গ্রেফতার এড়াতে কেন্দ্র থেকে ১৭ দফা নির্দেশনা * মামলা নেই বা সব মামলায় জামিনে- এমন নেতাকর্মীদের পোলিং এজেন্ট করা হয়েছে
গ্রেফতার এড়াতে ভোট কেন্দ্রে নিবাচনী পোলিং এজেন্ট নিয়োগে ‘কৌশলী’ অবস্থান নিয়েছে ধানের শীষ প্রার্থীরা। বিগত সিটি নির্বাচনসহ স্থানীয় নির্বাচনের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পোলিং এজেন্ট নিয়োগের বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।
যাদের বিরুদ্ধে মামলা নেই বা সব মামলায় জামিনে আছে- এমন দলীয় নেতাকর্মী-সমর্থকদের পোলিং এজেন্ট করা হয়েছে। এক্ষেত্রে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে সাহসী ও দলের নিবেদিত নেতাকর্মীদের। অনেকটা গোপনেই প্রতিটি আসনে তাদের নিয়ে কর্মশালাও সম্পন্ন করেছে। নির্বাচনের দিন ‘করণীয়’ সম্পর্কে ইতিমধ্যেই ১৭টি নির্দেশনা কেন্দ্র থেকে সব আসনের ধানের শীষের প্রার্থীদের কাছে পাঠিয়েছে ঐক্যফ্রন্ট।
এতে ৩০ ডিসেম্বরের আগ পর্যন্ত পোলিং এজেন্টদের গ্রেফতার এড়ানোর জন্যও নির্দেশনা রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানাগেছে এসব তথ্য।
কেন্দ্রীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির অন্যতম সদস্য বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল যুগান্তরকে বলেন, ভোট কেন্দ্রে দলীয় পোলিং এজেন্ট নিয়োগে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। বিগত স্থানীয় নির্বাচনে যা হয়েছে ৩০ ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে এবার আর তা হবে না। শত প্রতিকূলতার মধ্যেও বিভিন্ন দিক বিবেচনা করেই পোলিং এজেন্ট দেয়া হয়েছে। ভয়ভীতি উপেক্ষা করেই তারা ভোট কেন্দ্রে থাকবেন। কিছু নির্দেশনাও ধানের শীষের প্রার্থীদের কাছে পাঠানো হয়েছে।
তিনি বলেন, ক্ষমতাসীন দল পুলিশের সহায়তায় যতই গ্রেফতার-হামলা-মামলা করুক লাভ হবে না। কোনো ষড়যন্ত্রই এবার আর কাজে আসবে না। ধানের শীষের জোয়ার শুরু হয়েছে। ৩০ ডিসেম্বর ধানের শীষের বিজয় হবে।
সূত্র জানায়, পোলিং এজেন্ট নিয়োগে করণীয় ঠিক করতে এক সপ্তাহ ধরেই গুলশান কার্যালয়ে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন ঐক্যফ্রন্ট গঠিত কেন্দ্রীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটি। তারা ধানের শীষ প্রার্থীদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনাও দিয়েছেন।
নির্বাচন পরিচলনা কমিটির আরও এক সদস্য যুগান্তরকে বলেন, যাদের বিরুদ্ধে মামলা নেই বা সব মামলায় জামিনে আছে- এমন দলীয় নেতাকর্মী-সমর্থকদেরই নির্বাচনী এজেন্ট করতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। সাহসী ও দলের জন্য নিবেদিতদের প্রাধান্য দিতে বলা হয়েছে।
কেন্দ্রে নির্বাচনী পোলিং এজেন্টদের করণীয় নিয়ে ১৭ দফা নির্দেশনা হচ্ছে-
১. ভোট কেন্দ্রের প্রতি লাইনে বা বুথে একজন করে ধানের শীষের এজেন্ট থাকবে।
২. সকাল ৮টায় ভোট শুরুর আগে প্রতি বুথে রাখা ব্যালট বাক্সটি খালি আছে কিনা তা দেখা।
৩. এজেন্টদের ব্যালট বাক্সের নম্বরটি লিখে রাখা। ৪. প্রতি বুথে কতটি ভোট কাস্ট হচ্ছে তার হিসাব রাখা। প্রতি বইয়ে ১০০টি ব্যালট থাকে। কতটি বই গেল এবং সর্বশেষ বই থেকে কতটি ব্যালট পেপার গেল তা দেখে যার যার বুথে কাস্টিং ভোটের হিসাব লিখে রাখা।
৫. চূড়ান্ত ভোট গণনার সময় এক কেন্দ্রে ধানের শীষের একজন এজেন্ট থাকতে পারবেন। যিনি থাকবেন তার হাতে ব্যালট বাক্সের নম্বর ও কাস্টিং ভোটের হিসাব জমা না দিয়ে অন্যরা বের হবেন না।
৬. গণনার সময় যিনি থাকবেন তিনি ব্যালট বাক্সের নম্বরগুলো মিলিয়ে নেবেন। নম্বর না মিললে বুঝতে হবে ভোটের বাক্স বদলে ফেলা হয়েছে।
৭. গণনার আগেই কাস্টিং ভোটের হিসাব প্রিসাইডিং অফিসার থেকে নেয়া এবং নিজের হিসাবের সঙ্গে মিলিয়ে নেয়া।
৮. গণনার পর সব মার্কার ভোট ও বাতিল ভোটগুলো যোগ করলে কাস্টিং ভোটের সমান হবে। বেশি হলে বুঝতে হবে বাহির থেকে সিল মারা ব্যালট পেপার ঢুকানো হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে প্রিসাইডিং অফিসারকে জানাতে হবে। কাউন্টিং ভোট কাস্টিং ভোটের চেয়ে কম হলে বুঝতে হবে কিছু ভোট গায়েব হয়েছে। দুয়েকটি মিস হলে সমস্যা নেই। বেশি হলে প্রিসাইডিং অফিসারকে জানাতে হবে।
৯. বাছাইয়ের সময় লক্ষ্য রাখতে হবে, ধানের শীষে সিল মারা ব্যালট অন্য বান্ডিলে যাচ্ছে কিনা। লক্ষ্য রাখতে হবে, নৌকার বান্ডিলে অন্য প্রতীকের ব্যালট যাচ্ছে কিনা।
১০. ভোটের সময় কেউ ভোট কেন্দ্রে বারবার এসে জাল ভোট দিচ্ছে কিনা খেয়াল রাখা। অনিয়ম দেখলেই সহকারী/প্রিসাইডিং অফিসারকে জানানো।
১১. প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে নির্বাচনী এজেন্ট যারা থাকবেন তাদের এখন থেকে সাবধানে থাকা। প্রয়োজনে কেন্দ্রে যাওয়ার আগ পর্যন্ত আত্মগোপনে থাকার ব্যবস্থা করা।
১২. ফলাফল বুঝে পাওয়ার আগে রেজাল্ট শিটে স্বাক্ষর না করা।
১৩. প্রিসাইডিং অফিসারের স্বাক্ষর ছাড়া রেজাল্ট শিট নেয়া যাবে না।
১৪. রেজাল্ট শিট ও ব্যালট পেপারের হিসাবের শিট ছাড়া কেন্দ্র থেকে বের না হওয়া।
১৫. জোরপূর্বক বের করে দিলে সঙ্গে সঙ্গে রিটার্নিং অফিসার, প্রিসাইডিং অফিসার, ধানের শীষের/প্রার্থীর কেন্দ্রীয় এজেন্ট, মিডিয়া, পর্যবেক্ষক ও আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বে যারা আছেন তাদের জানানো। ফোন নম্বরগুলো আগে থেকে সংগ্রহ করা। কল দিতে হবে ভয়েস রেকর্ড অন করেই।
১৬. আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নম্বরগুল ভোটের আগের দিন সন্ধ্যার পর পরিচিত একজন প্রিসাইডিং অফিসারের কাছ থেকেও নেয়া যাবে।
১৭. প্রতিটি ভোট কেন্দ্রের বাইরে আরও একজন এজেন্ট থাকবেন যার হাতে প্রয়োজনীয় ফোন নম্বরগুলো থাকবে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন