দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীর বিক্রমকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের প্রার্থীতা থেকে অনেকটা ছুড়েই ফেলে দিলো আওয়ামী লীগ।
মায়ার পরিবর্তে তার আসনে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নুরুল আমিন খান রুহুল।
এক সময়ের ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের একচ্ছত্র অধিপতি মায়া চৌধুরী চাঁদপুর-২ (মতলব উত্তর-মতলব দক্ষিণ) আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হওয়ার জন্য মনোনয়ন দাখিল করেছিলেন এবং রিটার্নিং অফিসারের যাচাই-বাছাই পর্বেও উত্তীর্ণ হন।
শুক্রবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের মায়াকে বাদ দিয়ে ঐ আসনে রুহুলের নাম ঘোষণা করেন।
এছাড়া চাঁদপুর-৪ আসনে সাবেক সংসদ সদস্য ড. শামছুল হক ভূঁইয়াকে বাদ দেয়া হয়েছে। এ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন সাংবাদিক মোহাম্মদ শফিকুর রহমান।
এর আগেচূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা ঘোষণার সময় রিটার্নিং অফিস থেকে বৈধতা পেয়েছিলেন মহাজোটের এ দুই হেভিওয়েট প্রার্থী।
যেসব কারণে মায়াকে বাদ দিলো আওয়ামী লীগ
মায়াকে নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই নানা ধরণের ঝামেলা পোহাচ্ছিল আওয়ামী লীগ। দুদকের দুর্নীতি মামলায় ফেঁসে যাওয়া থেকে শুরু করে দলীয় কর্মকাণ্ডে অদক্ষতা, পুত্র-জামাইয়ের নানা কেলেংকারি এবং নেত্রীর সিদ্ধান্ত প্রতিপালনে অনীহাসহ বিভিন্ন কারণে মায়ার উপর থেকে মুখ তুলে নিয়েছেন দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা।
মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া ২০০৮ সালে জ্ঞাত আয়ের বাইরে অবৈধভাবে ৬ কোটির বেশি টাকার সম্পদ অর্জনের মামলায় ১৩ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন। ২০১০ সালের অক্টোবরে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ কেবলই আইনি প্রশ্নে ওই রায় বাতিল করেন। দুদক এর বিরুদ্ধে আপিল করে। ১৪ জুন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় বাতিল করে হাইকোর্টে আপিলের পুনঃশুনানির নির্দেশ দেন। অবশ্য ৭ই অক্টোবরের শুনানিতে মায়া ১৩ বছরের সাজা থেকে খালাস পান।
অবিভক্ত ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক এই সাধারণ সম্পাদক ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের একচ্ছত্র অধিপতি। সবার কাছে তিনি মায়া চৌধুরী নামেই পরিচিত। রাজনীতির নতুন মেরুকরণে মহানগর আওয়ামী লীগের উত্তর ও দক্ষিণ নামে দুটি কমিটি গঠন করা হলে তাতে ঠাঁই মেলেনি এই হর্তাকর্তার।
দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কেন তাকে দুটি কমিটির কোথাও জায়গা দিলেন না তা নিয়ে দলটির ভেতরে উঠেছিল নানা ধরনের গুঞ্জন। দলীয় সূত্রগুলো জানায়, অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও দলাদলি দূর করতে না পারায় এবং ভবিষ্যতেও তাকে দায়িত্বে রাখা হলে একই ধরনের ঘটনা ঘটার আশঙ্কায় দলীয় সভাপতি এমন কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
সূত্র জানায়, প্রথমে বিভক্ত ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের দায়িত্বে থাকতে চাননি মায়া চৌধুরী। পরে অবশ্য সিদ্ধান্ত বদলে যে কোনও অংশের দায়িত্বে থাকতে বার বার আগ্রহ প্রকাশ করেন তিনি। কিন্তু তার এই আগ্রহকে আর গুরুত্ব দেননি শেখ হাসিনা। সংগঠনকে কোন্দলমুক্ত রাখার জন্যেই ঢাকা মহানগরের কোনও দায়িত্বে তাকে রাখতে চাননি শেখ হাসিনা। আর এ কারণেই মায়ার পাশাপাশি মহানগর আওয়ামী লীগের মূল দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে কামরুল, হাজী সেলিম ও সাঈদ খোকনকেও।
তার বিরুদ্ধে আরেকটি অভিযোগ, ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সময়ে মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া দল সমর্থিত প্রার্থীদের পক্ষে সক্রিয় ছিলেন না। এটিও নগরের রাজনীতি এবং দলীয় মনোনয়ন থেকে তাকে বাদ দেওয়ার অন্যতম কারণ হতে পারে।
ঢাকার রাজনীতিতে একসময় বিশাল অবস্থানে থাকা মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়াকে তার সন্তানরা সরকারের দুই মেয়াদেই বিব্রত করেন। আওয়ামী লীগের শুরু হওয়া ১৯৯৬ সালে শাসনকালের মেয়াদে মায়া প্রতিমন্ত্রী থাকাকালে বড় ছেলে দীপু চৌধুরীকে ঘিরে নানা কাহিনী তাকে বিব্রত করেছিল। এ মেয়াদে ছোট ছেলে রনি চৌধুরী। গুলশান, বনানী ও উত্তরায় মন্ত্রীপুত্র রনি চৌধুরীর বিরুদ্ধে অভিযোগের যেন শেষ নেই।
অন্যদিকে, মেয়ের জামাতা নারায়ণগঞ্জের সেভেন মার্ডার কাহিনীতে জড়িয়ে চাকরিচ্যুত সেনা কর্মকর্তা তারেক সাঈদকে নিয়েও বিতর্কিত মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক এই প্রতাপশালী নেতা।
এসব বিতর্ক ছাড়াও তার বিরুদ্ধে রয়েছে হাজারো অভিযোগ। বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন এসব কারণেই আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ধীরে ধীরে অপাংক্তেয় হয়ে পড়েন মায়া্। যার চূড়ান্ত পরিণতিতে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের চূড়ান্ত মনোনয়ন বঞ্চিত হলেন তিনি। মায়ার মত প্রভাবশালী একজন নেতাকে মনোনয়ন না দেয়া তাকে অনেকটা দল থেকে ছুড়ে ফেলার মত।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন