কলকাতার বাংলা দৈনিক আজকাল পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেনের একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশ করেছে আজ। ওই সাক্ষাৎকারে তিস্তার পানিবণ্টন নিয়ে তিনি বলেছেন, স্বামী–স্ত্রীর মধ্যে ভালোবাসা থাকলে ছোটখাটো সমস্যা কেউ সমস্যা হিসেবে দেখে না। এগুলো সব আস্তে আস্তে চলে যায়। আমাদের সম্পর্ক অত্যন্ত উষ্ণ।
এখানে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো:
বড়ভাই দেশের অর্থনীতি বিকাশে বড় সাফল্যের দাবিদার। মন্ত্রী হয়েই পররাষ্ট্রের দায়িত্ব আপনার কাঁধে। বাড়তি চাপে আছেন?
এ কে আবদুল মোমেন: আমার বড়ভাই অনেক বেশি ট্যালেন্টেড। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে যে দায়িত্ব দিয়েছিলেন, তিনি তা খুব ভালোভাবে পালন করেছেন। তার মধ্যে প্রতিভার কোনো অভাব ছিল না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমার ওপর আস্থা রেখেছেন। সেই আস্থার প্রতি সুবিচার করতে পারাটাই বড় চ্যালেঞ্জ। আশা করি তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশের মাথা যাতে আরও উঁচু হয়, সেই লক্ষ্যে কাজ করতে পারবো।
দায়িত্ব নিয়ে প্রথম বিদেশ সফর ভারতে। বাড়তি গুরুত্ব?
ভারত আমাদের বন্ধু প্রতিবেশী। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও ভারতকে বাড়তি গুরুত্ব দেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবারের ঐতিহাসিক জয়ের পর প্রথম শুভেচ্ছা জানান আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন নতুন সরকারকে। তাই দিল্লি দিয়ে শুরু বিদেশ সফর।
কেমন হলো ভারত সফর? মন্ত্রী হিসাবে অভিজ্ঞতা কেমন?
খুব ভালো। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ থেকে শুরু করে সকলেই খুব আন্তরিক। রাহুল গান্ধীর সঙ্গে অবশ্য দেখা হয়নি। তবে কংগ্রেসনেতা মল্লিকার্জুন খাড়্গে, আনন্দ শর্মাদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক সমস্যা নিয়ে খোলামেলা আলোচনাও হয়েছে। আগামী দিনে আমাদের বন্ধুত্ব আরও দৃঢ় হবে। উভয় দেশের উন্নয়ন হবে আরো বেগবান।
বহুলচর্চিত তিস্তার পানি নিয়ে জট খুলেছে?
স্বামী–স্ত্রীর মধ্যে ভালোবাসা থাকলে ছোটখাটো সমস্যা কেউ সমস্যা হিসেবে দেখে না। এগুলো সব আস্তে আস্তে চলে যায়। আমাদের সম্পর্ক অত্যন্ত উষ্ণ। আমি আশা করি, বিশ্বাস করি, শুধু তিস্তা কেন, আরও যে ৫৩টা নদী আছে, কিম্বা অন্যবিধ সমস্যা...! বড় বড় সমস্যা আমরা সমাধান করতে পেরেছি। সমুদ্র পেরেছি। সীমান্ত পেরেছি। গঙ্গার পানি পেরেছি। এগুলোও পারব।
পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরা যোগাযোগ বাড়াতে আগ্রহী। ভারতের উত্তর–পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলিও। বাংলাদেশ কী চায়?
আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিশ্বাস করেন, কানেক্টিভিটি ইজ প্রোডাক্টিভিটি। এই অঞ্চলের সবাই যাতে ভালো থাকতে পারে, যাতে ভালো ব্যবসা করতে পারে তার জন্যে আমরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে কানেক্টিভিটি বা যোগাযোগে বাড়তি গুরুত্ব দিচ্ছি। আশেপাশে যতগুলো রাজ্য আছে, আমাদের সাথে সাথে তাদেরও উন্নতি হবে। নিয়মিত যোগাযোগ বাড়লে দুই বাংলারই ভালে হবে।
এনআরসি নিয়ে আসামের পরিস্থিতিতে আপনারা উদ্বিগ্ন?
মোমেন: নাহ্, আমরা উদ্বিগ্ন নই। কারণ, এটা ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। তারাই সমাধান করবে। তারা সেই অঙ্গীকারও করেছে।
বিরোধীদের কার্যত নিশ্চিহ্ন করার ম্যাজিকটা কী?
অভাবনীয় অর্থনৈতিক সাফল্য। সঙ্গে জাতীয় নিরাপত্তা। হরতাল হয়নি। গত ১০ বছরে ব্যবসায়ী, অভিভাবক সকলকেই খুশি করতে পেরেছে আওয়ামী লীগ সরকার। সব দলের মানুষই খুশি। বাংলাদেশের মানুষ আর না খেয়ে মরেন না। জিডিপি–র হার বেড়েছে। নিম্ন আয়ের দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছি। পরিকাঠামোর ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। তাই মানুষ স্বতঃস্ফুর্তভাবে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকারকে ফের ক্ষমতায় নিয়ে এসেছেন। ইচ্ছা, সততা, ঐকান্তিকতা থাকলে সাফল্য আসবেই।
এখন আপনাদের সামনে লক্ষ্য কী? কী চাইছেন আপনারা?
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী উন্নয়নের রূপরেখা তৈরি করেছেন। আমরা তার সৈনিক। সেই লক্ষ্যে কাজ করে চলেছি। ২০৪১ সালে তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়তে চান। যেখানে মানুষের ক্ষুধা থাকবে না। অভাব থাকবে না। বেকারত্ব থাকবে না। সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গড়ে উঠবে। ২০৩০–এই আমরা টেকসই (সাসটেনেব্ল) উন্নত দেশে উন্নীত হতে চাই। ২০৪১-এ বাংলাদেশ হবে উন্নত দেশ। নতুন প্রযুক্তি, নতুন নতুন বিনিয়োগের লক্ষ্যে ইন্শাল্লাহ আমরা কাজ করে চলেছি।
মন্ত্রী হয়ে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কী মনে করছেন?
রোহিঙ্গা সমস্যা অবশ্যই বড় সমস্যা। তবে আইনস্টাইন বলেছিলেন না, সমস্যা জানলে সমাধান সহজ। আমরা সমস্যাটা জানি। তাই সমাধানও খুঁজে পাব। উসকানি দেয় কেউ কেউ। প্রতিবেশীরাও অনেকেই দেয়। আমরা পজেটিভ মাইন্ড নিয়ে কাজ করছি। তাই সমস্যার সমাধানেও আশাবাদী। মিউনিখে বিশ্বনেতাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর কথা হবে। গোটা দুনিয়ায় ১৯৩টি দেশ আছে। তারাও বিষয়টি নিয়ে ভাবুক। জার্মানিতে মিউনিখ সিকিওরিটি কনফারেন্সের ফাঁকে রাষ্ট্রনেতাদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনাতেও বিষয়টি উঠবে। প্রচেষ্টা চালু থাকবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসাবে অগ্রাধিকারের তালিকায় কী রয়েছে?
ইকোনমিক ডিপ্লোমেসি। ইওরোপীয় দেশগুলির মধ্যে জার্মানি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বন্ধু। সেখানেও বিনিয়োগ নিয়ে কথা হবে। সেখান থেকে আরব আমিরাত। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার। প্রধানমন্ত্রীর সফর থেকে লাভবান হবে বাংলাদেশ। বেশকিছু দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে বলে আশা।
ভারতের সঙ্গে কেমন সম্পর্ক আশা করেন?
ভারত আমাদের মিত্র দেশ। ঐতিহাসিকআমাদের বন্ধুত্ব। মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদান ভোলা যাবে না। সেই বন্ধুত্ব আরও মজবুত করতে চাই। উভয় দেশের মানুষের উন্নয়নে সেই সম্পর্ক কাজে লাগাতে হবে। আমি আশাবাদী এবং আত্মবিশ্বাসী।
পালাবদল
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন