মিছবাহুর রহমান চৌধুরী। বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোট একাংশের চেয়ারম্যান। রাজনীতির পাশাপশি তিনি ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বোর্ড অব গভর্নরস-এর সদস্য। রয়েছেন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের মহাজোটেও। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সময় জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন। গত ১৫ সেপ্টেম্বর তার নেতৃত্বে গঠিত হয় ইসলামিক ডেমোক্রেটিক এলায়েন্স (আইডিএ)।
সম্প্রতি ইসলামিক ডেমোক্রেটিক এলায়েন্স (আইডিএ) এর নানা বিষয় নিয়ে ব্রেকিংনিউজ.কম.বিডি-এর মুখোমুখি হন মিছবাহুর রহমান চৌধুরী। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন ব্রেকিংনিউজ.কম.বিডি-এর স্টাফ করেসপন্ডেন্ট রাহাত হুসাইন।
ব্রেকিংনিউজ: ইসলামিক ডেমোক্রেটিক এলায়েন্স কোন লক্ষ্য নিয়ে গঠিত হয়েছে?
মিছবাহুর রহমান চৌধুরী : ইসলামিক ডেমোক্রেটিক এলায়েন্স দর কষাকষি করে নির্বাচনের সিট ভাগাভাগির জোট নয়। বিনা শর্তে আওয়ামী লীগ সরকারকে পুনরায় ক্ষমতায় আনার জন্য কাজ করবে এই জোট। তবে ইসলামিক ডেমোক্রেটিক এলায়েন্স একটি সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য নিয়ে কাজ করবে। এই জোট ইসলামিক শক্তিকে সংঘবদ্ধ করে ইসলামের নামে ছদ্দবেশী অপশক্তির মোকাবেলায়ও কাজ করবে।
এই অ্যালায়েন্স আলেম-ওলামাদের মাঝে বিনা শর্তে নৌকার পক্ষে কাজ করার জন্য মাঠে থাকবে। আলেমদের বুঝাতে হবে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর, মসজিদভিত্তিক কোরআন শিক্ষা ও গণশিক্ষা কর্মসূচি গ্রহণ করে, ব্যাপকভাবে আলেমদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছে। আওয়ামী লীগ সরকার পুনরায় ক্ষমতায় আসতে পারলে আলেম সমাজের আরও কর্মসংস্থান বাড়বে। আওয়ামী লীগ সরকারই তো কওমি মাদরাসার স্বীকৃতি দিলো। নির্বাচনকে সামনে রেখে ১/১১ এর গন্ধ পাচ্ছি। ১/১১ এর মত ঘটনা এ দেশে আর যাতে না ঘটে এজন্য দেশবাসীকে আরও সংগঠিত করার লক্ষ নিয়ে কাজ করছি।
ব্রেকিংনিউজ: কোন প্রক্রিয়ায় আপনারা এ অ্যালায়েন্স গঠন করেছেন?
মিছবাহুর রহমান চৌধুরী : ১৫ টি দল নিয়ে আমাদের এই এলায়েন্স গঠিত হয়েছে। ১৫ টি দলের আদর্শের কথা আমরা শুনেছি। আমরা যে আদর্শের কথা তাদের বলেছি, তারা সমর্থন করে মেনে নিয়েছে। আমাদের অ্যালায়েন্সে যারা এসেছে তাদেরকে বলেছি আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় না এলে দেশ কসাইখানায় পরিণত হবে। আমরা এমন কিছু মেনে নিতে পারি না। যারা আমাদের এ কথাগুলো মেনেছে তারাই আমাদের সঙ্গে রয়েছে।
ব্রেকিংনিউজ: ইসলামিক ডেমোক্রেটিক এলায়েন্স মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও ইসলামী মূল্যবোধের সমন্বয়ে কী পন্থায় কাজ করবে?
মিছবাহুর রহমান চৌধুরী : যদিও আমরা ইসলামিক রাজনীতি করি, তবে আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বলেছি, আমরা মদিনার সনদে বিশ্বাস করি। মদিনার সনদ হচ্ছে পৃথিবীর প্রথম লিখিত অসাম্প্রদায়িক একটি কনস্টিটিউশন। মদিনার সনদের পূর্বে পৃথিবীর বুকে সব জাতি কোনো মিলে লিখিত চুক্তি হয়নি। আমরা মদিনার সনদের ভিত্তিতেই রাজনীতি করি। আমরা মনে করি ইসলামে কোনও সাম্প্রদায়িক ব্যবস্থাপনা নেই। সব জাতির উপকার ও কল্যাণের জন্যই ইসলাম আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছে। আমরা ইসলামের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হলো একটা অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র গঠন। যে রাষ্ট্রে থাকবে গণতন্ত্র, দেশ প্রেম অর্থাৎ জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র তবে কাল মার্কস ও লেলিনের যে সমাজতন্ত্র কথা বলেছেন আমরা সেই সমাজতন্ত্র মানি না। এখানে সমাজতন্ত্র বলতে বঙ্গবন্ধু বুঝিয়েছেন বৈষম্যহীন সমাজ ব্যবস্থা। ইসলামও বৈষম্যহীন সমাজব্যবস্থা চায়।
নামে সমাজতন্ত্র হলেও এতে কিছু যায়-আসে না। বঙ্গবন্ধু তার সমাজতন্ত্রের ব্যাখ্যা দিয়েছেন ‘আমি বৈষম্যহীন একটি সমাজ গড়তে চাই, যে সমাজে কেউ খাবে তো কেউ খাবে না তা হবে না। ইসলাম বলে আপনি পেট ভরে খাবেন আর আপনার প্রতিবেশী খেতে পাবে না তাহলে সে প্রকৃত মুসলমান নয়’। বঙ্গবন্ধুর এই সমাজতন্ত্রে আমরা আস্থা রাখি।
আর ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়। ধর্মনিরপেক্ষতার ব্যাখ্যা সংবিধান দিয়েছে। সংবিধানে বলা আছে সব জাতি নিরাপদে, নির্বিঘ্নে তার ধর্ম পালন করবে। ধর্মের ব্যাপারে কেউ কাউকে জবরদস্তি করতে পারবে না। এটা ইসলামও চায়। আমরা এই ব্যাখ্যা মানি। জাতীয়তাবাদের ক্ষেত্রে আমি এটা বলবো- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলতেন- “আমি আব্দুল মোতালেবের সন্তান, আমি কুরাইশের সন্তান, আমি আরবের সন্তান, আমি মুহাম্মদ রাসুলুল্লাহ”। ঠিক আমিও বলি- আমি বাঙালি, আমি মানুষ, আমি একজন মুসলমান। বাঙালি হচ্ছে আমার আদি পরিচয় আর মুসলমান হচ্ছে আমার বিশ্বাসের পরিচয়। আমি মনে করি সংবিধানের চারটি মূলনীতি এই ব্যাখ্যায় ইসলামের সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয়। কাজেই মুক্তিযুদ্ধ হচ্ছে আমরা চেতনা আর ইসলাম হচ্চে আমার প্রেরণা।
ব্রেকিংনিউজ: তরিকত ফেডারেশন সাবেক মহাসচিব সাংসদ এমএ আউয়াল এ জোটের কো-চেয়ারম্যান ও মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করছেন। তার দল তরিকত ফেডারেশন আপনাদের অ্যালায়েন্স আসবে কিনা?
মিছবাহুর রহমান চৌধুরী: তরিকত ফেডারেশনের সাবেক মহাসচিব এম এ আউয়াল আমাদের কাজের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন। আমাদের সাথে কাজ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তাই তিনি আমাদের সাথে কাজ করছেন। তরিকত ফেডারেশন আমাদের অ্যালায়েন্সে আসবে কিনা তা এখনো আমরা জানি না। তবে সামনে আমাদের অ্যালায়েন্সকে আরও বড় করার চিন্তা রয়েছে।
ব্রেকিংনিউজ: ইসলামিক ডেমোক্রেটিক এলায়েন্স এ তরিকত ফেডারেশন না আসলে এলায়েন্স এমএ আউয়ালের অস্থান কি হবে? তিনি তো একক ব্যক্তি কোনো দল নয়?
মিছবাহুর রহমান চৌধুরী : অনেক সময় ব্যক্তি ও একটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নেয়। উনি ইচ্ছে করলে আমাদের যে কোন একটি দলে যোগদান করতে পারবেন। আবার চাইলে তরিকত ফেডারেশনকে অ্যালায়েন্সে নিয়ে আসতে পারেন।
ব্রেকিংনিউজ: যে ১৫ দল মিলে ইসলামিক ডেমোক্রেটিক এলায়েন্স গঠিত হয়েছে রাজনৈতিক অঙ্গনে তাদের কিভাবে মূল্যায়ন করেন?
মিছবাহুর রহমান চৌধুরী : আমরা প্রত্যেক দলকে সমানভাবে মূল্যায়ন করি। বাকি মূল্যায়ন হবে মাঠে কাজের মাধ্যমে।
ব্রেকিংনিউজ: আগামী নির্বাচনে আপনাদের প্রস্তুতি কেমন? জোটের সাংগঠনিক অবস্থা নিয়ে কিছু বলুন?
মিছবাহুর রহমান চৌধুরী : আমাদের পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি রয়েছে। অ্যালায়েন্সের মহাসমাবেশের পর আমরা সারা দেশের জেলা-উপজেলায় চলে যাবো।
ব্রেকিংনিউজ : আওয়ামী লীগ ও বিএনপির রাজনীতিতে ইসলামিক দলগুলোর প্রভাব কতটুকু?
মিছবাহুর রহমান চৌধুরী : সারা বিশ্বে এখন ধর্মহীন রাজনীতি অচল হয়ে গেছে। ধর্মের প্রভাব ছাড়া পশ্চিমের আমেরিকা থেকে পূর্বের চীন পর্যন্ত আর কোনও ব্যবস্থাপানা নেই। সংখ্যাগরিষ্ট মুসলিমদের দেশে অবশ্যই ধর্মীয় নেতৃত্বের প্রভাব থাকবে। তবে আমি ধর্মভিত্তিক রাজনীতির কথা বলছি না।
ব্রেকিংনিউজ : সময় দেয়ার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।
মিছবাহুর রহমান চৌধুরী : আপনাকে ও ব্রেকিংনিউজ.কম.বিডি পরিবারকেও ধন্যবাদ।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন