বরগুনা-০২(বামনা-পাথরঘাটা-বেতাগী) আসনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ও রাজাকারপুত্র শওকত হাচানুর রহমান রিমনের বিরুদ্ধে একজোট হয়েছেন এই আসনের নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। তাদের এই ঐক্য আরো বেগবান হয়েছে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার বক্তব্যের পর।
গত ১৪ নভেম্বর মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোনো রাজাকারের সন্তানকে মনোনয়ন দেওয়া হবে না। এরপর থেকেই সাংসদ রিমনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
সূত্র জানায়, সংসদ সদস্য রিমনের বাবা খলিলুর রহমান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন একজন চিহ্নিত রাজাকার ছিলেন। এসময় তার নেতৃত্বে মুক্তিকামী নিরীহ জনতার উপর বর্বর হামলাসহ বিভিন্ন এলাকায় অগ্নিসংযোগের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, তার বাবা তৎকালীন বরগুনাসহ এ অঞ্চলের শান্তি কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
এ বিষয়ে পাথরঘাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাবির হোসেন বলেন, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন খলিল রাজাকারের নির্দেশে (সংসদ সদস্যের বাবা) আমার ফুফা মজিবুর রহমান কনককে হত্যা করা হয়েছিলো। এ ঘটনায় মামলা করাও হয়েছিলো। কিন্তু পচাত্তর পরবর্তী সময়ে আর সে মামলা এগোয়নি। শুধু তাই নয় সংসদ সদস্যের বাবা অনেককে হত্যা, লুট ও অগ্নিসংযোগের মতো ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছেন। কিন্তু তিনি মারা গেলে তার বিরুদ্ধে আর কেউই মামলা করেন নি।
জাবির হোসেন আরো বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আকুল আবেদন থাকবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বরগুনা-২ আসনে রাজাকারপুত্র রিমনকে যেন মনোনয়ন না দেওয়া হয়।
ভাস্কর্যশিল্পী ও মুক্তিযোদ্ধা মনি মন্ডল বলেন, খলিল রাজাকার আমাদের বাড়িতে এসে চারটি ঘরে আগুন দেন। এর আগে লুটতরাজ চালান। এ সময় আমার বড় চাচা শরৎ মন্ডল খলিল মিয়ার নির্দেশে অপর রাজাকার সুলতানের গুলিতে শহীদ হন।
মনি মন্ডল আরও বলেন, রাজাকারের সন্তান হয়ে, পিঠ বাঁচাতে আওয়ামী লীগে এসে তিনি (শওকত হাচানুর) সংসদ সদস্য পর্যন্ত হয়েছেন। তবে এবার প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, রাজাকারের সন্তানকে মনোনয়ন দেওয়া হবে না। তার সঙ্গে আমরাও একমত। আর যেন কোনো রাজাকারের সন্তানকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়া না হয়।
২০১৩ সালের ২৬ জুলাই সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন বরগুনা-২ আসনের সংসদ সদস্য গোলাম সবুর। এতে আসনটি শূন্য হয়। পরে উপনির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন শওকত হাচানুর। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী গোলাম সরোয়ার হিরু। উপনির্বাচনের প্রায় তিন মাস পর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত হন শওকত হাচানুর। তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আবুল হোসেন সিকদার।
সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর তার স্বেচ্ছাচারি কর্মকাণ্ডে বারবার আলোচনার শীর্ষে উঠে আসেন তিনি। কখনো সালিশি বৈঠকে নারীর মাথায় বিষ্ঠা ঢেলে দেওয়া, কখনো সরকারি কর্মচারিকে মারধর, জমি দখল আবার কখনো দলীয় নেতাকর্মীদের মারধরও করেছেন তিনি।
এ বিষয়ে বরগুনা-২ আসনের সংসদ সদস্য শওকত হাচানুর রহমান রিমন বলেন, শেখ হাসিনা আমাকে রাজাকারপুত্র জেনেই মনোনয়ন দিয়েছিলো। আমি সারাজীবন সততার সাথে মানুষের জন্য কাজ করে গেছি। আগামী নির্বাচনে তিনি চাইলে আমি আবারো নৌকার নির্বাচন করবো।
এদিকে এমপি রিমনের বিরুদ্ধে একজোট হয়েছেন সকল মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে বরগুনা -২(বামনা-পাথরঘাটা-বেতাগী ) আসনে নৌকার মনোনয়ন চাইছেন ৩৪জন।
এরা হলেন- বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির অর্থ বিষয়ক সম্পাদক সুভাষ চন্দ্র হাওলাদার, বরগুনা-২ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য শওকত হাচানুর রহমান রিমন, বামনা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাইতুল ইসলাম লিটু, বরগুনা পৌরসভা থেকে দুদুবার নির্বাচিত (বর্তমান) মেয়র ও ব্যবসায়ী মো. শাহাদাত হোসেন, বাংলাদেশের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ও বামনা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হারুন অর রশীদ, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ফারুক মেজবাহ উদ্দিন খান, পাথরঘাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাবির হোসেন ও পাথরঘাটা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলাম রিপন, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক মো. মাহবুবুর রহমান টুকু এবং সাবেক ছাত্রনেতা ও কৃষিবিদ শামসুল আলম, বর্তমান সংরক্ষিত নারী আসনের সাংসদ নাসিমা ফেরদৌসী, পাথরঘাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলমগীর হোসেন ও পাথরঘাটা উপজেলা পরিষদের নারী ভাইন চেয়ারম্যান ফাতিমা পারভীন।
এছাড়াও এই আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র কিনেছেন সামসুল আলম, মামুনুর মিঠু, সাইফুল ইসলাম সরওয়ার, মিজানুর রহমান, সাইদুর রহমান সবুজ, হাসিবুর রহমান হাসিব, এন্টুনি গোমেজ, জামাল হোসাইন, জয়নাল আবেদিন খান, ফিরোজ আলম টিটু, আনোয়ার আকন, তৌহিদুল ইসলাম, গোলাম নাসির প্রমুখ।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন