ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য কারও কাছে রাজনীতি সিঁড়ি। কেউ রাজনীতি করেই ‘আঙুল ফুলে কলা গাছ’ বনে যান। জনসেবায় জীবন বিলিয়ে দেয়াও রাজনীতিতে বিরল কিছু নয়। তাইতো বলা হয়, রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই।
বিগত কয়েক বছর নানা নাটকীয়তায় ভরা জাতীয় পার্টির রাজনীতি বহুল প্রচলিত এই উক্তির যথার্থতা প্রমাণ করে চলেছে।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বিরোধী দলের মর্যাদা পেয়ে সব ঠিকঠাকই ছিল। কিন্তু, গত ২০ মার্চ, হঠাৎ করেই যেন দৃশ্যপট পাল্টে যায়। এরপর থেকে স্পষ্ট, জাতীয় পার্টির গৃহদাহ চরম আকার নিয়েছে।
একক ক্ষমতায় চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ দলীয় পদ থেকে আপন ভাই জিএম কাদেরকে সরিয়ে দিয়েছেন। ক’দিন আগেও অসুস্থ অবস্থায় কাছে না পেয়ে যে স্ত্রীর প্রতি ক্ষুব্ধ ছিলেন, সেই রওশনকে করেছেন বিরোধীদলীয় সংসদ উপনেতা।
২০ মার্চ বেশ ঘটা করে জাতীয় পার্টি সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচএম এরশাদের ৯০তম জন্মদিন পালন করে। তার উপস্থিতিতে কাটা হয় বিশাল কেক। পরদিন জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদেরকে নিয়ে এরশাদ বারিধারার বাসায় দলীয় নানা বিষয়ে আলোচনা করেন।
কিন্তু, এক রাতের ব্যবধানে ২২ মার্চ জিএম কাদেরকে দল পরিচালনায় ব্যর্থ উল্লেখ করে কো-চেয়ারম্যান পদ থেকে সরিয়ে দেন এরশাদ। এরপর ২৩ মার্চ জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় উপনেতার পদ থেকেও তাকে অপসারণ করে রওশন এরশাদকে নিয়োগ করেন।
আরেকটু পেছনে তাকালে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগ মুহূর্তে কোনো কারণ ছাড়াই পার্টির মহাসচিবের পদ থেকে এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারকে সরিয়ে দেন এরশাদ। এরপর থেকেই মূলত দলটিতে নানা নাটক চলতে থাকে। নাটকের শেষ কোথায়, স্পষ্ট না হলেও মহাসচিব পদেও এরশাদ পরিবর্তন আনছেন বলে জানা গেছে।
এবার তিনি দল পরিচালনায় মসিউর রহমান রাঙ্গার সাংগঠনিক ব্যর্থতাকে সামনে এনে সেই পদে সাবেক মহাসাচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারকে ফিরিয়ে আনছেন বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
জাতীয় পার্টির গঠনতন্ত্রের ২০/১/ক ধারা মোতাবেক পার্টির চেয়ারম্যানকে একক ক্ষমতার অধিকার দিয়েছে। ফলে তিনি চাইলেই যে কোনো সময় যে কাউকে দল থেকে অপসারণ যেমন করতে পারেন, তেমনি অন্তর্ভূক্তও করতে পারেন।
এসবের নেপথ্য কারণ খুঁজতে গিয়ে জানা গেছে, জাতীয় পার্টি এখন তিন ধারায় বিভক্ত। যার একটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ। অপর অংশের কলকাটি নাড়ছেন সাবেক মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওয়াদার। আর স্বয়ং এরশাদ দলের একটি অংশের নেতৃত্বে রয়েছেন। এই অংশের নেতারা আবার চেয়ারম্যান যেদিকে যান, সেদিকেই পাল তুলে হাওয়া দিতে থাকেন।
এ বিষয়ে জাপার এক সিনিয়র নেতা আক্ষেপ করে পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘গঠনতন্ত্রেই এইচএম এরশাদকে সর্বময় ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। তিনি এরই সুযোগ কাজে লাগিয়ে দলে অস্থিরতা তৈরি করেছেন। মানুষ এখন দলটি সম্পর্কে বিভ্রান্ত।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাপার এক প্রেসিডিয়াম সদস্য পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘আমরা এখন স্পষ্ট তিনটি ধারায় বিভক্ত। একটি অংশ সরকার সমর্থক। আরেকটি অংশ সরকার বিরোধী। মাঝখানের অংশটি চেয়ারম্যান এরশাদের।’
তিনি স্বীকার করেন, ‘চেয়ারম্যান এরশাদকে যখন যে অংশ বেশি প্রভাবিত করতে পারছেন, তারাই সব পদ ও সুবিধা ভোগ করছেন। কারণ, এই দলে তার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। এসব নিয়ে মুখে কিছু বলার নেই। মনের ক্ষোভ মনেই রাখতে হবে।’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন