ভোট ঘিরে জোটের রাজনীতিতে বিএনপির তরীতে চার থেকে ১৯টি দল উঠেছে। বলা হয়, এসব দলের বেশিরভাগই এক নেতা সর্বস্ব।সামনেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সেই নির্বাচন সামনে রেখেও একাধিক জোটের তৎপরতা স্পষ্ট। এরই অংশ হিসেবে গত শনিবার আত্মপ্রকাশ ঘটেছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের।
এই জোটের নেতৃত্বে আছেন প্রবীণ আইনজীবী ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন। রাজপথের বিরোধী দল বিএনপির আগ্রহেই মূলত এই জোট। ঢাউস জোটে বিএনপি জোটের দলগুলো ছাড়াও যুক্ত হচ্ছে, গণফোরাম, জেএসডি, নাগরিক ঐক্যসহ আরো বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল।
সাবেক রাষ্ট্রপতি ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বিকল্পধারারও এই জোট প্রক্রিয়ায় থাকার কথা ছিল। তবে শেষ মুহূর্তে তিনি ছিটকে পড়েন। প্রবীণ এই রাজনীতিককে বাদ রেখে ৭ দফা দাবি ও ১১ লক্ষ্য নিয়ে আত্মপ্রকাশ করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।
অবশ্য বিকল্পধারার একটি অংশ ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে বুঝতে পারার পর বি. চৌধুরী কেন্দ্রীয় একাধিক নেতাকে ছাটাই করেন।
গত দু’দিনে রাজনীতির প্রধান আলোচ্য ইস্যু নতুন জোট ও বি. চৌধুরী। জোট থেকে বি. চৌধুরীর ছিটকে পড়ার নেপথ্য কারণ হিসেবে আসন ভাগাভাগিকে সামনে আনা হচ্ছে।
অবশ্য জোট থেকে বাদ পড়ার পর সংবাদ সম্মেলনে এই প্রসঙ্গই সামনে আনেন সাবেক এই রাষ্ট্রপতি, ‘দুটি শর্তে আমি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে ফিরতে রাজি আছি। স্বাধীনতাবিরোধিদের এই জোটে না রাখা। আর আগামী সংসদ ঘিরে ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষা করা।’
এক্ষেত্রে তিনি শর্ত দেন, জোটের শরিক কোনো দলকেই ১৫০ আসনের বেশি দেয়া ঠিক হবে না।
সূত্রের দাবি, বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গঠন প্রক্রিয়ার বিভিন্ন বৈঠকেও বিকল্পধারা আসন বণ্টনের বিষয়ে এই দাবি তুলে ধরে। কিন্তু, বিএনপির মতো বড় দলের পক্ষে শরিকদের জন্য ১৫০ আসন ছেড়ে দেয়া বা নিজেদের জন্য রাখা সম্ভব নয়। সেখানেই দ্বন্দ্বের শুরু হয়, এই ইস্যুতে ড. কামালরা ছাড় দিলে শেষ পর্যন্ত জোট প্রক্রিয়া থেকে মাইনাস হয়ে পড়েন বি. চৌধুরী।
দীর্ঘদিন ধরেই কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে বিএনপি। দলটির প্রধান দুই নেতা সম্প্রতি দণ্ডিত হয়ে কারাগার ও নির্বাসনে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নতুন জোটে আপাতত নির্বাচনের আসন কেন্দ্রীক কোনো তৎপরতা নেই, সত্য। কিন্তু, একটা পর্যায়ে তা আসবে। সেক্ষেত্রে বিএনপি কঠিন চাপের মুখে পড়বে।
কারণ হিসেবে তারা বলছেন, এক নেতা সর্বস্ব দল হলেও দর কষাকষিতে কেউ কাউকে ছাড় দেবে না, অন্তত ভোট ঘিরে অতীত রাজনীতি সেটিই বলে। সেক্ষেত্রে দলপ্রতি যদি তিনটি করে দিলেও বিএনপির শতাধিক আসনে ছাড় দিতে হবে। আর ঐক্যফ্রন্টে তখনই আসন বণ্টন নিয়ে ঝামেলার শুরু হবে।
এর বাইরে বিএনপির অভ্যন্তরেও কোন্দল আর বিদ্রোহ মারাত্মক আকার ধারণ করবে। সেক্ষেত্রে শেষ পর্যন্ত খালেদা জিয়া কারাবন্দি থাকলে বর্তমান নেতৃত্বের পক্ষে এই কোন্দল সামাল দেয়া সম্ভব হবে না।
যদিও বিএনপি নেতাদের একটি অংশ বলছেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হয়েছে গণতান্ত্রিক ও ভোটের অধিকার রক্ষায়। জোটের কোনো বৈঠক হয়নি। অনানুষ্ঠানিকভাবেও আসন বণ্টন নিয়ে কারো সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়নি। চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ছাড়া নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়েই বিএনপি এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্তে আসেনি। সেখানে আসন ভাগাভাগির প্রশ্ন অবান্তর বলেও জানান তারা।
তবে বিএনপি নেতাদের অন্য অংশের ভাষ্য, যে যেভাবেই ব্যাখ্যা করি না কেন, জোট গঠনের মূল লক্ষ্য নির্বাচন। সুতরাং একটা সময়ে সংসদীয় আসনই আলোচনায় প্রাধান্য পাবে। তাই এখনই এই ইস্যুতে সমঝোতা না হলে জটিলতা তৈরি হবে।
তবে সূত্রের দাবি, দীর্ঘ ১০ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি এবার ‘বড় ছাড়’ দেয়ার লক্ষ্য নিয়েই মাঠে নেমেছে। নির্দিষ্ট লক্ষ্য পূরণে তারা সবকিছুই করবে।
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘সবেমাত্র জোট হলো। যেসব দাবিতে আমরা ঐক্যমত্যে পৌঁছেছি, তা জাতির সামনে প্রকাশ করা হয়েছে। এর বাইরে জোটের দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি নিয়ে আমাদের কোনো আলোচনা হয়নি।’
তিনি আরো বলেন, ‘আসন ভাগাভাগি নিয়ে কোনো জটিলতা হবে বলে মনে করছি না। কারণ, জোটের প্রত্যেকটা দলই রাজনীতিতে নিজেদের অবস্থান সম্পর্কে অবগত। আসন নিলেই তো হবে না, সেটিতে বিজয়ের সম্ভাবনাও মাথায় রাখতে হবে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ঘোষণার পর আমরা এখন পর্যন্ত কোনো বৈঠকে বসিনি। বৈঠক হলে সব বিষয়ই পর্যায়ক্রমে আসবে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ছাড়া নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রশ্নেই আমরা কোনো সিদ্ধান্ত নেইনি। সুতরাং এখনই জোটের শরিকদের মধ্যে আসন ভাগাভাগির প্রসঙ্গ আসা অবান্তর।’
দলের স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘জোট হয়েছে, এখানে আসন ভাগাভাগির ইস্যু থাকবেই। অনেকের মধ্যেই একটা দ্বিধা-দ্বন্দ্ব কাজ করছে। আশা করছি, জোটের বৈঠক শুরু হলে আলোচনার মাধ্যমে সব ঠিক হয়ে যাবে।’
এ বিষয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক জেএসডির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক রতন পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘জোট গঠনের পর এখনো কোনো বৈঠক হয়নি। ফলে আসন ভাগাভাগি নিয়ে আলোচনার প্রশ্নই আসে না।’
তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার রক্ষার প্রশ্নে আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছি। আশা করি, ভবিষ্যতে জাতি এর সুফল দেখতে পাবে।’
বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘আসন ভাগাভাগি নিয়ে কোনো ফয়সালা হয়নি। ভবিষ্যতে প্রসঙ্গটি এলে আলোচনা করে ফায়সালা করা হবে।’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন