খারাপ কিছু বলেনি। নইলে সাংবাদিক সমাজের কণ্ঠ এমন মিউ মিউ করে কেন? গলদটা কোথায়?’
তবে বিবৃতির বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি আবু জাফর সূর্য পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ডিইউজে হচ্ছে একটা ট্রেড ইউনিয়ন। এটা প্রেস ক্লাব বা রিপোর্টার্স ইউনিটি না। ইউনিয়ন দাবি-দাওয়ার বিষয়ে শক্ত কথা বলতেই পারে। কারণ দাবির জন্য আপনি নরম কথা বা আহ্বান জানাচ্ছি। যে আমি আহ্বান জানাচ্ছি, এখন আহ্বান যদি না শুনে তাহলে কি হবে? আল্টিমেটামে একটা ডিমান্ড তো দিতে হবে।
তিনি বলেন, ডিমান্ডের জায়গা থেকে নেতৃবৃন্দ মনে করেছেন যে, ক্ষমা না চাইলে আমরা কি করতে পারি। তা উত্থাপন করার চেষ্টা করেছে। তবে আমি বলি যে, যে শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে, এর থেকে সফট বা নরম শব্দ ব্যবহার করাও যেত। কিন্তু সত্যিকার অর্থে কথা হচ্ছে- শমী কায়সার যে কাজটা করেছে বা বলেছে, তা গর্হিত কাজ। এর জন্য জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন