জামায়াতের সদ্য বহিষ্কৃত নেতা মজিবুর রহমান মঞ্জুর সঞ্চালনায় একটি অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনসহ বাম-বিএনপিসহ সুশীল সমাজের নেতারা। সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবে নিউজিল্যান্ডে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত ও আহতদের প্রতি শোক ও সংহতি জানাতে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তারা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় এ ছাড়া বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক, গনস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা: জাফর উল্লাহ চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বৌদ্ধ ধর্মের শিক্ষক ড. সুকোমল বড়ুয়া, আইন বিভাগের শিক্ষক ড. আসিফ নজরুলসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
ফেব্রুয়ারিতে জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য মজিবুর রহমান মঞ্জুকে বহিষ্কার করা হয়। মঞ্জুর সেসময় নতুন দল গড়ার কথা জানান।
এরপর তাকে প্রকাশ্যে কোনো অনুষ্ঠানে দেখা গেল। সোমবারের অনুষ্ঠান বিষয়ে জামায়াতের এ সাবেক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, অনুষ্ঠানটিতে সবাই এসেছেন সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিমের আহ্বানে। আমি মূলত সমন্বয়ের দায়িত্ব পালন করেছি।
তার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে ড. কামাল হোসেন বলেন, ক্ষমতালোভীরা ধর্মের অপব্যবহার করে মানুষকে বঞ্চিত করছে। সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল বলেন, ধর্মের ভিত্তিতে ঐক্যকে বিনষ্ট করা সংবিধানসম্মত না, অনেক ক্ষেত্রে মানুষের মাঝে বৈষম্য সৃষ্টি করতে ধর্মকে ব্যবহার করা হয়েছে এবং হচ্ছে। এটি চিরতরে বন্ধ করতে হবে।
কামাল হোসেন আরো বলেন, সংবিধানেও আছে ধর্মকে অপব্যবহার করা যাবে না। আমরা স্বাধীন দেশের নাগরিক। এই নাগরিক হিসেবে আমাদের দায়িত্ব সব ধর্মের সঙ্গে সম্প্রীতি গড়ে তোলা। আমি জোর দিয়ে বলতে চাই, মানুষের সকল অধিকারকে রক্ষা করতে হবে। ধর্মের নামে বৈষম্য আমাদের দেশে নেই।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে। দেশেও অনেক নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। বিএনপির হাজার হাজার নেতা-কর্মী গুম খুনের শিকার হয়েছেন। কিন্তু কাউকে লজ্জিত হতে দেখা যায়নি।
বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান বলেন, ধর্ম যখন রাজনৈতিকভাবে ব্যবহৃত হয়, তখনই তা মানবতাবিরোধী কাজে লিপ্ত হয়।
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, নিউজিল্যান্ডের ঠিক একটা বিপরীত জগতে আমরা বসবাস করছি। আমরা মানবতার চাষ করি না, হিংসার চাষ করি। আমাদের মনে রাখতে হবে, রাষ্ট্র ও রাজনীতির মধ্যে ধর্ম আনা যাবে না।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবি অ্যাডভোকেট শাহদীন মালিক বলেন, বাংলাদেশে কোনো ঘটনা ঘটলেই ঘৃণা ও বিভাজন ছড়িয়ে দেওয়া হয়। মতবিরোধ, সমালোচনা থাকবে কিন্তু বিভাজন দূর করে রাজনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। বিভাজনের রাজনীতি বন্ধ করতে জেসিন্ডা নতুন দৃষ্টান্ত দেখিয়েছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের অধ্যাপক আসিফ নজরুল নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীকে ‘প্রকৃত মানবতার মা’ উপাধি দিয়ে বলেন, বর্বরোচিত হামলার মাধ্যমে হামলাকারী যে অন্ধকার ছড়িয়ে দিতে চেয়েছিল, তা প্রতিরোধ করে দিয়েছেন নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ও সাধারণ মানুষ।
সূচনা বক্তব্য রাখেন কল্যাণ পার্টির সভাপতি সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম এবং সঞ্চালনা করেন জামায়াতের বহিষ্কৃত নেতা মজিবুর রহমান (মঞ্জু)। অন্যানের মধ্যে বক্তব্য রাখেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা চিকিৎসক জাফরুল্লাহ চৌধুরী, অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী, মেজর জেনারেল (অব:) ফজলে এলাহী আকবর, সাবেক সচিব মোফাজ্জল করিম চৌধুরী, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী প্রমুখ।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন