বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতিকে শোকজ এবং দলের আরও দুই জ্যেষ্ঠ নেতাকে অব্যাহতি প্রদান করেছে দলটির কেন্দ্রীয় কমিটি। কেন্দ্রের আকস্মিক এমন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) রাতে তাদের অনুসারীরা বগুড়ায় দলের জেলা কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেন।
এ দিন রাত পৌনে ১০টায় স্বেচ্ছাসেবক দলের বগুড়া জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক শাহাবুল আলম পিপলুর নেতৃত্বাধীন নেতাকর্মীরা বিএনপি কার্যালয়কে বাহির থেকে তালাবন্ধ করে দেন। পরবর্তীতে তারা কার্যালয় প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ কর্মসূচী পালন করেন। সমাবেশে জেলার সাবেক সাংসদ গোলাম মোহাম্মদ সিরাজকে জেলায় অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়।
এদিকে বিএনপির কেন্দ্রীয় সূত্র থেকে জানা যায়, দলের ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সরাসরি নির্দেশনা অনুযায়ী এ দিন দুপুর ১টায় বগুড়া বিএনপির কমিটি পুনর্গঠনের জন্য জেলা কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, যুগ্ম সম্পাদক এবং সাংগঠনিক সম্পাদকদের রাজধানীর নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ডাকা হয়। তখন জেলা বিএনপির নব নির্বাচিত ও সাবেক সাংসদ এবং দলের চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টারাও উপস্থিত ছিলেন।
সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শাহীন শওকত। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতুল্লাহ বুলু।
সভায় উপস্থিত দলের এক জ্যেষ্ঠ নেতা জানান, গত ৭ বছরেরও বেশি সময় আগে ২০১২ সালের ২২ জানুয়ারি অনুমোদন পাওয়া বগুড়া জেলা বিএনপির কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার কারণে ভেঙে দিয়ে সভায় নতুন আহবায়ক কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বগুড়া জেলা বিএনপিতে সভাপতি কিংবা সাধারণ সম্পাদক হবেন না- এমন নেতাদের আহবায়ক ও যুগ্ম আহবায়ক করে আগামী দশ দিনের মধ্যে কমিটি গঠনের ঘোষণা প্রদান করা হয়।
এ সময় সভায় গুঞ্জন ওঠে যে, বগুড়া জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও পৌরসভার মেয়র অ্যাডভোকেট একেএম মাহবুবর রহমান অথবা সাবেক সাংসদ গোলাম মোহাম্মদ সিরাজের মধ্যে যেকোনো এক জনকে আহবায়কের দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। তখন সভায় উপস্থিত জেলা বিএনপির সভাপতি সাইফুল ইসলাম কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের এমন সিদ্ধান্তের সঙ্গে দ্বিমত জানিয়ে বক্তৃতা প্রদান করেন।
মূলত এর পরপরই জেলা বিএনপির যুগ্ম-সম্পাদক পরিমল কুমার দাস এবং জেলা বিএনপির প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক ও স্বেচ্ছাসেবক দলের জেলা সভাপতি শাহ্ মেহেদী হাসান হিমু দলটির জেলা সভাপতি সাইফুল ইসলামের পক্ষ নিয়ে দল পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের নেওয়া সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেন। এ সময় তারা কমিটি পুনর্গঠনে ত্যাগী এবং নির্যাতিত নেতাদের মূল্যায়নেরও দাবি জানান। যদিও তখন তাদের এ ধরনের বক্তব্যের বিরুদ্ধে তীব্র বিরোধিতা করেন সাবেক সাংসদ গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ। যে কারণে তখন উভয় পক্ষের মধ্যে তুমুল বাকবিতণ্ডার সৃষ্টি হয়। পরে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়ে যায়।
দুপুর ২টায় সভা শেষে বগুড়ার নেতৃবৃন্দ বিকেলে নিজ জেলার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। তবে জেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দ বগুড়া পৌঁছানোর আগেই এলাকায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে জেলা কমিটির সভাপতি সাইফুল ইসলামকে শোকজ এবং দলের জেলা কমিটির যুগ্ম সম্পাদক পরিমল কুমার দাস এবং প্রকাশনা সম্পাদক শাহ্ মেহেদী হাসান হিমুকে অব্যাহতি প্রদানের কথা টেলিফোনে জানিয়ে দেওয়া হয়।
মূলত এসবের প্রেক্ষিতে এ দিন রাতে সেই তিন নেতার অনুসারীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। পরে রাত পৌনে ১০টার দিকে তারা শহরের নওয়াববাড়ি সড়কে দলটির জেলা কার্যালয়ে গিয়ে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন।
সমাবেশে স্বেচ্ছাসেবক দল বগুড়া জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক শাহাবুল আলম পিপলু বলেন, ‘বিএনপির দুই ত্যাগী ও নির্যাতিত নেতা পরিমল কুসার দাস এবং শাহ্ মেহেদী হাসান হিমুকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।’
তখন সাবেক সাংসদ গোলাম মোহাম্মদ সিরাজকে ‘ষড়যন্ত্রকারী’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সংস্কার-পন্থী গোলাম মোহাম্মদ সিরাজের ইন্ধনেই ত্যাগী ও নির্যাতিত নেতাদের দল থেকে অপসারণের পাঁয়তারা করা হচ্ছে। কিন্তু দলের সাধারণ নেতাকর্মীরা কখনোই এ ধরনের সিদ্ধান্ত মেনে নিবে না।’
আরও পড়ুন :- মোবাইল টাওয়ারের ক্ষতিকর দিক জানতে চান আদালত
যোগাযোগ করা হলে বগুড়ার উদ্দেশ্যে ঢাকা ছেড়ে আসা জেলা বিএনপির সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমি দলের সিদ্ধান্তের বিষয়ে কোনো চিঠি পাইনি।’
বিএনপির বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা জেলা কার্যালয়ে তালা দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি এখন রাস্তায়। বগুড়ায় কি হচ্ছে সেটা আমার পক্ষে বলা সম্ভব নয়।’ অধিকার নিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন