আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগে একঝাঁক তরুণ-তরুণী মনোনয়ন পাবেন বলে দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায় সূত্রে জানা গেছে। সংসদ নির্বাচনে নবীন-প্রবীণের সমন্বয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের মনোনয়ন তালিকা চূড়ান্ত করা হচ্ছে। শরিকদের সাথে আসন ভাগাভাগির পর দলীয় প্রার্থীদের তালিকা চূড়ান্ত রূপ নেবে।
জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরেই চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হতে পারে। বর্তমান এমপিদের মধ্যে যারা বাদ পড়বেন ওই আসনে তরুণ প্রার্থীদের মূল্যায়ন করার কথা ভাবছে দলটি। এতে ৭০ থেকে ৮০ জন তরুণ প্রার্থী আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের টিকিট নিয়ে নির্বাচন করার সুযোগ পেতে পারেন বলে দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায় সূত্রে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর থেকে ছয় মাস পরপর জরিপ নিয়েছে আওয়ামী লীগ প্রধান। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা, দলীয় জরিপ, গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর এবং ব্যক্তিগত সোর্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী কয়েক দফা তথ্য সংগ্রহ করে একাধিক তালিকা তৈরি করেছেন। এর মাধ্যমে কোন আসনে কতজন প্রার্থী আছেন, নতুন কতজন প্রার্থী, কোন আসনে কোন প্রার্থীর অবস্থান কেমন এসব বিষয়ে তীক্ষ্ম নজর রয়েছে দলীয় প্রধানের।
এ ছাড়াও বর্তমান এমপিদের মধ্যে তৃণমূলে কার অবস্থান পোক্ত, কার অবস্থান নড়বড়ে এ বিষয়ে তার সুস্পষ্ট ধারণা রয়েছে। সূত্র জানায়, সব জরিপের ভিত্তিতে প্রাথমিকভাবে ৩০০ আসনে কতজন প্রার্থী আছেন তার একটি প্রাথমিক তালিকা তৈরি করা হয়েছে। আসনগুলোতে দলীয় অবস্থান কার কেমন এবং জোটের শরিক প্রার্থীদের কার অবস্থান কেমন এসব গুরুত্ব পেয়েছে।
দ্বিতীয়পর্যায়ে ৩০০ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের মধ্যে কোন কোন প্রার্থীর অবস্থান ভালো এবং কারা বিতর্কিত সেসব বিবেচনায় পৃথক তালিকা তৈরি করা হয়েছে। তৃতীয়পর্যায়ে বিতর্কিত এমপিদের বাদ দিয়ে বর্তমান এমপিদের মধ্যে স্থানীয়পর্যায়ে যাদের অবস্থান ভালো এবং মনোনয়ন দিলে জয়ী হতে পারবেন এমন এমপিদের একটি তালিকা করা হয়েছে। বিতর্কিত আসনগুলো নিয়েও আওয়ামী লীগ প্রধানের আলাদা জরিপ রয়েছে। ওই আসনগুলোতে তরুণ প্রার্থীদের মধ্যে কার অবস্থান ভালো ও এলাকায় জনপ্রিয়, আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন দিলে যাদের উঠে আসার সম্ভাবনা শতভাগ রয়েছে ওই সব তরুণ প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়ার বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব রয়েছে দলটির হাইকমান্ডের। এতে আগামী নির্বাচনে ৭০ থেকে ৮০টি আসনে তরুণ ও নতুন প্রার্থী উঠে আসবেন শীর্ষপর্যায় থেকে এমনটি আভাস পাওয়া গেছে।
আওয়ামী লীগের শীর্ষপর্যায়ের এক নেতা জানান, বর্তমান এমপিদের মধ্যে ৭০ থেকে ৮০ জনের নামে গুরুতর অভিযোগ আছে। দলীয় নেতাকর্মীদের কোণঠাসা করে বিএনপি-জামায়াতকে মদদ দেয়া, বড় বড় দুর্নীতি ও ঘুষ কেলেঙ্কারির সাথে জড়িত, স্থানীয় নির্বাচনে আর্থিক লেনদেন ও টিআর কাবিখা, সেতু, কালভার্ট ও রাস্তা নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লাখ লাখ টাকা নিয়ে নিয়োগ বাণিজ্যসহ সরকারের ভাবমর্যাদা ক্ষুণ্ন হয় এমন বেশ কয়েকটি অভিযোগ আমলে নেয়া হয়েছে।
এ ছাড়া তৃণমূল নেতাদের কাছ থেকে আসা লিখিত চিঠি ও গণভবনে অনুষ্ঠিত বর্ধিত সভা ও অভ্যন্তরীণ বৈঠকের মাধ্যমে তৃণমূল নেতাদের অভিযোগগুলো আমলে নিয়েও প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করা হচ্ছে। যেসব এমপির বিরুদ্ধে স্থানীয় নেতাকর্মীদের গুরুতর অভিযোগ আছে এবং যাদের কারণে সরকারের ভাবমর্যাদা ক্ষুণ্ন হয়েছে ওই সব এমপিকে আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন না দেয়ার ব্যাপারে দলীয় প্রধানের সতর্ক বার্তা রয়েছে। প্রতি ছয় মাস অন্তর প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় জরিপ করছেন জানিয়ে আওয়ামী লীগ প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি দলীয় এমপিদের নিয়ে এক বৈঠকে বলেছেন, মন্ত্রী-এমপিদের নির্বাচনী এলাকায় কার কী অবস্থান তার আমলনামা আমার কাছে আছে। জনপ্রিয়তার ব্যারোমিটারে যারা এগিয়ে রয়েছেন তারাই মনোনয়ন পাবেন। কারো মুখ দেখে আমি মনোনয়ন দেবো না। তিনি বলেন, যারা এলাকায় নিজেদের অবস্থান বা গ্রহণযোগ্যতা রক্ষা করতে পারেননি, তারা যত বড়ই নেতা হোন না কেন আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন পাবেন না।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, এখনো জোটের সাথে নির্বাচনে প্রার্থিতার বিষয়ে কোনো আলাপ-আলোচনা হয়নি আওয়মিী লীগের। তা ছাড়া আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে বিএনপির অবস্থান এখনো পরিষ্কার নয়। জাতীয় ঐক্যের অবস্থানও স্পষ্ট হয়নি। জাতীয় ঐক্যের নেতারা কি এককভাবে নির্বাচনে অংশ নেবেন, নাকি বিএনপির সাথে যুক্ত হয়ে অংশ নেবেন এটা স্পষ্ট হওয়ার পরই চূড়ান্ত মনোনয়নের কাজ শুরু হবে। ফলে আপাতত সারা দেশে আগামী নির্বাচনে যেকোনো পরিস্থতিতে জিতে আসার মতো সক্ষমতা রাখেন, বেছে বেছে কেবল এমন প্রার্থীদের গ্রিন সিগন্যাল দেয়া হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলী ও মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য লে. কর্নেল (অব:) মুহাম্মদ ফারুক খান নয়া দিগন্তকে বলেন, আওয়ামী লীগের মনোনয়ন তালিকা তিনটি ধাপ অতিক্রম করার পরে চূড়ান্ত হয়। প্রথমে জরিপের মাধ্যমে প্রার্থীদের তালিকা সংগ্রহ করা হয়। দ্বিতীয় ধাপে তৃণমূল থেকে পরামর্শ নেয়া হয়। তৃতীয়পর্যায়ে এই দুইটি পর্যায় সমন্বয় করে মনোনয়ন বোর্ডে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়। তিনি জানান, ইতোমধ্যে জরিপের কাজ হয়ে গেছে। তৃণমূল থেকে নাম আসবে। এরপর মনোনয়ন বোর্ড বসে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। তিনি বলেন, প্রতিটি জরিপে কারা কারা প্রার্থী তা উঠে এসেছে। যেসব প্রার্থী সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে অংশ নিয়েছেন ও উন্নয়ন তুলে ধরছেন, এলাকায় যাদের জনপ্রিয়তা আছে এবং তৃণমূল নেতাকর্মীদের সাথে যাদের সুসম্পর্ক আছে তারা মনোনয়ন পাবেন এটাই স্বাভাবিক।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন