রাবিতে ভর্তি ৩ লাখ টাকায় ভর্তি করে দেয়া যাবে বলে ছাত্রলীগের এক নেতা ভর্তিইচ্ছু এক শিক্ষার্থীর কাছে দাবি করেছেন। পরে দরকষির পরে আড়াই লাখ টাকায় ভর্তি করে দেযা যাবে বলে দাবি করেন ছাত্রলীগের সেই নেতা।
বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে প্রথমবর্ষ স্নাতক (সম্মান) ভর্তি পরীক্ষার বাকি আর মাত্র আট দিন। অন্য বছরের মতো ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যেই সক্রিয় হয়ে ওঠেছে জালিয়াতচক্র। আর এরই মধ্যে ভর্তি জালিয়াতিচক্রে ছাত্রলীগ নেতার সম্পৃক্ততার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ছাত্রলীগ নেতার সম্পৃক্ততার বিষয়ে ৯ মিনিট ৫৫ সেকেন্ডের একটি ফোনালাপ পাওয়া গেছে। অভিযুক্ত ওই ছাত্রলীগ নেতা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের ত্রাণ ও দুর্যোগবিষয়ক সম্পাদক তারেক আহমেদ খান শান্ত। ফোনালাপটির কিছু অংশ তুলে ধরা হলো
ভর্তি ইচ্ছুক: ‘ভাইয়া আমি সেকেন্ড টাইম পরীক্ষা দিচ্ছি। যেকোনো মূল্যে পাবলিক ভার্সিটিতে ভর্তি হতে হবে। বাসা থেকে চাপ দিচ্ছে। কত লাখ টাকা লাগতে পারে?’
ছাত্রলীগ নেতা শান্ত : ‘তুমি কোন ইউনিটে ফরম তুলছো? সায়েন্স হলে একটু কঠিন, আর্টসে সহজে করে দেয়া যাবে। এ জন্য ৩ লাখ টাকা লাগবে।’
ভর্তি ইচ্ছুক : ‘একটু কনসিডার করেন ভাইয়া।’
ছাত্রলীগ নেতা শান্ত: ‘ভাই, আমাদের সিস্টেম হচ্ছে প্রক্সি। এখানে ঢাকা থেকে এক্সপার্ট এসে পরীক্ষা দিয়ে যায়। তাদেরকে দিতে হয় দেড় থেকে দুই লাখ টাকা। একটি সিন্ডিকেট আছে তাদেরও টাকা দিতে হয়। তারপর আমাদের জন্য খুব একটা বেশি লাভ থাকে না। ঠিক আছে তুমি যেহেতু বলছো তোমার জন্য আড়াই লাখ করে দিতে পারবো। এর কম হবে না।’
এর পরেও ভর্তি সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে দু’জনের মধ্যে ফোনালাপ হয়েছে। দু’জনের মধ্যে মোট ৯ মিনিট ৫৫ সেকেন্ড কথা হয় এবং ওই ভর্তি ইচ্ছুক শিক্ষার্থীকে রাবি ক্যাম্পাসে ডাকেন ওই ছাত্রলীগ নেতা।
ফোন রের্কডিংয়ের বিষয়টি স্বীকার করে রাবি ছাত্রলীগ নেতা তারেক আহমেদ খান শান্ত বলেন, ‘আমার কাছে একটা ফোনই এসেছিল। এরপর থেকে ওই ফোন নম্বর বন্ধ। পূর্বশত্রুতার জের ধরে রাবি ছাত্রলীগের সহসম্পাদক হাসিবুল হাসান শান্ত ও উপপ্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক কাউসার আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে বলে মনে হচ্ছে।’ তবে এ বিষয়ে কথা বলার জন্য হাসিবুল হাসান ও কাউসারের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের পাওয়া যায়নি।
এর আগেও রাবি ছাত্রলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে জালিয়াতির সাথে সম্পৃক্ততার অভিযোগ ছিল। গত বছর ১৮ জুলাই পরীক্ষায় প্রক্সি দিতে গিয়ে রাজশাহীর মোহনপুর ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্র থেকে বান্ধবীসহ গ্রেফতার হন রাবি ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির যুগ্ম সম্পাদক সাব্বির হোসেন।
গত ১৭ ডিসেম্বর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির ঘটনায় রাবি ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক মেহেদি হাসান সজল ও ছাত্রলীগকর্মী মোস্তফা বিন ইসমাইলকে আটক করে পুলিশ।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, ‘আমাদের কোনো নেতাকর্মী এসব কাজের সাথে জড়িত কি না আমার জানা নেই। ছাত্রলীগের নাম ভাঙিয়ে কোনো নেতাকর্মীর এসব কাজের সাথে সম্পৃক্ততা পেলে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেবো।’
এ দিকে জালিয়াতি ঠেকাতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সজাগ আছে বলে জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমান বলেন, ‘গত বছরের মতো এবারও ভর্তি পরীক্ষায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হবে। যেকোনো ধরনের জালিয়াতি ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সদা তৎপর থাকবে। এ বিষয়ে মিটিং আছে। সেখানে এ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হবে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন