আগের মতো জৌলুস না থাকলেও মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন প্রার্থীরাআগামী ১৮ মার্চ দ্বিতীয় ধাপে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনী প্রচারণা জমে উঠেছে ঠাকুরগাঁওয়ের ৫ উপজেলায়। এই নির্বাচনে ভোটারদের মনে তেমন একটা আমেজ না থাকলেও ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন প্রার্থীরা। তাই জোর প্রচারণার পাশাপাশি ভোটারদের মন জয় করতে নিজ নিজ এলাকা চষে বেরাচ্ছেন প্রার্থীরা, দিচ্ছেন এলাকার উন্নয়নসহ নানা প্রতিশ্রুতি। অবশ্য ভোটাররা বলছেন, যোগ্য প্রর্থীদের বেছে নিতে চান তারা। এদিকে নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে সকল প্রস্তুতি গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তারা।
নির্বাচনের আর মাত্র কয়েকটি দিন, শেষ মুহূর্তে সরগরম হয়ে উঠছে ঠাকুরগাঁয়ের সদর, বালিয়াডাঙ্গী, হরিপুর, রাণীশংকৈল ও পীরগঞ্জসহ ৫টি উপজেলা। চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদের প্রার্থীরা মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। তবে নির্বাচনের দিন ঘনিয়ে এলেও উপজেলা পরিষদের নির্বাচন নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে তেমন আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। অন্যান্যবারের মতো উপজেলাগুলোতে নেই নির্বাচনী আমেজ। তারপরও ভোট চেয়ে চলছে মাইকিং। আর পাড়া-মহল্লার অলিগলি ও হাটবাজারগুলোতে পোস্টারে পোস্টারে ছেয়ে গেলেও এবার প্রচার-প্রচারণায় নেই আগের মতো জৌলুস।
তারপরও বসে নেই প্রার্থীরা। নিজেদের কর্মী সমর্থকদের সঙ্গে নিয়ে দিন রাত ছুটছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। ভোটে জয়ী হতে দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি। আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের পাশাপাশি, নির্বাচন সুষ্ঠু হলে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থীরাও।
সদর উপজেলার আওয়ামী লীগ নৌকা মার্কার প্রার্থী অরুনাংশু দত্ত টিটো জানান, এবার নিয়ে তিনি দুইবার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন। গতবার নির্বাচনে কারচুপি করে বিএনপি প্রার্থী ও বর্তমানে জেলা বিএনপির সভাপতি তৈমুর রহমান কয়েক হাজার ভোটের ব্যবধানে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এবার সাধারণ জনগণ বিএনপি থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়ায় তারা দলীয়ভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেননি।
এবার নির্বাচনে তিনি বিপুল ভোটে বিজয়ী হবেন বলে আশাবাদী। একই উপজেলার ওয়ার্কার্স পার্টির হাতুড়ি মার্কার প্রার্থী গোলাম সারোয়ার সম্রাট জানান, এই নির্বাচনে সাধারণ মানুষ তাদের নিরব ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। মানুষ শান্তি ও সমাজে সুষ্ঠু পরিবেশ চায়। তাই নির্বাচনে সাধারণ মানুষ তাদের যোগ্য প্রার্থীকেই ভোট দেবেন।
পার্শ্ববর্তী বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার আওয়ামী লীগের দলীয় নৌকা মার্কার প্রার্থী আহসান হাবীব বুলবুল জানান, এই উপজেলার মানুষ কতিপয় সন্ত্রাসী ও রাজনৈতিক ব্যাক্তিদের হাতে জিম্মি হয়ে রয়েছেন। সকল ক্ষেত্রে তারা বঞ্চিত। তিনি নির্বাচিত হলে উপজেলাকে মাদক থেকে মুক্ত করে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করবেন। একই উপজেলার আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী মোটরসাইকেল মার্কার স্বতন্ত্র প্রার্থী আলী আসলাম জুয়েল জানান, সাধারণ গরিব মানুষ এই উপজেলায় সরকারি সুবিধা কখনোই ভোগ করতে পারেনি। সরকার থেকে জনগণের জন্য যে বরাদ্দ আসে তা কোথায় যায় সাধারণ মানুষ জানতেও পারে না। তিনি নির্বাচিত হলে বিধবা ভাতা, বয়স্ক ভাতা, কৃষি কার্ডসহ সকল সরকারি বরাদ্দ জনগণের মধ্যে বিতরণ করবেন।
হরিপুর উপজেলায় এবার চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করছেন দুইজন। নৌকার বিপরীতে এবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী মোটরসাইকেল মার্কার স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এ কে এম শামীম ফেরদৌস টগর। তিনি জানান, সীমান্তবর্তী এই উপজেলার বেশির ভাগ মানুষ কৃষিজীবী, এখানে তেমন কোনো কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নেই। তিনি নির্বাচিত হলে এলাকায় ব্যাপক কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবেন। তাই এলাকার উন্নয়নে আবারো মানুষ তাকে নির্বাচিত করবে। আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থী জিয়াউল হাসান মুকুল জানান, হরিপুর উপজেলাটি শান্তি প্রিয়। তাই এলাকার সাধারণ মানুষ উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে এবারো নৌকায় ভোট দেবেন।
রাণীশংকৈল উপজেলার আওয়ামী লীগ সমর্থিত নৌকা মার্কার প্রার্থী সইদুল হক জানান, গত পাঁচ বছর ধরে এই উপজেলায় বিএনপির চেয়াম্যান থাকায় এখানে সাধারণ মানুষ সরকারি বিভিন্ন সুবিধা থেকে বঞ্চিত ছিলেন। কিন্তু এবার মানুষ বুঝতে পেরেছে তারা তাদের নায্য নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। তাই সাধারণ মানুষ এবার নিজের ও এলাকার উন্নয়নের জন্য নৌকায় ভোট দেবে। অপরদিকে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী শাহরিয়ার আজম মুন্না জানান, মানুষ বার বার তাদের নেতা নির্বাচনে ভুল করেছে। কিন্তু এবার মানুষ আগের থেকে অনেক সচেতন, তারা নিজেদের ভাগ্য উন্নয়নে ও এলাকার উন্নয়নে তার মোটর সাইকেল মার্কায় ভোট দিয়ে তাকে জয়যুক্ত করবেন।
পীরগঞ্জ উপজেলার আওয়ামী লীগের নৌকা মার্কার প্রার্থী আক্তারুল ইসলাম জানান, তিনি নির্বাচিত হলে এই উপজেলার উন্নয়নে আরো দৃশ্যমান পরিবর্তন নিয়ে আসবেন। এলাকার উন্নয়নে এবার মানুষ তাকে ভোট দেবেন। অপরদিকে আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী স্বতন্ত্র আনারস মার্কার প্রার্থী রাজেন্দ্র নাথ রায় জানান, এই উপজেলায় নৌকার প্রার্থীর প্রতি সাধারণ মানুষের তেমন আস্থা ও বিশ্বাস নেই। তাই যার ওপর মানুষ আস্থা ও বিশ্বাস রাখতে পারে না তাকে অবশ্যই ভোট দেবে না। মানুষ তাদের যোগ্য প্রার্থীকেই ভোট দেবেন।
এদিকে অন্যান্য বারের থেকে এবারের নির্বাচনে প্রার্থীদের কাছে ভোটারদের প্রত্যাশা অনেক বেশি। ভোটাররা আশা করছেন নতুন জনপ্রতিনিধি আসলে এলাকায় উন্নয়নের ছোঁয়ায় মিলবে, মিলবে দুর্ভোগ থেকে মুক্তি। তাই পছন্দের প্রার্থী যাচাইয়ে ভোটাররা অনেক সচেতন।
সদর ও হরিপুর উপজেলা রির্টানিং কর্মকর্তা ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক নূর কুতুবুল আলম, জানালেন, এখন পর্যন্ত জেলার সব উপজেলা গুলোতে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ রয়েছে। কোথাও কোনো অপরিস্থিকর বা আচরণ বিধি লংঘনের ঘটনা ঘটেনি। আসন্ন ১৮ মার্চ সুষ্ঠু ভোট গ্রহণের জন্য সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। যেকোনো মূল্যে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দেওয়া হবে।
ঠাকুরগাঁও সদর, বালিয়াডাঙ্গী, হরিপুর, রাণীশংকৈল ও পীরগঞ্জ মোট ৫টি উপজেলার ৫৩টি ইউনিয়নের মোট ভোটার সংখ্যা ৯ লাখ ৯৫ হাজার ৯৫৪ জন। এর মধ্যে মহিলা ভোটার ৪ লাখ ৯২ হাজার ৮২৩ এবং পুরুষ ভোটার ৫ লাখ ৩ হাজার ১৩১ জন। ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ৪০২টি। এবার চেয়ারম্যান পদে ১৯ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২৭ ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১৩ জন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন