নানা জল্পনা-কল্পনা শেষে এমপি হিসেবে শপথ নিয়েছেন ঠাকুরগাঁও-৩ (রানীশংকৈল) আসনের বিএনপি নেতা জাহিদুর রহমান।
বৃহস্পতিবার দুপুরে বেশ গোপনীয়তার মধ্যে নিজ দফতরে তাকে শপথবাক্য পাঠ করান স্পিকার ড. শিরীন শারমীন চৌধুরী।
দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করেই শপথ নিয়েছেন জাহিদুর রহমান। এর পরপরই জাতীয় প্রেসক্লাবে এক অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘নেত্রীকে কারাগারে রেখে যারা দলের সিদ্ধান্তের বাইরে শপথ নিচ্ছেন বা নিবেন, তারা গণদুশমন। জনগণই তাদের বিচার করবে। দল থেকেও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
অবশ্য শপথ নেয়ার পর জাহিদুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, সংসদে দলীয় চেয়ারপারসনের মুক্তির দাবি তুলে ধরতেই তিনি শপথ নিয়েছেন। এ কারণে এখন বিএনপি বহিষ্কার করলেও তিনি তা মানবেন না।
গত ৩০ ডিসেম্বরের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে বিতর্কিত দাবি করে শুরুতেই ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে বিএনপি এবং তাদের জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। যদিও এই জোটের ৮ জন নির্বাচিত হন।
আগেই জোটের শরিক গণফোরামের দুই নেতা- সুলতান মোহাম্মাদ মনুসর আহমেদ ও মোকাব্বির খান দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে শপথ নিয়েছেন। পরে তাদের দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।
এবার শপথ নিলেন বিএনপি নেতা জাহিদুর রহমান। তার শপথের পরে প্রশ্ন উঠেছে, বিএনপি কি আদৌ বাকিদের শপথ নেয়া থেকে বিরত রাখতে পারবেন?
একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী এমন একাধিক নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে, তাদের মধ্যে অন্তত তিনজন পরিবর্তন ডটকমকে দল সিদ্ধান্ত না দিলেও ব্যক্তিগতভাবে শপথ নেয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন। নির্বাচিত ছয়জনের মধ্যে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও অন্য আরেকজনের মনোভাব জানা সম্ভব হয়নি।
ওই তিন নেতার ভাষ্য, আমরা শেষ পর্যন্ত দলকে বোঝানোর চেষ্টা করছি। দলের সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করব। রাজি না হলে ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত নেব।
সূত্রের দাবি, এই তিন নেতার মধ্যে দু’জন আগামী রোববারই শপথ নিতে পারেন। যদিও তারা আগাম কোনো ঘোষণা দিচ্ছেন না।
গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হয়। এরপর ৩ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দল ও জাতীয় পার্টির নির্বাচিতরা শপথ নেন।
নানা আলোচনা-সমালোচনা শেষে গত ৭ মার্চ দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে শপথ নেন মৌলভীবাজার-২ আসন থেকে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচিত সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ। এর কয়েক দিন পর শপথ নেন সিলেট-২ আসন থেকে নির্বাচিত মোকাব্বির খান।
বিএনপি শুরু থেকেই দাবি করে আসছে, তারা দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে সংসদে যাবে না। এখন পর্যন্ত এই সিদ্ধান্তে দলের হাইকমান্ড অটল রয়েছে। দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করলে, তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থারও হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে। শপথ না নেয়ার বিষয়ে নির্বাচিতদের দলীয় চেয়ারপারসনের কারাবন্দিত্বের মানবিক বিষয়টিও বোঝানো হয়েছে।
কিন্তু, এরই মধ্যে প্রথম জাহিদুর রহমান বৃহস্পতিবার শপথ নিলেন। এখন বাকি রয়েছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের আমিনুল ইসলাম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের হারুনুর রশীদ, বগুড়া-৪ আসনের মোশাররফ হোসেন, বগুড়া-৬ আসনের মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের উকিল আব্দুস সাত্তার ভুইঞা।
এদের মধ্যে শপথ নিতে ইচ্ছুক বিএনপির নির্বাচিতরা যুক্তি দিচ্ছেন, নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি হয়েছে। এটি রাস্তায় না বলে সংসদে গিয়ে বললে বেশি ভালো। সংখ্যায় কম হলেও সেখানে সরকারের দমন-পীড়নের চিত্র এবং খালেদা জিয়ার প্রতি যে অবিচার করা হচ্ছে, তা তুলে ধরে মুক্তির বিষয়ে সোচ্চার ভূমিকা রাখা সহজ এবং কার্যকরি।
এ বিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসন থেকে নির্বাচিত বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব হারুনুর রশীদ পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘আমি দলীয় সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি। শপথের জন্য নির্ধারিত সময় শেষ হয়ে যায়নি। আশা করছি, এই সময়ের মধ্যে একটি সিদ্ধান্ত আসবে।’
বগুড়া-৪ আসন থেকে নির্বাচিত বিএনপি নেতা মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘জাহিদুর রহমান বৃহস্পতিবার শপথ নিয়েছেন। শপথ নেয়ার আগে তিনি আমাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা করেননি।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘জাহিদ কেন শপথ নিলেন, তা তিনিই ভাল বলতে পারবেন। আমি আমার বিষয়ে বলতে পারি, এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেইনি।’
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসন থেকে নির্বাচিত আমিনুল ইসলাম পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘দলীয় সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছি। দেখি শেষ পর্যন্ত কি হয়!’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন