হেফাজত আমীর আল্লামা আহমদ শফি এবং তার ছেলে আনাস মাদানী’র দলীয় ক্ষমতার অপব্যবহারের কারণে দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দের মধ্যে দূরত্ব এবং ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। হেফাজতের ফান্ডের টাকা অপব্যবহারসহ বিভ্ন্নি কারণে ক্ষোভ বাড়ছে ধর্মীয় মূল্যবোধে গঠিত হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের মধ্যেও।
এছাড়া হেফাজত আমীর আল্লামা আহমদ শফির ছেলে আনাস মাদানী কর্তৃক হেফাজতের সিনিয়র নেতৃবৃন্দকে অবমূল্যায়ন, হেফাজতের ক্ষমতা কুক্ষিগত করা এবং কাওমী মাদ্রাসাকে সরকারি স্বীকৃতিকে কেন্দ্র করে হেফাজত নেতৃবৃন্দেও সাথে পরামর্শ না করে প্রধানমন্ত্রী সংবর্ধনা দেয়ার সিদ্ধান্তও সংগঠনটিতে ভাঙন দেখা দেয়ার অন্যতম কারণ।
কাওমী মাদ্রাসার সরকারি স্বীকৃতি বা সনদকে ঘিরে হেফাজতে ইসলামের মধ্যে বর্তমানে যে সংকট তৈরি হয়েছে তা নিয়ে মুখোমুখি হয়েছেন হেফাজতে ইসলামের প্রতিষ্ঠাতা নায়েবে আমীর ও নেজামে ইসলামী পার্টির আমীর মুফতি ইজহারুল ইসলাম।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাথে কিছু হেফাজত নেতার সম্পর্কের কারণে ইতোমধ্যে হেফাজত ইসলাম থেকে পদত্যাগ করেছেন সিনিয়র ধর্মীয় নেতা মাওলানা মহিবুল্লাহ বাবুনগরী। বাবুনগরীর পদত্যাগতে স্বাগত জানিয়ে বিবৃতি নিয়েছেন হেফাজতে ইসলামের প্রতিষ্ঠাতা নায়েবে আমীর মুফতি ইজহার সহ প্রায় ৫শ’ আলেম।
ব্রেকিংনিউজের সাথে আলাপকালে মুফতি ইজহারুল ইসলাম হেফাজতে ইসলামের বর্তমান সংকটের কারণ, এই সংকট থেকে উত্তরণের উপায়, শাপলা চত্বরে ঘোষিত কর্মসূচিতে দলীয় সমন্বয়হীনতাসহ বিভিন্ন দিক তুলে ধরেছেন।
হেফাজতে ইসলামের মধ্যে বর্তমান সংকট দেখা যাচ্ছে এর মূল কারণ কি এমন প্রশ্নের জবাবে মুফতি ইজহার বলেন, যখন কোনো কিছুর মাত্রাতিরিক্ত হয় তখনই তা নিয়ে বিভিন্ন জনের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি। কোনো কিছু পেলে শুকরিয়া আদায় করতে হয়। কিন্তু সেই শুকরিয়া যদি কখনো অতি শুকরিয়ার পরিণত হয় তখই বিপত্তি দেখা দেয়। স্বীকৃতির জন্য প্রধানমন্ত্রীকে সংবর্ধনা দেয়া এটা ‘অতিমাত্রায়’ শুকরিয়া আদায় মন্তব্য করে প্রবীণ এ নেতা বলেন, এ বিষয়টি সাধারণ বিবেকবান মানুষের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ।
তিনি বলেন, কাওমী স্বীকৃতি এটা আমাদের প্রাপ্য। তার জন্য আমরা প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানাতে পারি, অভিনন্দন পর্যন্ত ঠিক ছিল। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যাকে নিয়ে এতো বির্তক, যে দল ও দলের প্রধানের বিরুদ্ধে হাজারো বির্তক রয়েছে, যারা দেশের সংবিধান থেকে ইসলামকে বাদ দিয়েছে সে ব্যক্তিকে আপনারা আনুষ্ঠানিকভাবে সংবর্ধনা দিবেন এটাতো ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা মানতে পারে না।
তিনি বলেন, কওমী মাদ্রাসার স্বীকৃতি এটা আমাদের অধিকার। আমি অধিকার আদায় করলাম তার মানে এই নয় যে, আমরা কারো কাছে বিক্রি হয়ে গেলাম। কওমী মাদ্রাসার স্বীকৃতির বিষয়টি চারদলীয় জোট আমলেই চূড়ান্ত হয়েছিল। কিন্তু তখন সময় না পাওয়ায় ঘোষাণা দিতে পারেনি তৎকালীন বিএনপি সরকার। এই স্বীকৃতির জন্য কাজ করেছি আমি ও মরহুম সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী।
বর্তমানে হেফাজতকে নিয়ে কেন বিতর্কিত কথা উঠছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ বিষয়ে পরিস্কার কথা ভাল। কেন এই বিতর্ক উঠে আসলো মাওলানা মহিবুল্লাহ বাবু নগরীর মতো একজন সিনিয়র আলেমেদ্বীন কেন এমন একটি দল (হেফাজতে ইসলাম) থেকে পদত্যাগ করলো এর কারণ হলো মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে সংবর্ধনা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে।
স্বীকৃতির জন্য অভিনন্দন দিলেন সেটা ঠিক আছে কিন্তু আপনি (হেফাজতের আমীর) মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে সংবর্ধনা দিবেন যাকে নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে। যিনি সংবিধান থেকে আল্লাহর উপর পূর্ন আস্থা ও বিশ্বাস তুলে দিয়েছেন। যিনি নাস্তিক ব্লগারদের পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন। যার নির্দেশ শাপলা চত্বরে রাতের অন্ধকারে অসংখ্য আলেমের উপর নির্যাতন করা হয়েছে। আমাদের দুইশ’র অধিক ভাইকে শহীদ করা হয়েছে। আপনারা তাকে সংবর্ধনা দিবেন এটা ধর্মপ্রাণ মুসলমান তৌহিদী জনতা মানতে পারেনা। যে দল ও দলের প্রধান নিয়ে হাজারো বিতর্ক আছে। যারা আপনার এই ‘মাত্রাতিরিক্ত শুকরিয়া’র কারণে এখন মানুষ মনে করবে এখানে কোন টাকা পয়সার লেনদেন আছে।
৫ই মে শাপলা চত্বরে ট্রাজেডিতে হেফাজত আমীর আল্লামা শফির সিদ্ধান্তহীনতার কারণেই বড় ধরণের ক্ষতি হয়েছে জানিয়ে নেজামে ইসলাম পার্টির এই নেতা বলেন, দলমত নির্বিশেষে সবাই হেফাজতের আন্দোলনে ছিল। ব্লগাররা যখন আমাদের প্রিয় নবী ও তার স্ত্রীদের নিয়ে কটুক্তি করেছিল। রাসূলের শানে বেয়াদবি করেছিল তখই এর প্রতিবাদ জানাতে লক্ষ লক্ষ মানুষ রাস্তায় নেমেছে।
আল্লামা শফি সাহেব আমাদের মুরুব্বী হওয়াতে আমরা তাকে সামনে রেখেছি। আমরা শাপলা চত্বরে সঠিক সিদ্ধান্ত দিতে আমরা ব্যর্থ হয়েছি। আমরা সেই দিন পাশলা চত্বর থেকে জাতিকে কোন দিকনির্দেশনা দিতে পারিনি। সেখানে সমন্বয়ের অভাব ছিল। সেই দিন শফি সাহেব জাতিকে এক বিশাল সমুদ্রে ফেলে দিয়ে নিজের ছেলেকে নিয়ে চট্টগ্রাম চলে আসলেন। তার মাদ্রাসার শিক্ষক ও হেফাজত নেতা জুনাইদ বাবু নগরীকে রেখে তিনি চলে আসলেন। পুলিশের যতই ক্ষমতা থাকুক সেই দিন শফি সাহেব যদি বলতেন আমি আমার শিক্ষক ও ছাত্রদের না নিয়ে যাব না তাহলে পুলিশ আমাদের দাবি মানতে বাধ্য হতো।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন