বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় গতকাল যে সাজা দেয়া হয়েছে তা ‘স্টেট স্পনসর্ড জাজমেন্ট’ (রাষ্ট্র-
প্রযোজিত রায়) বলে মন্তব্য করেছেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেছেন, ‘বিএনপিকে পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করার জন্যই সরকারের বিশেষ ব্যক্তির মনোবাঞ্ছা পূরণে এই রায়। এই রায় উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এজন্য যে, একতরফা নির্বাচন করার জন্য এই রায় একটি কারাসাজি। ২১ আগস্ট বোমা হামলা মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ ও উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের ফাঁসানোর জন্য রাষ্ট্রযন্ত্রকে কি নির্মমভাবে ব্যবহার করা হয়েছিল, সে সম্পর্কে আপনাদেরকে ইতোপূর্বে অবহিত করেছি। হাত-পায়ের নখ তুলে নিয়ে অকথ্য শারীরিক নির্যাতনের মাধ্যমে সম্পূরক জবানবন্দি নেয়া হয়েছিল। মুফতি হান্নান দাবি করে বলেন, ব্যাপক নির্যাতন করে সিআইডির লিখিত কাগজে তার সই আদায় করা হয়েছে।’
বৃহস্পতিবার (১১ অক্টোবর) নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, ‘বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোকে নিশ্চিহ্ন করার জন্যই কারো ইচ্ছা পূরণে গতকাল এই রায় দেয়া হয়েছে। কিন্তু জনগণ এই রায় প্রত্যাখান করেছে। এই রায়ের প্রতিবাদে তাৎক্ষণিভাবে সারাদেশে বিক্ষোভ করেছে বিএনপিসহ সাধারণ জনগণও। প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহাকে বন্দুকের জোরে তাড়িয়ে দেয়া এবং সঠিক বিচার করতে গিয়ে জেলা জজ মোতাহার হোসেনকে দেশ ছাড়তে হয়েছে। সুতরাং গতকাল নিম্ম আদালত যদি সঠিক রায় দিতো তাহলে তাকেও দুর্ভাগ্য বরণ করতে হতো।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘লক্ষীপুরে অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলামকে প্রকাশ্যে খুন করে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা রাষ্ট্রপতির ক্ষমা নিয়ে বহাল তবিয়তে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তথ্যমতে এ পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন কারাগার থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে বিশেষ ক্ষমতায় অন্যান্যদের মধ্যে প্রায় ৬ হাজারের মতো ভয়ঙ্কর আসামিদেরকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। সুতরাং সরকার এবং সরকার নিয়ন্ত্রিত বিচার প্রক্রিয়া দুষ্টকে পালন করারই দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। সুতরাং যতদিন এই ভোটারবিহীন সরকার ক্ষমতায় থাকবে ততদিন কেউ ন্যায়বিচার পাবে না বলেই জনগণ মনে করে।’
রায়কে কেন্দ্র করে সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাণ্ডব চালিয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘গতকাল কেরাণীগঞ্জ, জিঞ্জিরা, আবদুল্লাহপুর, শুভাড্যাতে আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনের নেতারা বিএনপি নেতাকর্মীদের দোকানপাট, বাড়িঘরে ব্যাপক হামলা চালায়। হামলা চালিয়ে উল্টো বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা দায়ের করে। কেরাণীগঞ্জ (দক্ষিণে) এখন ভয় ও আতঙ্ক বিরাজ করছে। মতিঝিল থানা বিএনপি নেতা হাসিবুর রহমান মান্নুকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। পল্টন থানার ১৩ নং ওয়ার্ড বিএনপি নেতা মাখি আলম এবং মো. মনাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
তিনি আরও বলেন, ‘সরকারি কবি নজরুল কলেজ ছাত্রদল নেতা খন্দকার ইরফান আহমেদ ফাহিমকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। নেত্রকোণা জেলা যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি ওয়ারেশ উদ্দিন কারাস, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক খালিদ সাইফুল্লাহ মুন্নাসহ ১০ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মাদারীপুর জেলা জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন এবং সৈয়দপুর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা আবু সরকার, মো. বাবলু, মো. জাবেদ এবং মো. শাকিলকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।’
বরিশাল মহানগর যুবদল সভাপতি অ্যাডভোকেট আক্তারুজ্জামান শামীম, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাসুদ হাসান মামুন, যুবদল নেতা তারেক, চট্টগ্রাম দক্ষিণ যুবদল সহ-সভাপতি সিরাজ ও মহিউদ্দিন, নারায়ণগঞ্জ বন্দর থানা যুবদলের সভাপতি আমির হোসেনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান বেগম সেলিমা রহমান, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, সহ-দফতর সম্পাদক মুনির হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন