গুলশানে বিএনপি চেয়াপারসনের কার্যালয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বৈঠক শেষে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়েছেন, আগামীকাল দুপুর ১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। সেখানেই ঐক্যফ্রন্টের বৈঠকের সিদ্ধান্তসমূহ জানানো হবে।
আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঐক্যফ্রন্ট অংশ নিবে কিনা সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে রাত সাড়ে ৮টা থেকে ১১টা পর্যন্ত বৈঠক করেন ঐক্যফ্রন্টের নেতারা।
এর আগে শনিবার রাতে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে ২৩ দলের বৈঠক শেষে বেরিয়ে যাওয়ার সময় উপস্থিত সাংবাদিকদের এলডিপির চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) ড. অলি আহমদ বীর বিক্রম জানান, একাদশ জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা না করার ব্যাপারে আগামী দু’দিনের মধ্যে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২৩ দলীয় জোট।।
তিনি বলেন, ‘জোটের প্রধান দল বিএনপি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে কথা বলে আগামী দু’দিনের মধ্যে নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে। আমাদের প্রধান দাবি ছিল খালেদা জিয়ার মুক্তি, সেটা এখনো পূরণ হয়নি। বিরোধী নেতাকর্মীদের হয়রানি না করার প্রতিশ্রুতি কাগজে কলমে রয়ে গেছে। এখনো গ্রেপ্তার, মামলা অব্যাহত রয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করে ভোটে যাওয়া না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’
রবিবারের মধ্যে জোটগতভাবে নির্বাচনে যাওয়ার বিষয়টি ইসিকে জানাতে হবে, সেক্ষেত্রে ২০ দল কী করবে? এমন প্রশ্নের জবাবে অলি আহমদ বলেন, ‘আমরা চিঠি দেব। সে চিঠির ভাষা হবে এমন, ‘যদি আমরা নির্বাচনে যাই, তাহলে নিবন্ধিত দলগুলোর প্রতীক হবে নিজ দলের। আর অনিবন্ধিত দলগুলোর প্রতীক হবে বিএনপির প্রতীক।’
লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি এল ডিপির চেয়ারম্যান কর্নেল অব. অলি আহমদের সভাপতিত্বে ২০ দলীয় জোটের বৈঠকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ছাড়াও জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, জামায়াতের আবদুল হালিম, বিজেপির আন্দালিব রহমান পার্থ, খেলাফত মজলিশের মাওলানা মুহাম্মদ ইসহাক, আহমেদ আবদুল কাদের, কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, এলডিপির রেদোয়ান আহমেদ, জাগপার তাসমিয়া প্রধান, এনডিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান, মুসলিম লীগের এএইচএম কামরুজ্জামান খান, পিপলস লীগের গরীবে নেওয়াজ, ইসলামিক পাটির আবু তাহের চৌধুরী, ন্যাপ ভাসানীর আজহারুল ইসলাম , ন্যাপের এমএন শাওন সাদেকী, ইসলামী ঐক্যজোটের মাওলানা আবদুল করিম, ডিএলের সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি, সাম্যবাদী দলের সাঈদ আহমেদ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মাওলানা নুর হোসেইন কাসেমী, মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস, মাওলানা মহিউদ্দিন ইকরাম, পিপলস পার্টি অব বাংলাদেশের আহ্বায়ক রিটা রহমান, জাতীয় জনদলের চেয়ারম্যান ইহসানুল হুদা ও মাইনেরটি পার্টির সাধারণ সম্পাদক সুপ্রীতি কুমার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকের সূত্রগুলো বলছে, আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ গ্রহণের বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটি ও বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২৩ দলীয় জোট। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি তারা। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে ফের বৈঠকে বসছেন তারা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বৈঠকের পর।
আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২৩ দল অংশ নিবে কিনা সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে
শনিবার সন্ধ্যায় বৈঠক করে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটি এবং ২৩ দলীয় জোট নেতারা। ওই বৈঠকেই নির্বাচনে অংশ গ্রহণের বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
তবে বৈঠকে নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়ার বিষয়ে মিশ্র মতামতও দিয়েছেন শরিক দলের নেতারা।
জোটের বৈঠক শেষে কয়েকজন নেতা এসব তথ্য জানিয়েছেন। তারা বলেন, আজকের বৈঠকে আগামী নির্বাচনে যাওয়া বা না যাওয়ার বিষয়ে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। সব দল নিজেদের মতামত দিয়েছে। চূড়ান্তভাবে সিদ্ধান্ত নিতে আরো সময় লাগবে। তবে নির্বাচনে অংশ গ্রহণের বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। নির্বাচনে অংশ গ্রহণের বিষয়েই বেশি মতামত এসেছে
কয়েকটি শরিক দল জানিয়েছে, বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে তারাও অংশ নেবে। এছাড়াও নির্বাচনে অংশ নিলে পরবর্তী অবস্থা কেমন হবে আর না নিলে কেমন হবে এসব বিষয়ে সবাই নিজেদের মতামত তুলে ধরেছেন।
এছাড়া ২৩ দলীয় জোট যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে তাহলে নিজ নিজ দলীয় প্রতীকে অংশ নেবেন জোটের শরিকরা। তবে যাদের দলের নিবন্ধন নেই তারা জোটগতভাবে ধানের শীষ প্রতীকে অংশ নেবে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ বলেন, আমি ও আমার দল নিজ প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নেব।
এর আগে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার পরে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে ২৩ দলীয় জোটের বৈঠক হয়।
বৈঠকে ২৩ দলীয় জোটের নেতাদের মধ্যে জোটের সমন্বয়ক বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, জামায়াতে ইসলামীর আবদুল হালিম, এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ, বিজেপির সভাপতি আন্দালিব রহমান পার্থ, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, জাগপার তাসমিয়া প্রধান, খেলাফত মজলিসের মাওলানা ইসহাক, লেবার পার্টির ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, সাম্যবাদী দলের কমরেড সাঈদ আহমেদ, ডিএলের সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের নূর হোসেন কাসেমী, ইসলামী ঐক্যজোটের মাওলানা আব্দুর রকিব প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে বিকেল ৫টার দিকে বৈঠকে বসেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে বৈঠকে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, রফিকুল ইসলাম মিয়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
স্থায়ী কমিটির বৈঠক শেষে জোটের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসে দলটি। এরপর রাত সাড়ে ৮টার দিকে গুলশান কার্যালয়ে বৈঠকে বসে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা। এই বৈঠকেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি, ২৩ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট অংশ নেবে কিনা।
তবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বৈঠকটি রাত ১১টার দিকে শেষ হলেও বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানা যায়নি।
প্রসঙ্গত, গত ৮ নভেম্বর জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া এক ভাষণে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা। তফসিল অনযায়ী, মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ দিন ১৯ নভেম্বর। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই করা হবে ২২ নভেম্বর। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ২৯ নভেম্বর। আর ভোট হবে ২৩ ডিসেম্বর।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন